আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে যাবেন সোহাগ, পাশে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত সালাউদ্দিনের

আন্তর্জাতিক খেলাধুলা পুরুষ প্রচ্ছদ বিনোদন মুক্তমত হ্যালোআড্ডা

স্পোর্টস রিপোর্টার : শুক্রবার বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। এই ইস্যুতে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন কী বলেন, সেটা জানতে গতকাল সকাল থেকে বাফুফে ভবনে মিডিয়া কর্মীদের ভিড়। দুপুর আড়াইটার দিকে সংবাদ মাধ্যমের সামনে হাজির হন বাফুফে বস। মাত্র তিন মিনিট স্থায়ী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নেরই ঠিকঠাক উত্তর দেননি সালাউদ্দিন। সোহাগের নিষেধাজ্ঞা জাতিকে লজ্জায় ফেলেছে কিনা জানতে চাইলে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলে তড়িঘড়ি করে উঠে চলে যান বাফুফে সভাপতি। এর আগে সোহাগ অন্যায়ের স্বীকার হয়েছেন বলে দাবি করেন বাফুফের এই শীর্ষকর্তা। তিনি বলেন, সোহাগ নাকি তার কাছে দাবি করেছে, এটা ফিফার এথিক্স কমিটির অবিচার। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোহাগ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সালিশি আদালতে (কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টস) যাবেন বলেও জানিয়েছেন সালাউদ্দিন।

মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরীকে পাশে বসিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, একটা খারাপ সংবাদের কারণে আজকে আমরা সবাই একত্রীত হয়েছি। বাফুফে সাধারণ সম্পাদক দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন। কালকে আমিও জানতে পেরেছি এটা।

কিছু ডকুমেন্ট পড়েছি, পুরোপুরি পড়তে পারিনি। নিষেধাজ্ঞা যখন দেখা হয়েছে, উনাকে (বাফুফেতেও) নিষিদ্ধ করা হয়ে গেছে। পরের জরুরি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম। সিনিয়র সহ-সভাপতিসহ তিন সহ-সভাপতি দেশের বাইরে আছেন, কাল পৌঁছাবেন। পরের পদক্ষেপ কী নেবো, পরশু মিটিং করে সবাইকে জানিয়ে দিবো।’ আপাতত ফিফার নিষেধাজ্ঞার চিঠিটাই অনুসরণ করছে বাফুফে। সালাউদ্দিন বলেন, ‘ফিফা বলেছে নিষিদ্ধ রাখতে, সেটাই করা হয়েছে। ওখানেই আছি আমরা। আরও বাদ বাকি কী পদক্ষেপ নেবো, সেটার জন্য আরও দুইদিন অপেক্ষা করতে হবে। সোমবার ফিফা খুলবে। জেনারেল সেক্রেটারির সঙ্গে আলোচনার পর আমরা নিজেরা সভা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।’ তদন্তের জন্য ফেব্রুয়ারিতে সোহাগসহ চারজন বেতনভুক্ত কর্মকর্তা জুরিখে গিয়েছিলেন। সালাউদ্দিন তখনই এমন কিছুর ইঙ্গিত পেয়েছিলেন বলে জানিয়ে বলেন, ‘ওরা যখন জুরিখে গেছে, তখনই শুনেছি কিছু চলছে। নৈতিক কমিটি যখন কাজ করছে, তখন কিছু একটা করবে ওরা।’ যদিও মাস খানেক আগে এই সোহাগকে পাশে বসিয়ে তাদের জুরিখ যাওয়ার ঘটনা জানতেন না বলে জানিয়েছিলেন তিনি। রাতেই সোহাগের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘সোহাগের সঙ্গে রাতে কথা হয়েছে। তিনি মনে করছেন, তার ওপর অবিচার করা হয়েছে। আদালতে যাবেন।’ এরপর সোহাগ ইস্যুতে ৫১ পাতার চিঠি নিয়ে এক প্রশ্নে সালাউদ্দিন বলেন, ‘ওরা কিন্তু আর্থিক বিষয় নিয়ে লেখেনি। আচরণবিধি ও নীতি এবং দায়ের কথা বলেছে। বোর্ড মিটিংয়ে কথা বলে জানাবো আমাদের।’ আর কোনও কথা বলতে চাননি সালাউদ্দিন, এমনকি সোহাগের নিষেধাজ্ঞা দেশের ফুটবলের জন্য লজ্জার কি না প্রশ্নে তিনি শুধু ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলে তড়িঘড়ি করে উঠে চলে যান।

আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে যাবেন সোহাগ
এদিকে ফিফার তদন্ত ত্রুটিপূর্ণ দাবি করে আইনজীবির মাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন বাফুফের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। এই বিবৃতিতে ফিফার এই রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতদুষ্টও বলা হয়। সোহাগের পক্ষ থেকে আইনি প্রতিষ্ঠান এ হোসেইন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘এই সিদ্ধান্ত শুধু ত্রুটিপূর্ণই নয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট রায় দেওয়া হয়েছে।’ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে (সিএএস) এ নিয়ে আপিল করার কথাও জানিয়েছেন সোহাগের আইনজীবী। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘শুনানিতে বাফুফে টাকাপয়সা লেনদেনের জন্য ফিফার দেওয়া অনুমোদনের নথিপত্র পেশ করেছে। কিন্তু অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার অবৈধভাবে এসব গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র আমলে নেয়নি এবং ১৪ই এপ্রিল ২০২৩-এ রায়টি অনুমোদন করে। আর এতেই স্পষ্ট হয় সিদ্ধান্তটি শুধু ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ নয় বরং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এই রায় দেওয়া হয়েছে।’ বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়, এই রায়ে ফিফার অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার বুঝেছে যে ফিফার তহবিলের কোনো অপব্যবহার করা হয়নি। আবু নাঈম সোহাগের জমা দেওয়া কাগজপত্রেও কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি অ্যাডজুডিকেটরি কমিটি এমন কথাই বলেছিল বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়। অ্যাডজুডিকেটরি কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়, তিনটি বিষয় নিয়ে অনিয়মের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ১. অর্ডার করা মালামাল পাওয়া যায়নি এমন অভিযোগ নেই। ২. বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ দেওয়া হয়েছে। ৩. ফিফার দেওয়া তহবিল থেকে তাদের অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ‘ফিফার পাঠানো তহবিলের অপব্যবহার করা হয়েছে কিংবা বেঁধে দেওয়া নিয়মের মধ্যে ব্যবহার করা হয়নি, এমন কোনো ইঙ্গিত নেই রায়ে। একইভাবে ফিফা ও বাফুফে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই প্রমাণও নেই। এর পাশাপাশি ফিফার অ্যাডজুডিকেটরি কমিটি বলেছে, ফাইলে এমন কিছুই নেই যাতে বোঝা যায় আবু নাঈম সোহাগ জালিয়াতি করেছেন কিংবা দরপত্র নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। বরং দরপত্রটাই ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তথ্যপ্রমাণ এড়িয়ে সম্পূর্ণ অনুমানের ওপর অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার জানিয়ে দেয়, বাফুফের প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি করা হয়েছে। আর এতেই প্রমাণিত হয় সিদ্ধান্তটি শুধু ভুল ও অসংগতিপূর্ণ নয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।’ সোহাগের আইনজীবীর এই বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ‘শুনানির সময় গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বিবেচনা করা এড়াতে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অনুমাননির্ভর এই রায় অনুমোদন করেছে ফিফার অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার। এ ছাড়া সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছর নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ জরিমানা করা হয়েছে।’ ফিফার সমালোচনা করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার যদি নথিপত্রগুলো স্বাধীন ও ন্যায্যভাবে যাচাই-বাছাই করত, বিশেষ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ফিফার অনুমোদন নিয়েই খরচের যেসব নথিপত্র দেওয়া হয়েছে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া সিদ্ধান্তটি অনুমোদন পেত না। দেখে মনে হয়েছে, অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বারের কাজই যেন ফিফা ইনভেস্টগটরি চেম্বারের সিদ্ধান্তকে অনুমোদন দেওয়া, যেখানে স্বাধীন ও বিচারিকভাবে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়নি।’ বিবৃতির শেষে আপিল করার কথা জানানো হয়েছে, ‘নিয়ম অনুযায়ী জনাব সোহাগ এই পক্ষপাতদুষ্ট রায়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে (সিএএস) আপিল করবেন। এটি একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান।’

আরো পড়ুন : প্রতিবেশীদের অপহরণ মামলার আসামি করে ১০ বছর ধরে গোপনে প্রেমিকের সঙ্গে সংসার

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *