আওয়ামী লীগের বৃহত্তর রাজনৈতিক ভূমিকায় দেখা যেতে পারে পুতুলেকে

জনপ্রতিনিধি নারী প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি স্বাস্থ্য কথা হ্যালোআড্ডা

পিটিআই : চলমান জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ তার মায়ের সঙ্গে ভারতে আছেন। সম্প্রতি আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া সফরেও গিয়েছিলেন। সেখানে আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে তার মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়। এরপরই নিজের দ্বিতীয় হাই প্রোফাইল আন্তর্জাতিক ইভেন্ট জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিলেন সায়মা ওয়াজেদ। ফলে কেউ কেউ মনে করতে শুরু করেছেন যে, আগামী দিনে হয়তো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক ভূমিকায় দেখা যাবে হাসিনা কন্যাকে।

ঢাকায় দুই দফা দায়িত্ব পালন করা ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সর্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকার পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভাবনা-চিন্তা চলছে। আমরা বিশ্বাস করি যে, এটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে করা হবে। তবে গণতন্ত্র কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একজন ব্যক্তির পারিবারিক সম্পর্ককে অস্বীকার করে না।

নয়াদিল্লিতে চলমান জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বের বেশির ভাগ শীর্ষ নেতারা অংশগ্রহণ করেছেন। সায়মা ওয়াজেদ খুব সম্ভবত এই প্রথম কোনো প্রতিবেশী বা মিত্র দেশ ভারতে সরকারি সফরের সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন। বিষয়টিকে বিশ্লেষকরা বিভিন্ন দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। সায়মা ওয়াজেদ একজন অটিজম বিশেষজ্ঞ।

তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক পদের জন্য নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এখন এ অঞ্চলের ১১টি দেশের মধ্যে অন্যতম ভারতের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।
নির্বাচনে সায়মা ওয়াজেদের জয় নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের শীর্ষ কূটনীতিকরা এরইমধ্যে আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে লবিং করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই পদের জন্য ভারতকে শেখ হাসিনার কন্যা অথবা নেপালের শম্ভু প্রসাদ আচার্যের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে বেছে নিতে হবে। বাংলাদেশ এবং নেপাল উভয়ের সঙ্গেই নিজের সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় ভারত। ফলে এই নির্বাচনে ভারত কার পক্ষে ভোট দেবে তা ঠিক করা দেশটির জন্য কঠিন হতে পারে।

বাংলাদেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং মরিশাসের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শান্তনু মুখার্জি বলেন, এমন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে শেখ হাসিনার কন্যার ভারত সফর বেশ ইন্টারেস্টিং একটি বিষয়। তাছাড়া একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্যও তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ফলে তিনি এখন বাংলাদেশেও বড় কোনো পদ পাবেন কিনা, তা একটি নজর রাখার মতো বিষয়।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, ভারত সর্বদা বহুজাতিক ফোরামে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা তার প্রতিবেশী বাংলাদেশকে সমর্থন করে আসছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি কে হবেন তা নিয়ে শেখ হাসিনা এখনো কোনো ইঙ্গিত দেননি। যদিও এক সময় শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হতো।

সায়মা ওয়াজেদ ‘মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম’ বিষয়ক ডব্লিউএইচও মহাপরিচালকের উপদেষ্টা এবং ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ বিষয়ক ডব্লিউএইচও বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য। তিনি এখন পর্যন্ত রাজনীতিতে আসার বিষয়ে কোনো ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজের সাবেক পরিচালক এবং বর্তমানে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ফেলো শ্রীরাধা দত্ত বলেন, আমরা শেখ হাসিনাকে এখনো কোনো উত্তরাধিকার নিয়ে পরিকল্পনা করতে দেখিনি। যদিও কয়েক বছর ধরে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদকে আইটি বিভাগ সহ বেশ কিছু দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এবার সায়মা ওয়াজেদও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন। ফলে অনুমান করা যেতে পারে, উভয়কেই ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ভূমিকার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। এ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করবে। যদিও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এর আগের নির্বাচনগুলোতে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল। তারা এবার বলছে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করলে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নির্বাচন পরিচালনার অনুমতি না দিলে তারা নির্বাচন বয়কট করবে।

এরইমধ্যে প্রায় চার মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিয়ে একটি বিশেষ ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাদানকারী কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে অন্যান্য অনেক দেশ বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে সমর্থন করছে বলে মনে হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন শেষেই বাংলাদেশ সফরে আসছেন। আবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভও জি-২০ সম্মেলনের আগেই ঢাকা ঘুরে গেছেন।

আরো পড়ুন : দশ লাখ টাকায় কুপ্রস্তাব দফারফা ! বহাল তবিয়তে ঝালকাঠির জেলার

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *