♦ হরতাল-অবরোধসহ হার্ডলাইনের কর্মসূচি নয় ♦ শুধুই সভাসমাবেশ, পদযাত্রা, গণসংযোগ
রাজনৈতিক মামলা ও কারাগারে থাকা নেতা-কর্মীদের মুক্তির জন্য আইনি লড়াইয়ের দিকে নজর এখন রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির। আপাতত হরতাল-অবরোধের মতো হার্ডলাইনের কর্মসূচির বিষয়ে ভাবা হচ্ছে না। সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা, গণসংযোগের মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে। দলটির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য জানান।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই বলে আসছিলাম- এটা একটা প্রিপ্ল্যান নির্বাচন। ৭ জানুয়ারি তারই হুবহু বাস্তবায়িত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন পুতুলের মতো কাজ করেছে। সেজন্য আমরা দেশের জনগণকে আহ্বান জানিয়েছিলাম- এই একতরফা ভোট বর্জনের জন্য। দেশবাসী আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোট কেন্দ্রে যাননি। তাই আমরা দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সরকারের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি হয় এমন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাকশালী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করা হবে।’ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএপি এখন স্বাভাবিক কর্মসূচি দিয়ে দলকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চায়। আটক নেতা-কর্মীদের মুক্ত করে মিছিল-সমাবেশের ধারায় ফিরে দলকে সংগঠিত করতে চায়। দলের তৃণমূলের কর্মীরা যাতে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে যোগ দিতে পারে সেদিকেই এখন তাদের নজর।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির দীর্ঘ বৈঠক হয়। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে ভোটের দিনের পরিস্থিতি, দলের পরবর্তী করণীয় নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ভোট বর্জনের আহ্বানে দেশবাসী অভূতপূর্ব সাড়া দেওয়ায় খুশি দলটির হাইকমান্ড। ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে সাধারণ মানুষের সরকারের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন তারা। দেশের বেশির ভাগ মানুষ বিএনপির নির্দলীয় সরকারের আন্দোলন সমর্থন করছে। এতে বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা অনেকটা চাঙা।
বিএনপি মনে করছে, নির্বাচনে ভোটের হার ৮ থেকে ১০ শতাংশের বেশি হবে না। তাই দেশবাসীকে এবার নতুন সরকারকে বর্জনের আহ্বান জানাবে বিএনপি। এজন্য সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা, গণসংযোগের মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ভোটের প্রকৃত তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরবে। এদিকে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর থেকে তালাবদ্ধ নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোলা হয়েছে। খোলা হয়েছে গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ও। পাঁচ মাস ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর গুলশানের বাসায় ফিরেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, এই ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে বর্জনের জন্য আমরা জনগণকে আহ্বান জানাব। প্রাথমিকভাবে কয়েকদিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপর সভা-সমাবেশ, পদযাত্রার মতো রাজপথের জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে। অনেক সিনিয়র নেতার নামে রয়েছে মামলা। অনেককে দেওয়া হয়েছে সাজা। এসব বিষয় মাথায় রেখে সামনে আমাদের কর্মসূচি দেব। পাশাপাশি দলের সংগঠনগুলোকে গোছানো হবে।
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর ভর করে সরকার যেনতেনভাবে ভোট করেছে। এতে ভোটাধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ক্ষতি হয়েছে দেশ ও জনগণের। আমরা জনগণকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিলাম। জনগণ আমাদের ডাকে সাড়া নিয়ে ভোট বর্জন করেছে। এজন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ। তিনি বলেন, বিএনপি সাংগঠনিকভাবে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছিলাম, আছি এবং থাকব।
জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে নির্বাহী আদেশে কারাগারের বাইরে আছেন। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থা অনেক দিন ধরেই ভালো নয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেশের বাইরে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। তিনিও একাধিক মামলায় দণ্ডিত। দলের সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মাঠে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিলেও ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। বুধবার তিনি ৯ মামলায় জামিন পেয়েছেন। কারাগার থেকে বের হতে হলে তার আরও দুটি মামলায় জামিন দরকার। গত সাড়ে চার মাসে বিএনপির দেড় হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে দণ্ড দিয়েছেন আদালত। এক দিনে ১১৯ জনকে সাজা দেওয়ারও নজির আছে। তাদের প্রধানত ২০১৩-১৪ সালের মামলায় সাজা দেওয়া হয়। সাজার মেয়াদ ছয় মাস থেকে আড়াই বছর। বিএনপির দাবি, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সমাবেশের চার-পাঁচ দিন আগে থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে ২৫ হাজার ৪৩৯ জনেরও বেশি নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। মামলা দেওয়া হয়েছে ৭৭০টিরও বেশি। আহত হয়েছেন ৪ হাজার ২৭৫ জনের বেশি নেতা-কর্মী। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরদিন থেকে বিএনপি হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে। ২৯ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখন কারাগারে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, সব মিলিয়ে বিএনপি এখন আটক নেতা-কর্মীদের মুক্ত করতে আইনি লড়াইয়ে বেশি নজর দেবে। পাশাপাশি চালিয়ে যাবে মাঠের আন্দোলন।
আরো পড়ুন : সরকারের সামনে মোটাদাগে যে ছয় চ্যালেঞ্জ