বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে শূন্য ঘোষিত ছয়টি আসনে উপনির্বাচন আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটের জন্য ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ ও ৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
উপনির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, জাতীয় সংসদের ছয়টি শূন্য আসনের উপনির্বাচন সুন্দরভাবে সম্পন্নের জন্য সব আয়োজন শেষ করা হয়েছে। এ জন্য দেড় গুণ ইভিএম সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া সবাই যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কমিশন অবশ্যই চায় আগামী দ্বাদশ সংসদ ভোটে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করতে। যদিও সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা প্রার্থীরা তাদের মতো করে গেছেন। ভোটের সব প্রস্তুতি শেষ। ক্যামেরা নেই এবার, আপনারা জানেন। ইভিএমের কোয়ালিটি কন্ট্রোল (কিউসি) শেষ। মেশিন প্রস্তুত। মেশিন যা দরকার, তার চেয়ে বেশি দেড় গুণ দেওয়া হয়েছে।’ বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় গিয়ে প্রার্থীদের শক্ত সহ-অবস্থান দেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরস্পরের প্রতি পরস্পরের শ্রদ্ধা। প্রত্যেকেই সমস্বরে বলছে—কমিশন যেভাবে চাইবে, সেভাবেই নির্বাচন হবে। সবাই যখন একসঙ্গে কাজ করে, সেখানে আশা করি ভালোই হবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবুয়াসিফ আহমেদ নিখোঁজের ঘটনায় বর্তমান কমিশন তদন্ত করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসুক। তার পর কী হবে দেখা যাবে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন অফিসার এই তিন জনকে বলেছি, তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে। এই ঘটনাটা আসলে কী? সত্যতা কতটুকু। কমিশন ওখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি, অতিদ্রুত যখনই পার ওনাকে উদ্ধার করো। এটা আমরা নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। ওনাকে তারা উদ্ধার করতে পারবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। ইলেকশনের আগেই হয়, তাহলে ভালো হয়। কমিশন নিয়ে গিয়ে তারে ধরে আনতে পারব না।’
ইসি রাশেদা বলেন, ‘আন্তরিকতা ও সততা নিয়ে কাজ করতে পারাটা একটা বড় শক্তি। আমি নিজে চাঁপাইনবাবগঞ্জ গেলাম, বগুড়া-২ আসনে গিয়েছি, ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রি.জে (অব.) আহসান সাহেব গেলেন। আমাদের দুই জনেরই পর্যবেক্ষণ হচ্ছে—একটা সুন্দর, শক্ত সহাবস্থান, পারস্পরিক শ্রদ্ধা দেখেছি। মাঠ প্রশাসন বলেছে আপনারা চিন্তা করবেন না। কমিশন যেভাবে আমাদের নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেভাবেই নিরপেক্ষ একটা সুন্দর নির্বাচন করব। ওনারা আমাদের এভাবে বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি, একপ্রাণ হয়ে সবাই কাজ করলে ভালোই নির্বাচন হবে। এটাই আমাদের শক্তি। মানে ইউনিটি যেটা, এটা আমাদের শক্তি বলে মনে করছি।’
৫০-৭০ আসনে ইভিএমে ভোট :আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০ থেকে ৭০টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে হাতে থাকা কতটি মেশিন ব্যবহারোপযোগী আছে, তার ওপর নির্ভর করবে সিদ্ধান্ত। সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটের স্বার্থে ২ লাখ নতুন মেশিন কেনার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার নতুন একটি প্রকল্প নিতে সরকারকে প্রস্তাব করেছিল ইসি। তবে গত ২২ জানুয়ারি আর্থিক সংকটের কারণে সেই প্রকল্প প্রস্তাবটি আপাতত প্রক্রিয়াকরণ না করার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। এ ক্ষেত্রে চলমান ইভিএম প্রকল্প দিয়েই যতটা সম্ভব আসনে ভোট করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। তবে কতটি আসনে এ যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে, তা এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি সংস্থাটি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আমাদের হাতে যে সব ইভিএম আছে, তা দিয়েই ভোট করব। করব না—এটা কিন্তু বলিনি। সময় আছে তো অনেক। বর্তমানে দেখা হচ্ছে কতগুলো ইভিএমে ভালো আছে। ৫০ থেকে ৭০টি আসনে ইভিএমে ভোট হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।’
আরো পড়ুন : আমি কি জোর করে বলতে পারি যে মাশরাফি তুমি রিটায়ার করো?-পাপন