লাহোর বিমানবন্দরে অন্যরকম দৃশ্য। গোলাপ ফুলের পাপড়ি বৃষ্টিতে স্নাত হয়ে নওয়াজ শরীফ দেশের মাটিতে সিক্ত হলেন। বিমান মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। বিমান থেকে নামতে নামতে তার চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। নিচে অবস্থান করছিলেন ছোট ভাই শেহবাজ শরীফ। নওয়াজকে তিনি মাল্যদানের মধ্যদিয়ে অভিবাদন জানাতে জানাতে চোখ মোছেন। মিনারে পাকিস্তানে আপ্লুত মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ। তিনি নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখার চেষ্টা করছিলেন। বার বার তার গণ্ড বেয়ে অশ্রু ঝরতে দেখা যায়। শনিবার দলীয় নেতাকর্মীদের ঢল নামে মিনারে পাকিস্তানে।
তাদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের মধ্যে ৪ বছর পর দেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। এর আগে শনিবার বিকালে দেশে ফিরেই আপ্লুত হয়ে পড়েন নওয়াজ শরীফ। ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে বিমান থেকে বেরিয়ে দু’চোখ ভরে দেখেন প্রিয় স্বদেশকে। চারদিকে তাকিয়ে দেখেন সেই চিরচেনা মায়ের মতো দেশকে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রধান নওয়াজ শরীফ। দুবাই থেকে চার্টার্ড বিমানে করে প্রথমে রাজধানী ইসলামাবাদে অবতরণ করেন। বিমান থেকে বেরিয়ে ভিআইপি লাউঞ্জে অবস্থান নেন। সেখানে তিনি আইনগত কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন। বায়োমেট্রিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। এ সময় তার আইনজীবী টিমের মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী সিনেটর আজম তারার ও দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আজম তারার নিশ্চিত করেন আদালত থেকে স্টাফরা বিমানবন্দরে পৌঁছেন। তারপর তার আইনগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। দুবাই থেকে বিমানে উঠার আগে নওয়াজ শরীফ বলেন, তিনি দেশে ফিরতে পেরে সন্তুষ্ট। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও হতাশ। যে দেশকে তিনি অগ্রবর্তী করেছিলেন, তা এখন অর্থনৈতিকভাবে পেছনের দিকে গিয়েছে। তবু আশা আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন যখন সিদ্ধান্ত নেবে তখনই নির্বাচন হবে। বলেন, তারাই যোগ্য কর্তৃত্ব এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কমিশন। স্থানীয় সময় শনিবার বিকাল ৫টা নাগাদ লাহোরের মিনারে পাকিস্তানে উপস্থিত হয়ে ভাষণ দেয়ার কথা তার। এদিন আগেই সেখানে উপস্থিত হন নওয়াজ শরীফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ। তার ডাকনাম মরিয়ম আওরঙ্গজেব। ক্ষণে ক্ষণে তাকে দেখা গেছে কাঁদতে। মিনারে পাকিস্তানে অসংখ্য নেতাকর্মীর উদ্দেশ্যে ভাষণে তিনি বলেন, মিনারে পাকিস্তানের এই সমাবেশে আমি ভাষণ দেবো না। এদিন কথা বলবেন শুধু একজনই। তিনি নওয়াজ শরীফ। আমি জানি মিনারে পাকিস্তান একটি বিশাল ভেন্যু। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে পিএমএলএন সমর্থকদের জন্য তা ছোট হয়ে গেছে শনিবার। এ দিনটিকে জীবনের সবচেয়ে আনন্দের বলে বর্ণনা করেন মরিয়ম। গাড়িবহর নিয়ে বিমানবন্দরে আসার পথে তার ওপর ছিটানো হয় গোলাপের পাপড়ি।
সন্ধ্যায় মিনারে পাকিস্তানে ভাষণ দেয়ার কর্মসূচি নওয়াজের। সেখানে আকাশ থেকে ছিটানো হয় গোলাপ ফুলের পাপড়ি। এ জন্য ভাড়া করা হয় দুটি ছোট বিমান। এ উপলক্ষে তার দল পিএমএলএনের নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যালি করেন। সারা দেশের এসব র্যালিকে লাহোরে মিনারে পাকিস্তানে গিয়ে জমায়েত হতে আহ্বান জানানো হয় দলের পক্ষ থেকে। এর মধ্যদিয়ে দলের জনপ্রিয়তায় একটুও ভাটা পড়েনি, এটাই দেখাতে চেয়েছে পিএমএলএন।
পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, সরাসরি লাহোর না গিয়ে নওয়াজের ইসলামাবাদে অবতরণের কারণ হলো আদালতে তার জামিন নিশ্চিত করা। এই জামিন বৃহস্পতিবারই ইসলামাবাদ হাইকোর্ট মঞ্জুর করেছে। তবে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে তিনি ইসলামাবাদে অবতরণ করেন। সেখানে বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন। পাঞ্জাবের একজন পিএমএলএন নেতা বলেছেন, নওয়াজের দেশে ফেরা উপলক্ষে এটা দেখানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, লাহোরে কী পরিমাণ জনপ্রিয় পিএমএলএন। যা একসময় ছিল তাদের দুর্গ। দলীয় নেতারা এখনো সেখানে সফলতা ধরে রেখেছেন। অল্প কয়েক মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ সময় নওয়াজের দেশে ফেরাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় নেতৃত্ব দেবেন এবং চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন।
ওদিকে লাহোরে শুক্রবার ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, তার ভাতিজি মরিয়ম নওয়াজ শরীফ, ছেলে হামজা শেহবাজ সহ পিএমএলএনের নেতারা। তারা নিশ্চিত করেছেন যে বেলুচিস্তান, সিন্ধু ও গিলগিট-বাল্টিস্তান থেকে দলীয় নেতারা লাহোরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন। খাইবার পখতুনখাওয়া ও পাঞ্জাবের নেতাকর্মীরা শনিবার মিনারে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা হন। প্রস্তুতি দেখতে মিনারে পাকিস্তানে ওই তিন নেতা সফরও করেন। র্যালির ভেন্যু দেখার জন্য হেলিকপ্টারে করে পিএমএলএনের পাঞ্জাব ও লাহোরের প্রেসিডেন্ট যথাক্রমে রানা সানাউল্লাহ ও সাইফুল মালুক খোকার পরিদর্শন করেন। দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে দল শুক্রবার রাতে সেখানে কাওয়ালি গানের আয়োজন করে। এ জন্য যারা রাতে সেখানে অবস্থান করেন, তাদের জন্য সব রকম বন্দোবস্ত করে দল। লাহোরের সাবেক কিছু আইনপ্রণেতাকে এসব মানুষের থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেয়া হয়।
আরো পড়ুন : মোবাইল ফোনে নয়া প্রযুক্তির নজরদারি চালু করতে যাচ্ছে সরকার