স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের মৃত্যুবার্ষিকী ৩ জানুয়ারি। ২০২১ সালের এই দিনে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। ২০২২ সাল থেকে বাংলা এই কথাসাহিত্যিকের নামে ‘রাবেয়া খাতুন সাহিত্য পুরস্কার’ প্রবর্তন করেছে। এদিনটি উপলক্ষে ‘রাবেয়া খাতুন স্মৃতি পরিষদ’ বিশেষ দোয়া মাহফিল ও এতিম এবং দুস্থদের মধ্যে খাদ্য বিতরণসহ বিভিন্ন কমৃসূচি গ্রহণ করেছেন।
গুনী এই লেখকের উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথাসহ চলচ্চিত্র ও নাট্য জগতেও বিচরণ ছিল। তার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘মেঘের পরে মেঘ’ জনপ্রিয় একটি চলচ্চিত্র। ‘মধুমতি’ এবং ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ও প্রশংসিত হয়েছে সব মহলে। রাবেয়া খাতুনের স্বামী প্রয়াত এটিএম ফজলুল হক ছিলেন দেশের চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রথম পত্রিকা সিনেমার সম্পাদক ও বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’ এর পরিচালক। ১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই এটিএম ফজলুল হকের সাথে পারিবারিকভাবে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। কথাসাহিত্যিক হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও রাবেয়া খাতুন এক সময় শিক্ষকতা করেছেন। সাংবাদিকতার সংগেও দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। ইত্তেফাক, সিনেমা পত্রিকা ছাড়াও তাঁর নিজস্ব সম্পাদনায় পঞ্চাশ দশকে বের হতো ‘অঙ্গনা’ নামের একটি মহিলা মাসিক পত্রিকা। তার প্রকাশিত পুস্তকের সংখ্যা একশ’রও বেশী। এর মধ্যে রয়েছে উপন্যাস, গবেষণাধর্মী রচনা, ছোটগল্প, ধর্মীয় কাহিনী, ভ্রমণ কাহিনী, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথা ইত্যাদি। রেডিও, টিভিতে প্রচারিত হয়েছে অসংখ্য নাটক, জীবন্তিকা ও সিরিজ নাটক। তার গল্পে নির্মিত হয়েছে একাধিক চলচ্চিত্র। রাবেয়া খাতুন উপন্যাস লিখেছেন পঞ্চাশটিরও বেশি, এযাবৎ কাল পর্যন্ত চার খণ্ডে সংকলিত ছোটগল্প সংখ্যায় চারশোরও বেশি। ছোটদের জন্য লেখা গল্প-উপন্যাসও সংখ্যায় কম নয়। রাবেয়া খাতুন বাংলাদেশের ভ্রমণসাহিত্যের অন্যতম লেখক। কর্মজীবনে অনেক মানুষের সান্নিধ্যে এসেছেন তিনি। উদ্বুদ্ধ হয়েছেন যাঁদের দ্বারা স্মৃতিমূলক রচনার মধ্য দিয়ে তাঁদের ব্যক্তিত্ব ও বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিত্বকে পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন। ছোটগল্প দিয়ে শুরু হলেও লেখক পরিচয়ে প্রথমত তিনি ঔপন্যাসিক। প্রথম উপন্যাস মধুমতী (১৯৬৩) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শক্তিমান কথাসাহিত্যিক হিসাবে পরিচিতি পান। ক্ষয়িষ্ণু তাঁতি সম্প্রদায়ের জীবনসংকট ও নাগরিক উঠতি মধ্যবিত্ত জীবনের অস্তিত্ব জিজ্ঞাসার মধ্যে ব্যক্তিকে আবিস্কার করেছিলেন রাবেয়া খাতুন এই উপন্যাসে। রাবেয়া খাতুন ভ্রমণসাহিত্য রচনাকে গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম হিসাবে বিবেচনা করেছেন বলে তাঁর ভ্রমণসাহিত্যের বইও অনেকগুলো। বেশ কিছু আত্মজৈবনিক স্মৃতিমূলক রচনা লিখেছেন। একাত্তরের নয় মাস (১৯৯০) বইয়ে লিখেছেন একাত্তরের শ্বাসরূদ্ধকর দিনগুলোর কথা।
সাহিত্যর্চচার জন্য পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৭), একুশে পদক (১৯৯৩), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৩), নাসিরুদ্দিন স্বর্ণ পদক (১৯৯৫), হুমায়ূন স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৯), কমর মুশতারী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৯৪), শের-ই-বাংলা স্বর্ণ পদক (১৯৯৬), ঝষিজ সাহিত্য পদক (১৯৯৮), লায়লা সামাদ পুরস্কার (১৯৯৯) ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৯)। ছোট গল্পের জন্য পেয়েছেন নাট্যসভা পুরস্কার (১৯৯৮)। সায়েন্স ফিকশন ও কিশোর উপন্যাসের জন্য পরস্কৃত হয়েছেন শাপলা দোয়েল পুরস্কার (১৯৯৬), অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার (১৯৯৮), ইউরো শিশু সাহিত্য পুরস্কার (২০০৩)। ছোটগল্প ও উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ণ হয়েছে প্রেসিডেন্ট (১৯৬৬), কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি (২০০৩), মেঘের পরে মেঘ (২০০৪), ধ্রুবতারা, মধুমতি (২০১০) ইত্যাদি।
টিভি নাটকের জন্য পেয়েছেন টেনাশিনাস পুরস্কার (১৯৯৭), বাচসাস (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) পুরস্কার, বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টাস এসোসিয়েশন মিলেনিয়াম এ্যাওয়ার্ড (২০০০), টেলিভিশন রিপোর্টাস এ্যাওয়ার্ড (২০০০)সহ তিনি এ যাবত অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।
রাবেয়া খাতুনের দুই পুত্র ফরিদুর রেজা সাগর বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লি., চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ছোট ছেলে ফরহাদুর রেজা প্রবাল এক সময়ের টেলিভিশনের জনপ্রিয় উপস্থাপক ও স্থপতি এবং বর্তমানে অষ্টেলিয়া প্রবাসী। বড় মেয়ে কেকা ফেরদৌসী বিশিষ্ট রন্ধনবীদ। বড় জামাতা মুকিত মজুমদার বাবু টেলিভিশন উপস্থাপক, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং চ্যানেল আই ও ইমপ্রেস গ্র“পের পরিচালক। ছোট জামাতা জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন বিশিষ্ট শিল্পপতি, চ্যানেল আই ও ইমপ্রেস গ্র“পের পরিচালক। বড় পুত্রবধু কনা রেজা বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা ও পানসুপারীর সত্ত¡ধিকারী। ছোট মেয়ে ফারহানা কাকলী সুগৃহিনী।
আরো পড়ুন : ৩ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার চ্যানেল আই এর অনুষ্ঠান সূচি