বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুনের ঘটনার পর ঢাকার অন্য মার্কেটের অগ্নিঝুঁকির বিষয়টি সামনে এসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার বিষয়ে নতুন করে কাজ শুরুর কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ঢাকার প্রায় ৪৫০টি মার্কেট ও শপিংমল আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এই সব মার্কেট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার নোটিশ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। একাধিকবার পরিদর্শনেও গেছে তারা। বার বার সতর্ক করা হয়েছে যে দ্রুতই মার্কেট সরিয়ে নিতে। বলা হয়েছে, আগুন নির্বাপণের যথেষ্ট ব্যবস্থা করতে। কিন্তু, তারা কোনো বিষয় আমলে নেয়নি। এমনকি যে বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনা ঘটলো সেখানেও ৪ বার নোটিশ দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, মার্কেট কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। ব্যবসার ক্ষতি হবে বলে তারা মার্কেট অন্যত্র সরিয়ে নিতে চায়নি।
৪৫০টি মার্কেটের মধ্যে গাউসিয়া, চাঁদনীচক, নীলক্ষেতের বইয়ের দোকান, টিকাটুলির জুতার মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, বঙ্গবাজার মাজার রোডের কাপড়ের মার্কেট ও রাজধানী সুপার মার্কেট, শাঁখারী বাজারের দুই সড়কের পাশের মার্কেটসহ ৪৫০টি মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে। আগুনের ঝুঁকির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মার্কেটগুলোতে আগুন নির্বাপণের ব্যবস্থা নেই, আলো-বাতাসের স্বল্পতা, বিদ্যুতের তারের ছড়াছড়ি ও সরু গলি। সেই মার্কেটগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের পর্যাপ্ত সড়ক নেই। হঠাৎ আগুন লাগলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে অনেক মানুষ বের হওয়ার কোনো পথ নেই।
এ ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালে ঢাকার বহুতল ভবন, শিল্প কলকারখানা, অন্যান্যসহ ১১৬২টি ভবন পরিদর্শন করে। এরমধ্যে ৪৯৯টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ১৩৬টি ভবনকে নোটিশ দেয়।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল জানান, ‘ঢাকায় যেসব মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ সেইগুলোতে আমরা আবার নোটিশ দিবো। ফায়ার সার্ভিসের কাজ হচ্ছে শুধু নোটিশ দেয়া। সিলগালা করার কাজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তিনি জানান, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বঙ্গবাজার মার্কেট কর্তৃপক্ষকে ফায়ার সার্ভিস ৪ বার নোটিশ দিয়েছিল যে, মার্কেটটি আগুনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু, মার্কেট কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো কথা আমলে নেয়নি।’
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার গুলশানে সিটি করপোরেশন মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকা করা হয়। সেখানে ৪৫০টি মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব মার্কেটগুলোতে নেই পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। নেই ফায়ার ড্রিলের ব্যবস্থা।
সূত্র জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ ওই মার্কেটগুলো অতি পুরোনো। আগুন লাগলে আশপাশে কোনো জলাশয় নেই যেখান থেকে পানি এনে আগুন নেভানো যাবে। এ ছাড়াও অনেক মার্কেট রাজউকের নকশা অনুযায়ী করা হয়নি। ফায়ার সার্ভিস জানায়, যে মার্কেটকে আগে নোটিশ করা হয়েছিল ওই মার্কেটগুলোকে আবারো তারা নোটিশ দিবেন।
চাঁদনী চক মার্কেটের ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবীর জানান, আমাদের মার্কেট অনেক পুরনো। আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তবে আমরা এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করে নিরাপত্তা বিধানে সক্ষম হয়েছি। এ ছাড়াও দুর্ঘটনা হলে প্রতিরোধের জন্য কিছু ব্যবসায়ী ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ব্যবসায় ক্ষতি হবে বলে অনেকেই মার্কেট ছেড়ে চলে যেতে চান না।
আরো পড়ুন : কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হলো সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি’র