অবৈধ ইটভাটার জন্য অবাধে কাটা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি

অনুসন্ধানী আইন-আদালত ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ প্রচ্ছদ হ্যালোআড্ডা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: আইন লঙ্ঘন করে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় কৃষিজমির মাটি দিয়ে ইট তৈরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে মাটি কেটে নেওয়ায় ফসলি জমির উর্বরাশক্তি কমে গিয়ে উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ।

উপজেলায় ২০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ ইটভাটা তবকপুর, থেতরাই, দুর্গাপুর, ধামশ্রেণী ও পৌরসভায় রয়েছে। এসব ভাটার চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বিচার আবাদি জমির উর্বর মাটি কাটা হচ্ছে। এক যুগ ধরে বাধাহীনভাবে মাটি কাটার কাজ চলছে।

ইটভাটা বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে ইটের চাহিদাও। ফলে ভাটার মালিকরা হয়েছেন বেপরোয়া। অভাবী কৃষকদের ফাঁদে ফেলে কেটে নেওয়া হচ্ছে আবাদি জমির মাটি। অবাধে মাটি কাটার ফলে এসব ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ হেক্টর আবাদি জমি নিচু ও খালে পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, বাড়তি আয়ের আশায় অনেকে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করছেন। এতে বিপদে পড়ছেন আশপাশের জমির মালিকরা। গভীর করে মাটি কাটার ফলে পাশের জমি উঁচু হয়ে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। তখন বাধ্য হয়ে ওই জমির মালিকও মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হন।

মাটি বিক্রি করছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়তি আয়ের আশায় তারা আবাদি জমির মাটি বিক্রি করছেন। দুই ফুট গভীর করে এক বিঘা জমির মাটি বিক্রি করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পাওয়া যায়।

নেফরা গ্রামের বেলাল হোসেন বলেন, আমার ক্ষেতের চারপাশের জমি থেকে গভীর করে মাটি কেটে বিক্রি করা হয়েছে। এতে আমার জমি উঁচু হয়ে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এরপর বাধ্য হয়ে ইটভাটায় জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছি।

মাটি বিক্রির সঙ্গে জড়িত ফারুক হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম। মাটি বিক্রি করলে জমির কোনো ক্ষতি হয় কিনা– তা তারা জানেন না বলে দাবি করেন।

সচেতন মহলের ভাষ্য, এভাবে জমির মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে এক সময় ওই ইউনিয়নগুলোতে কৃষিজমি থাকবে না, সব খালে পরিণত হবে। কমে যাবে আবাদি জমির পরিমাণ। কৃষকরা সচেতন নন বলে নিজেরাই নিজেদের এমন ক্ষতি করছেন।

হাবিবুর রহমান দীপনের চারটি ছোট ও বড় চারটি ট্রাক্টর রয়েছে। জমির মালিকের কাছ থেকে প্রতি গাড়ি মাটি ২৫০ টাকায় কিনে ৭০০ টাকায় বিক্রি করেন। মাটি কাটা মজুরদের ১৬ গাড়ি মাটির জন্য জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দিতে হয়। এতে তাঁর খরচ বাদে দিনে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা আয় হয়। এভাবে আবাদি জমির মাটি কাটা অপরাধ কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জমির মালিক বিক্রি করে, আমরা তো জোর করে নিই না।

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা সরাসরি মাটি আনি না। ট্রাক্টর মালিকরা মাটি ভাটায় দেয়। কোন জায়গা থেকে মাটি আনা হয় তারাই বলতে পারবে।

পরিবেশকর্মী ও রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, কৃষিজমির ওপরিভাগ উর্বর। এটি কেটে ফেলায় খাদ্য ঘাটতির শঙ্কার পাশাপাশি প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা ব্যবস্থা নেয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, ফসলি জমির ওপরিভাগ উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এ মাটি সরিয়ে ফেললে নিশ্চিত উৎপাদন কমে যাবে। এরই মধ্যে ফসলে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, অভিযোগ পেয়ে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানিয়েছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী মাহমুদুর রহমান বলেন, বেশকিছু অভিযোগ পেয়েছি। ভোটের ব্যস্ততার কারণে ব্যবস্থা নিতে পারিনি। ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে।

আরো পড়ুন : মাইকেল জ্যাকসনের বায়োপিকে নায়ক হচ্ছেন ভাতিজা জাফার জ্যাকসন

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *