নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার কালাইকান্দি গ্রামের কৃষক মো. সুলতান শেখ আদর করে জন্মের পর লাল রঙের ষাঁড় গরুটির নাম রেখেছেন ‘হীরালাল’। ইতিমধ্যে বয়স তিন বছর পেরিয়েছে। সামনে কুরবানির ঈদ। হীরালালকে বিক্রি করতে স্থানীয় কয়েকটি হাট-বাজারে নিয়ে গেলেও বিক্রি করতে না পাড়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষক সুলতান শেখ।
এই ষাঁড়টির ওজন এক হাজার দুইশ কেজি বলে দাবি করেন সুলতান শেখ। তার দাবি এবারের কুরবানির ঈদে কলমাকান্দায় আকার ও ওজনে সবচেয়ে বড় ষাঁড় এটিই। তিনি এই ষাঁড়টি সাড়ে আট লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান।
অপরিচিত কেউ এই ষাঁড় গরুটির কাছে ঘেঁষলেই মাথা নাড়ায়। নাক দিয়ে ফোঁসফোঁস আওয়াজ বের করে। ভাবটা এমন, যেন সুযোগ পেলেই সজোরে গুঁতা দিয়ে দেবে। কুরবানির ঈদ সামনে রেখে গরুটি তোলা হয় কলমাকান্দার বিভিন্ন হাট-বাজারে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় আজ শুক্রবার পর্যন্ত গরুটি বিক্রি হয়নি।
ষাঁড় গরুটির মালিক কৃষক মো. সুলতান শেখ জানান, নিজের পালিত গাভী থেকেই এর জন্ম, বয়স তিন বছর পেরিয়েছে। গত রোববার ও বুধবার এ দু’দিন ৮ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে গরুটিকে কলমাকান্দার দুটি হাটে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বাজারে বড় গরুর চাহিদা কম থাকায় কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় তিনি গরুটি বিক্রি করতে পারেননি। তিনি গরুটি বিক্রি করতে চান সাড়ে আট লাখ টাকায়। কিন্তু দাম হয়েছে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা।
সুলতান শেখ বলেন, হীরালালকে পালা হয়েছে গম-ভুট্টার ভুসি, ছোলা, গুর, খড় ও ঘাস খাইয়ে। প্রতিদিন তার পিছনে খরচ হয় ছয় থেকে সাতশ টাকা। বর্তমানে ষাঁড়টির পেছনে এত টাকা খরচ করা তার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া গরুটি বেশি নাদুসনুদুস হওয়ার কারণে বার বার হাটে তোলা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবমিলিয়ে যদি কেউ বাড়ি থেকে হীরালালকে কিনতে চান তাহলে দাম একটু কম হলেও তিনি বিক্রি করে দেবেন। না হয় ষাঁড়টি বিক্রি করতে শনিবার রাজধানীর গাবতলীর হাটে নিয়ে যাওয়া হবে।
কলমাকান্দা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কণিকা সরকার যুগান্তরকে বলেন, এবার উপজেলায় ১১ হাজার ৫৮৭টি গবাদিপশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। উপজেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১০ হাজার ২১১টি। এ হিসাবে উপজেলায় এক হাজার ৩৭৬টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।
যাত্রাবাড়ী-শ্যামপুর হাটের আকর্ষণ কালা পাহাড়-কালাচাঁন
যাত্রাবাড়ী প্রতিনিধি: রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনিরআখরা ও শ্যামপুরের শ্মশানঘাট কুরবানির পশুর হাট। ছোটে মাঝারি সাইজের গরু ছাড়াও এ দুই হাটে এসেছে বড় আকারের অনেক গরু। এরই মধ্যে শনিরআখরা হাটে কালাপাহাড় ও শ্মশানঘাট হাটে কালাচাঁন নামের গরু সবার নজর কেড়েছে।
বিক্রেতারা তিন চার দিন আগেই গরু নিয়ে আসেন হাটে। আসছেন কিছু কিছু ক্রেতাও। হাট পরিচালনা কমিটি ইতোমধ্যেই তাদের হাটের সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন।
সরেজমিনে যাত্রাবাড়ীর শনিরআখরা হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এই হাটটি বিভিন্ন আকারের গরুতে ভরপুর। যদিও অন্যান্য পশু এখনো চোখে পড়েনি। এখানে ব্যানারে ক্রেতা বিক্রেতাদের নানান সুযোগ সুবিধার কথা লেখা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় প্রশাসনিক ও নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। পাইকারদের থাকা খাওয়া, গোসল, টয়লেট ও পানির সুব্যবস্থা। জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন। লেনদেনের জন্য ব্যাংকিং ও বিকাশের ব্যবস্থা এবং ২৪ ঘণ্টা পশু ডাক্তারের পরামর্শ ও দালালমুক্ত হাটের ব্যবস্থা করা।
যাত্রাবাড়ীর কাজলা থেকে তিন দিন আগে গরু নিয়ে আসেন সাজন হাওলাদার। তিনি মোস্তফা এন্টারপ্রাইজ ফার্মের ২৫টি গরু নিয়ে আসেন। এক নম্বর কাউন্টারের সামনে বাধা কালাপাহাড় ও সুলতান নামক এই হাটের সবচেয়ে বড় দুটি গরু দেখতে উৎসুক অনেকে ছুটে আসছেন। প্রায় ২৫ মণ ওজনের গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে ১৩ লাখ টাকা। তবে কালো বর্ণের এই গরুটির দাম আট লাখ টাকা বলেছেন বলে জানান বিক্রেতা মালিক আবুল কালাম।
কালাপাহাড়কে মালিক কালাম যা আদেশ করছেন তাই করছেন। কালো বর্ণের ও উঁচু হওয়ায় এর নাম রাখা হয়েছে কালা পাহাড়।
ফরিদপুরের সদরপুর থেকে চার দিন আগে বেশ বড় আকারের ছয়টা গরু নিয়ে আসেন বেপারী নুরুজ্জামান। প্রতিটি গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা। তিনি জানান, আমরা প্রতিবছরই এই হাটে গরু নিয়ে আসি।
শনিরআখরা কুরবানির পশুর হাটের ইজারাদার মো. কামরুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, আমরা পানির জন্য এই হাটে ১৭টি মোটর স্থাপন করেছি। পানি সরবরাহের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য বাকি সব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে শ্যামপুরের শ্মশানঘাট কুরবানির পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এই হাটটিতে প্রচুর গরুর সমাগম। এখানেও ক্রেতা বিক্রেতাদের জন্য দেওয়া হয়েছে অনেক সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি। যদিও চোখে পড়েনি পশুর ডাক্তার ও জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিনসহ অনেক কিছু।
এই হাটে কথা হয় পাবনা থেকে চার দিন আগে বড় আকারের গরু নিয়ে আসা সোলায়মানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি ছয়টি গরু নিয়ে আসছি। এর মধ্যে কালাচাঁন নামক গরুটি এই হাটের সেরা গরু। যার ওজন প্রায় ১৮ মন। এর দাম ৯ লাখ টাকা। গরুটি কালো বর্ণের হাওয়ায় এর নাম দেওয়া হয়েছে কালাচাঁন। এইগুলো আমাদের পালিত গরু।
তিনি আরও বলেন, ক্রেতারা আসছে এবং দামও বলছে। কিন্তু এত কম দামে দেওয়া সম্ভব না। কারণ গরুর খাবারের দাম অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার গরুর দাম বেশি হবে। গরুটি দেখতে ও ছবি তুলতে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। তবে গরুটি খুবই শান্ত প্রকৃতির। গরুটি তার প্রভুর কথা মতোই উঠছে ও বসছে।
চুয়াডাঙ্গা থেকে মাঝারি ও বড় আকারের ১৪টি গরু নিয়ে আসেন মন্টু নামের এক বেপারি। তিনি জানান, এবারের গরুর দাম বেশি হবে। কারণ গরুর খাবার গমের ছাল, খৈল, খড়, ভুসিসহ অন্যান্য জিনিসের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। তিনি প্রতিটি গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন তিন থেকে চার লাখ টাকা।
তিনি আরও জানান, ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি।
এ হাটে গরু কিনতে আসা ব্যাংকার সালাম জানান, এবার গরুর দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে। কয়েকদিন আগে আসলাম যদি একটু কম দামে গরু কেনা যায় এই কারণে।
পোস্তগোলা শ্মশানঘাট পশুর হাটের ইজারাদার শাহনুর রহমান গাজী যুগান্তরকে বলেন, এই হাটের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ক্রেতা বিক্রেতাদের সুবিধার জন্য সব রকম সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সারা দেশের কৃষকদের পালিত গরু এই হাটে আসে। আশা করি প্রতি বছরের মতো এবারো বেচাকেনা ভালো হবে।
আরো পড়ুন : শ্রীপুরে চলন্ত মিনিবাস থেকে লাথি মেরে ফেলে হত্যার অভিযোগ