কেরানীগঞ্জে ধলেশ্বরী নদীর মোল্লাবাজার এলাকায় নির্মাণাধীন সেতুর কাজ আট বছরেও শেষ হয়নি। ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের দুই নভেম্বর পর্যন্ত চার দফা মেয়াদ বাড়িয়ে এখনো ৫০ ভাগ কাজ অসমাপ্ত করে কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ দিনেও সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জে কম সময় ও সহজে যাতায়াত করতে সড়ক পথ হলো কেরানীগঞ্জের মোল্লাবাজার ও বালুচর।
রাজধানী থেকে কেরানীগঞ্জ হয়ে মুন্সীগঞ্জের লাখ লাখ মানুষ মোল্লাবাজার এলাকা দিয়ে খেয়ায় ধলেশ্বরী পাড়ি দিয়ে মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে যাতায়াত করে থাকে। স্থানীয় সংসদ সদস্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালে এলজিইডি, কেরানীগঞ্জ উপজেলা দরপত্র আহ্বান করে। ধলেশ্বরী নদীর ওপর ২৫২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থ দুই লেন বিশিষ্ট সেতু নির্মাণের জন্য ৩৩ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরে সুরমা এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার চুক্তি ছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি দুই বছরে মাত্র দুটি পিলার করে নির্ধারিত সময় পার করে দেয়। ২০২০ সাল পর্যন্ত আবার দ্বিতীয় দফা মেয়াদ দেওয়া হয়। ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দুই বছরে করা হয় আরও তিনটি পিলার। পাঁচ বছরে করা হয় পাঁচটি পিলার। ১১টির মধ্যে পাঁচ বছরে পাঁচটি পিলার করায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ হতাশা প্রকাশ করেন এবং এলজিইডিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে কাজে গাফিলতির জন্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত সেতু নির্মাণকাজ সমাপ্ত করার আহ্বান জানান। তারপর ঢাকা জেলা এলজিইডি বিভাগ ঐ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তৃতীয় দফা মেয়াদকাল বেঁধে দিলেও সেতুর নির্মাণকাজের অর্জন মাত্র ৫০ শতাংশ। ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর পর্যন্ত আট বছরে মোট চার বার মেয়াদ বাড়ানো হলেও সেতু নির্মাণ না হওয়ায় কেরানীগঞ্জ ও সিরাজদীখানবাসীর তোপের মুখে পড়েছেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য।
কেরানীগঞ্জের পানগাঁও কন্টিনার নৌ পোর্টের আমদানি ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী শওকাত হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, সাত বছরে পদ্মা সেতু নির্মিত হলেও মোল্লাবাজার সেতুটি অদৃশ্য কারণে আট বছরে মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। বাকি কাজ করতে আরও কত বছর লাগবে তা এখনো অজানা। কোণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী জানান, ‘সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া সারা দেশে চলমান কিন্তু মোল্লাবাজার সেতুটি যথা সময় নির্মিত না হওয়ায় জনপ্রতিনিধি হিসাবে এলাকাবাসীদের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না, এটা খুবই লজ্জার কথা। চার দফা সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়ায় দায় এড়াতে পারে না ঢাকা জেলা এলজিইডি অধিদপ্তর।’
বালুরচর ও সিরাজদীখান এলাকার নবধারা কোম্পানির চেয়ারম্যান শাহ জাহান জানান, এলাকায় কোনো লোক অসুস্থ হলে এবং প্রসূতিদের বালুর চর থেকে সিরাজদীখান ১৫ কিলোমিটার রাস্তা বেশি ঘুরে রাজধানীর হাসপাতালে যেতে হয়। মোল্লাবাজার সেতুটি চালু হলে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে মাত্র ১৫ মিনিটে রাজধানীতে পৌঁছা সম্ভব হবে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী কাজী মাহমুদুল্লাহ ও প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, মোল্লাবাজার ধলেশ্বরী সেতু নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজ ২০১৬ থেকে ২০১৮, ২০১৮ থেকে ২০২০ এবং ২০২২ ও ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর মোট চার দফা মেয়াদ বাড়িয়েও আট বছরে সেতু নির্মাণ শেষ করতে পারেনি। এজন্য তারা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করে আসছে।
আরো পড়ুন : নৌকাই মহাপ্লাবন থেকে এ দেশকে বাঁচিয়েছে: রংপুরে নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী