সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ‘প্যাথলজিক্যাল চোর’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের (ক্ষমতাসীন) একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে চুরি। আমরা তো ভোট চোর, ভোট চোর বলি। জাতীয় নির্বাচনে ভোট চুরি করে, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোট চুরি করে। এখন সুপ্রিম কোর্টে ভোট চুরি করছে, ঢাকা বারে ভোট চুরি করছে। আসলে এরা হচ্ছে প্যাথলজিক্যাল চোর। চুরি ছাড়া এদের আর কোনোকিছু নেই। চুরি করে এরা চলে, চুরি এদের নেশা-পেশা, সবই হচ্ছে চুরি। দেশকে তো ওরা চুরি করে ফোকলা করে দিয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে এমন চুরি করেছে, ওখানে এখন কিছু আছে বলে মনে হয় না।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘গত রাতে সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের নির্বাচনে ফলস ব্যালট পেপার ছাপিয়ে সেখানে যখন ব্যালট পেপারে সিল মারছিল- সে সময়ে সেটিকে ধরে ফেলার কারণে প্রচণ্ড রকমের গোলযোগ হয়েছে। আমাদের যিনি সাতবার সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচিত সেক্রেটারি ছিলেন তাকে তারা আঘাত করেছে এবং তার নামসহ আরও এক হাজার আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ কোথায় আমরা এদেশকে নিয়ে আসলাম। এ কারণেই আওয়ামী লীগকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। তারা এদেশকে চরমভাবে ধবংসের দিকে নিয়ে গেছে। আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সবকিছুকে তারা ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। আমাদের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা ধবংস করে দিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের লেখা ‘আমার রাজনীতির রোজনামচা’ গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। অনন্যা প্রকাশনীর থেকে বের হওয়া ৪১৬ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের মূল্য ধরা হয়েছে ৮শ টাকা। লেখকের অন্য গ্রন্থগুলো হলো- ‘ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনের কারাগারে ৬১৬ দিন’, ‘জরুরি আইন সরকারের দুই বছর’, ‘সংসদে কথা বলা যায়’, ‘সময়ের ভাবনা ও রাজনীতি’, ‘রাজনীতির হাল-চাল’, ‘মূল্যবোধের অবক্ষয়’ এবং ‘প্রগতি ও সত্যের সন্ধানে’।
গ্রন্থের লেখক সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করছি লেখনীর মাধ্যমে আমার নিজের অভিজ্ঞতা, নিজের যে চিন্তা-চেতনা, নিজের যে কর্মকাণ্ড এগুলো ফুটিয়ে তুলতে- সেজন্য বই লেখা। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলাম, এখন রাজনীতিবিদ। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা আসলে এত রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, ক্ষমতায় থাকলে রাষ্ট্র চালানো, বিরোধী দলে থাকলে জেল-জুলুম-নির্যাতনে পালিয়ে থাকা। লেখার সময় কোথায়? তবে আমি কিছু সময় পেয়েছি জেলে থাকার সময়, যেটা এই লেখালেখির কাজে ব্যবহার করেছি। আমি শুধু চেষ্টা করেছি এটা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এটা কাজে লাগবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ন্যায়-নীতিতে বিশ্বাস করে না, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এজন্য তারা ১৯৭৫ সালে একইভাবে গণতন্ত্রকে ধবংস করে দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। সব পত্রিকা বন্ধ। ভিন্নমত বন্ধ। এখানে এই বই (আমার রাজনীতির রোজনামচা) বন্ধ হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখন ভিন্নমতের বই লিখলে যারা প্রকাশ করেন তাদের স্টল পর্যন্ত নিতে দেওয়া হয় না বাংলা একাডেমিতে, যা চিন্তা করা যায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার মারুফ হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস, কবি আবদুল হাই শিকদার, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি এম আবদুল্লাহ, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক নুর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অবসরপ্রাপ্ত কর কর্মকর্তা ড. সাজ্জাদ হোসেন ভুঁইয়া এবং অনন্যার প্রকাশক মনিরুল হক বক্তব্য দেন।
আরো পড়ুন : আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে ভর্তিতে একটি পরীক্ষা