সরকার পতনের একদফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে এগোচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এ লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে কর্মসূচি আরও জোরদার করার চিন্তা করা হচ্ছে। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে কর্মসূচিতেও আসবে ভিন্নতা। এই সময়ে ঠিক কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া হবে তা নিয়ে দলের তৃণমূল, মধ্যম সারি এবং সিনিয়র নেতাদের মতামত ও পরামর্শ নিচ্ছেন দলের হাইকমান্ড। এজন্য শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি যুগপৎ ধারায় আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের কাছেও কর্মসূচির বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। তাদের মতামত নেয়া শেষে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি শেষে কয়েকদিনের বিরতিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তার আগে সম্ভাব্য কর্মসূচি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন শীর্ষ নেতারা। পরে একদফা দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবেন তারা।
কর্মসূচি চলাকালে মাঠের পরিবেশ ও পরিস্থিতি বুঝে কর্মসূচির ধরনও পরিবর্তন করা হবে।
কর্মসূচির বিষয়ে মতামত নেয়া বিএনপি’র একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি’র তৃণমূল, মধ্যম সারি এবং সিনিয়র নেতাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মতামত নেয়া হচ্ছে। তারা তাদের মতামত দলকে জানাচ্ছেন। এরমধ্যে অনেকেই ঢাকাকে ঘিরে আন্দোলনের ছক তৈরির কথা বলেছেন। আবার কেউ কেউ ঢাকাকে আন্দোলনের মূল কেন্দ্র রেখে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন। কর্মসূচির বিষয়ে বেশির ভাগ নেতাকর্মী জনসম্পৃক্তমূলক কর্মসূচির কথা বলেছেন। এরমধ্যে অবস্থান, পদযাত্রা, গণমিছিল এবং মহাসমাবেশের মতো কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান মানবজমিনকে বলেন, সরকার পতনে একদফা দাবি আদায়ে আমাদের আন্দোলন চলমান। বিএনপি’র এখন সকল কর্মসূচি করছে একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে। এটা ধারাবাহিকভাবে চলবে। বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সরকার পতনে একদফা দাবির পরবর্তী কর্মসূচি বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে। এই কর্মসূচি নির্ধারণে বিএনপি’র সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মতামতও নেয়া হয়েছে। আর সেপ্টেম্বরে একদফা দাবি আদায়ে ভিন্নতর কর্মসূচি আসবে।
বিএনপি’র ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আমাদের দাবি মেনে নিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আমরা জানিয়েছি। কিন্তু সরকার আমাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করছে না। এজন্য আমাদের আর পেছনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এখন আমরা সরকার পতনের একদফা দাবিতে আন্দোলন করছি। এজন্য আমাদের সার্বিক প্রস্তুতিও রয়েছে। এবার আন্দোলন হবে ভিন্ন ধরনের। আমরা লাগাতার ও ধারাবাহিক কর্মসূচির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। গত ১২ই জুলাই একদফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর এ পর্যন্ত ঢাকায় পদযাত্রা, মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি, গণমিছিল, মহানগরে গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো। সর্বশেষ একদফা দাবিতে ২৫শে আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে কালো পতাকা গণমিছিল করেছে বিএনপি ও সমমনা দল ও জোট।
ওদিকে গতকাল দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, একদফা দাবি আদায়ের বিষয়ে সেপ্টেম্বর মাসেই ফায়সালা হবে। তারা বলেন, দেশের মানুষ আজ উজ্জীবিত। মানুষ অধিকার চায় ও বাঁচতে চায়। সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, চলতি মাসে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছি। আন্দোলন করেই সরকারকে বিদায় করতে হবে।
বিএনপি’র পাশাপাশি সমমনা দলগুলো আন্দোলন প্রস্তুতি জোরদার করেছে। গণতন্ত্রমঞ্চ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য দলও নিজস্ব কর্মসূচির ছক তৈরি করছে। এসব দলের নেতারা জানিয়েছেন, সামনের দিনে বিএনপি’র সঙ্গে তারা জোরদার আন্দোলনে যেতে চান।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য আমাদের দুই মাস সময় আছে। এর আগে আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করেই বিরোধী দলগুলো সামনের কর্মসূচি ঠিক করবে।
আরো পড়ুন : আজ থেকে নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে আওয়ামী লীগের টানা কর্মসূচি