রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ আজ শনিবার। এ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার শহরে সমাবেশস্থল মাদরাসা মাঠের পাশে ঈদগাহ মাঠে তাঁবুতে আরো নেতাকর্মী এসে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকেই উঠেছেন পরিচিতজনদের বাসায়।
এদিকে সড়কে তিন চাকার অবৈধ যান চলাচলা বন্ধসহ ১১ দফা দাবিতে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো বাস ধর্মঘট হয়েছে।
ধর্মঘটের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। এর মধ্যে রাজশাহীতে সড়কে অবাধে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের দাবিতে গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতি।
সমাবেশ ঘিরে গতকাল বিএনপির রাজশাহী বিভাগের নেতারাসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতা রাজশাহীতে পৌঁছান। সকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে ঘিরে পাবনার একটি গ্রুপ মিছিল বের করে। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতারা মোটরসাইকেল বহরসহ মিছিল নিয়ে ঈদগাহ মাঠে যান।
গতকালও রাজশাহী শহরের বিভিন্ন
প্রবেশদ্বারে ও রেলস্টেশনে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ তল্লাশি করতে গিয়ে আসা নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। অনেককেই শহরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বাড়িতে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘পুলিশি বাধা এবং হয়রানি উপেক্ষা করে কয়েক লাখ নেতাকর্মী রাজশাহী শহরে প্রবেশ করেছেন। যাঁরা আসতে পারেননি শনিবার সকালের মধ্যেই তাঁরা এসে উপস্থিত হবেন। ’
সমাবেশে যোগ দিতে বগুড়া শহরের চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে গতকাল দুই শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। বহরে যোগ দেন জেলার কাহালু, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি ও সান্তাহারের বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আবু হাসান ও বগুড়া শহর যুবদলের আহ্বায়ক আহসান হাবিব মমি অভিযোগ করেন, শহরের গোদারপাড়ায় এবং কাহালু ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ তাঁদের বহরটি আটকানোর চেষ্টা করে। তবে তাঁরা যাত্রা অব্যাহত রাখেন।
বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কে দেখা যায়, গোদারপাড়া বাজারের পশ্চিম পাশে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে পরিবহনের কাগজ যাচাই ও যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আরেকটি চেকপোস্টে যানবাহন থামিয়ে কাগজ যাচাই করা হচ্ছে।
বগুড়া ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, কার কোথায় গন্তব্য পুলিশ সেসব জিজ্ঞাসা করেনি। মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই করতে সড়কে পুলিশ কাজ করছে। যেসব যানবাহনের কাগজপত্র নেই তাদের বিরুদ্ধে মোটরযান আইনে মামলা দেওয়া হচ্ছে।
আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ বলেন, সড়কের বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত টহল-তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। কাগজপত্র না থাকায় সকাল থেকে ১০টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়। বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে সড়কে বাধা দেওয়া বা আটক করা হয়নি।
পরিবহন ধর্মঘটে দুর্ভোগ
জয়পুরহাট থেকে গতকাল কোনো রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। বাইরের কোনো বাস জয়পুরহাটে আসেনি। ঢাকাগামী কোচগুলো সকাল থেকে বন্ধ ছিল।
ঢাকার একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার মার্কেটিং বিভাগে চাকরি করেন মনিরুল ইসলাম। ব্যাবসায়িক কাজ শেষে শুক্রবার সকালে তিনি ঢাকায় ফিরবেন; কিন্তু ট্রেনে টিকিট না পেয়ে জয়পুরহাট বাস টার্মিনালে আসেন। এসে দেখেন, বাস বন্ধ। পরে তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বগুড়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এ জন্য তাঁকে অতিরিক্ত সময় ও ভাড়া গুনতে হয়। তিনি বলেন, ‘বগুড়া থেকে কিভাবে ঢাকা যাব জানি না। ’
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পিরব গ্রাম থেকে আসা যাত্রী আনন্দ কুমার জানান, এক আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন হয়ে তিনি ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা হন। এসে দেখেন ধর্মঘট। ধর্মঘটের বিষয়টি তাঁদের জানা ছিল না। বাস না পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে তিনি ভেঙে ভেঙে প্রায় তিন ঘণ্টা পর জয়পুরহাট পৌঁছেছেন। একই চিত্র দেখা গেছে অনেকের ক্ষেত্রে। বাস বন্ধ থাকায় চাপ বেড়েছে আন্ত নগর ট্রেনগুলোতে। ট্রেনের টিকিট মিলছিল না।
জয়পুরহাট জেলার পরিবহন নেতারা বলেছেন, তাঁদের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তাঁদের দাবি পূরণ হয়নি। এ কারণে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাকা হয়েছে।
আরো পড়ুন : রাজশাহীতে সমাবেশস্থলের পাশেই বিএনপির উৎসব