রাজধানীর আজিমপুরের একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে আশিকুর রহমানকে তুলে নেওয়া হয়। তাঁর সন্ধান ও মুক্তি দাবি করেছেন পরিবারসহ শিক্ষক, সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা।
আশিকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের (চতুর্থ বর্ষ) শিক্ষার্থী। তাঁর সন্ধান দাবিতে আজ রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আশিকুরের বাবা মো. সিরাজুল ইসলামও এতে অংশ নেন।
মানববন্ধনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘ইচ্ছা হলো আর কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো, এটি সবার মধ্যেই উদ্বেগের জন্ম দেয়। শিক্ষক হিসেবে আমরা নিজেরাও নিরাপদ বোধ করি না। আশিকুরকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য তুহিন একটি নম্বর (মুঠোফোন) দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই নম্বরে আজ আমরা কল করলে তুহিন বলেছেন, সেখানে তিনি ছিলেন না, প্রশিক্ষণে আছেন।’
অধ্যাপক মান্নান বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে আশিকুরকে তুলে নিয়ে গিয়ে এখন অস্বীকার করা হচ্ছে। আমরা চাই, আশিকুর দোষী হলে তদন্ত হোক। কিন্তু সে কোথায় ও কীভাবে আছে, তা আমরা জানতে চাই।’
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আতিক রহমান, উশান আরা বাদলসহ বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন। আশিকুরের বাবা সিরাজুল ইসলামও বক্তব্য দেন।
মানববন্ধন শেষে সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, তিনি একটি বেসরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তাঁর আরও দুই মেয়ে আছে। তাঁদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগে প্রথম বর্ষে পড়েন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদরে। পরিবার সেখানেই থাকে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে আশিকুরের বন্ধুদের কাছ থেকে আমি জানতে পারি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ডিবির পরিচয় দিয়ে আশিকুরকে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টার দিকে আজিমপুরের ভাড়া বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ আশিকুরের সঙ্গে যে বড় ভাইরা থাকেন, তাঁদের কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্য এএসপি তুহিন নামে পরিচয় দিয়েছেন।’ এ খবর পেয়ে তিনি ঢাকায় এসেছেন।
সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় শাহবাগ ও লালবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ ফিরিয়ে দিয়েছে। আশিকুরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে বলেছে পুলিশ।
আজিমপুরে একই বাসায় আশিকুরের সঙ্গে থাকেন তাঁর বন্ধু মো. মুহসীন৷ তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে আমাদের পাশের বাসা থেকে হিযবুত তাহ্রীরের (নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন) সদস্য সন্দেহে কয়েকজনকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন আশিকুরকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আশিকুরকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা আমাদের বলেন, আশিকুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক বিভাগের শিক্ষকদের কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছেন। তবে আশিকুরকে পুলিশ ধরে নিয়েছে কি না, সে বিষয়ে তাঁরা এখনো নিশ্চিত নন। এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করছেন।