পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদকে চার তারকা জেনারেলের সমমর্যাদার ‘চিফ অব পুলিশ’ করার দাবি জানানো হয়েছে বাহিনীর পক্ষ থেকে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালকসহ পুলিশ বাহিনীতে ১০টি পদকে সচিব পদমর্যাদার গ্রেড-১ করে এসব পদকে ‘আইজিপি’ করার দাবিও তোলা হয়েছে।
পুলিশ সপ্তাহের শেষ (ষষ্ঠ) দিন আজ রোববার পুলিশ কর্মকর্তারা আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে মতবিনিময়ে এগুলোসহ বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেছেন। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এসব মতবিনিময় সভা হয়। এতে দেশের সব মহানগর পুলিশের কমিশনার ও রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), সারা দেশের পুলিশ সুপার, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট প্রধান, পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক থেকে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে পুলিশ আছে জনতার পাশে’ প্রতিপাদ্যে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৩ জানুয়ারি সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছয় দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য পুলিশ সপ্তাহের শেষ দিন ছিল আজ।
সভায় উপস্থিত পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের মতবিনিময় করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপরে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়। সব শেষে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে মতবিনিময় হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র (সহকারী মহাপরিদর্শক) মো. মনজুর রহমান আজ রাতে বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধান বিচারপতির কাছে বিভিন্ন সমস্যা ও দাবিদাওয়া তুলে ধরেছেন। তাঁরা সেগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন।
সভা সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছে আইজিপি পদকে ‘চিফ অব পুলিশ’ এবং ১০ কর্মকর্তার পদকে গ্রেড–১ এ নিয়ে ‘আইজিপি’ করার প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে পুলিশপ্রধান সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার, তিনি ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবেন, এমন আর্থিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হোক। এ ছাড়া পুলিশের পঞ্চম গ্রেড পর্যন্ত যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা পুলিশপ্রধানকে দেওয়ার দাবি তোলেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
সভায় পুলিশের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি স্বতন্ত্র প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করারও দাবি জানানো হয়। ঢাকা বা ঢাকার বাইরে স্পোর্টস কমপ্লেক্সের দাবি তোলা হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁদের যানবাহনের সংকটের কথা তুলে ধরেন। তাঁরা পুলিশ বাহিনীতে স্বতন্ত্র মেডিকেল কোর বা মেডিকেল সার্ভিস বাস্তবায়নের দাবি করেন। পুলিশে কর্মরত সাধারণ কর্মীদের (সিভিল স্টাফ) আজীবন রেশন দেওয়ার দাবিও ওঠে। পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর পর তাঁর পেনশন–সুবিধা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তোলা হয়। বর্তমানে এই বিল পাস করার এখতিয়ার রয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের হাতে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবিদাওয়া শোনেন। পরে তিনি এসব দাবি ও সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন বলে আশ্বাস দেন।
আদালতে পুলিশের ব্যারাক দাবি
পুলিশ কর্মকর্তারা আদালতে পুলিশের জন্য ব্যারাক নির্মাণের দাবি তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে। আদালতে মামলার আলামত রাখার স্থান মালখানা অপ্রতুল জানিয়ে তা আরও স্থাপনের দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা আদালতে মামলার সাক্ষ্য দিতে এলে তাঁদের ভাতা দেওয়ার দাবি জানানো হয়। আইনমন্ত্রী এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন বলে সভায় উপস্থিত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে মতবিনিময়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, অনেকগুলো ফৌজদারি মামলার ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। এতে এসব মামলার তদন্ত ও গতি ব্যাহত হচ্ছে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা অভিযোগপত্র দিলে অভিযোগপত্রভুক্ত কোনো আসামিকে বাদ দেওয়ার সুযোগ যেন না থাকে। জামিন নিয়ে মামলার আসামি পলাতক থাকলে জামিনদার আইনজীবীকে জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি তোলেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। সভায় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পাঁচজন বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বিচারপতি পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবিদাওয়া শোনার পর যুক্তিসংগত বিষয়গুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।
এসএসবিতে আইজিপি
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সঙ্গে মতবিনিময়ে বিসিএস কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কমিটি সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডে (এসএসবি) আইজিপিকে সদস্য করার দাবি জানানো হয়। এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, আইজিপি এসএসবিতে সদস্য হিসেবে থাকলে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
আরো পড়ুন : বিপিএলের ‘প্রেসিডেন্ট’ই হতে চান সাকিব