সিলেট ব্যুরো: সিলেটের রাজপথে প্রদর্শিত এত আগ্নেয়াস্ত্র গেল কই? অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি থানা থেকে লুট হওয়া ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় শনিবার সিলেটে সফর করেছেন পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম। তিনি দুপুরে নগর পুলিশের কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করার পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে জোর দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। ৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের আগে সিলেটের রাজপথে শত শত আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শিত হয়েছে। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে রাজপথে মহড়া দিয়েছে। বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা জানিয়েছেন- জুলাই থেকে আগস্ট বিজয়ের দিন পর্যন্ত সিলেটের রাজপথে অস্ত্রের ঝনঝনানি হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অস্ত্রবাজরা তখনকার বিরোধী দলের কর্মীদের দমনে গুলি ছুড়েছে। আর গুলিতে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর অস্ত্রবাজরা উধাও, আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয়নি।
সিলেট নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, জেলরোড, চৌহাট্টাসহ কয়েকটি এলাকায় সবচেয়ে বেশি অস্ত্র প্রদর্শিত হয়েছে। এসব আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে স্নাইপার, পিস্তল, দু’নলা বন্দুক, কাটা রাইফেল ব্যবহার করা হয়। এসব অস্ত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। প্রথমে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক আন্দোলন শুরু হওয়ার কারণে শাবি শিক্ষার্থীদের ওপর ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়। পরে শাহপরান হলের সি ব্লকের ৪২৩ নম্বর রুম থেকে দুটি পিস্তল সাধারণ শিক্ষার্থীরাই খুঁজে বের করে। পরে র্যাবের অভিযানে অমিত শাহ গ্রেপ্তার হয়েছে। ২রা আগস্ট থেকে শাবি ফটক ও মদিনা মার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হলে সিলেটের ক্যাডাররা প্রকাশ্য অস্ত্র প্রদর্শন শুরু করে। মদিনা মার্কেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পর্যন্ত সশস্ত্র ক্যাডাররা নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এদিন সুবিদবাজার এলাকার একদল সশস্ত্র ক্যাডার মাঠে নেমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গুলি ছুড়ে।
সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল ৪ঠা আগস্ট। এদিন কোর্ট পয়েন্ট ও আশপাশ এলাকায় শত শত রাউন্ড গুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ দলকে পেছনে দিয়ে কর্মীরা সামনে এসে গুলিবর্ষণ করে। আন্দোলনে থাকা নেতারা জানিয়েছেন- সিলেটের সাবেক কাউন্সিলর আফতাব, দেবাংশু দাস মিঠু, আব্দুল হান্নান দলবল নিয়ে কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টাসহ নগরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছিলো। এর বাইরে পীযূষ কান্তি দে তার দলবল দিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় ছিল। পীযূষের সঙ্গে থাকা তার এক সহযোগীর হাতে ছিল তার সেই বহুল আলোচিত দু’নলা বন্দুক। এ ছাড়া শটগান হাতে ছিল জাহেদ, মুনিম অখিলি, সজল দাশ অনিক, শান্ত, টিলাগড়ের ভয়ঙ্কর আলোচিত অস্ত্রধারী আনসার, এমসি কলেজের দেলোয়ার হোসেন রাহী, সরকারি কলেজের রুহেল আহমদ, রাজন আহমদ, ছাত্রলীগের তানভীর, সৈকত চন্দ্র রিমী, গৌরাঙ্গ দাশ সশস্ত্র অবস্থায় ছিল। তারা ওইদিন গুলিবর্ষণ করে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সিলেটের রাজপথে এসব অস্ত্র প্রদর্শনের চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। চিহ্নিত অস্ত্রবাজরাও গ্রেপ্তার হয়নি। এ ছাড়া ৫ই আগস্ট নগরীর ৬টি থানায় ১০১টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র খোয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে পুলিশ বেশির ভাগ অস্ত্র উদ্ধার করলেও ১৮টি অস্ত্র এখনো বাইরে রয়েছে। গতকাল সিলেটের পুলিশের সঙ্গে আইজিপি’র মতবিনিময় কালে পুলিশের খোয়া যাওয়া আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার না হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ সময় আইজিপি দ্রুত অস্ত্র উদ্ধারের তাগিদ দিয়েছেন। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন- অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রবাজদের ধরতে পুলিশ সবসময়ই সক্রিয় রয়েছে। পুলিশ তৎপর থাকার কারণে জনগণের সহায়তায় খোয়া যাওয়া আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। পাশাপাশি অস্ত্রবাজদের ধরতে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে।
আরো পড়ুন : হয়তো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ, নয়তো আন্দোলনে যাবে বিএনপি