♦ নেতা-কর্মীদের মামলা ও কারামুক্ত করা ♦ ব্যর্থতা কাটিয়ে আন্দোলনে সফল হওয়া, দল সুসংগঠিত করা ♦ কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করতে পারেনি বিএনপি। তাদের কোনো কৌশলই ঠেকাতে পারেনি নির্বাচন। আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে এখন নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দলটি। হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শত শত মামলা। অধিকাংশ সিনিয়র নেতা কারাগারে। মামলার কারণে এখনো অনেক নেতা-কর্মী বাড়িঘর ছাড়া। মনোবল ভেঙেছে অনেকের।
এ অবস্থায় নেতা-কর্মীদের মামলা ও কারামুক্ত করা, ব্যর্থতা কাটিয়ে আন্দোলনে সফল হওয়া, দল সুসংগঠিত করা, কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা এখন মূল চ্যালেঞ্জ।
বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী বলছেন, ২০১৩ সাল থেকে তিন মেয়াদে লাগাতার আন্দোলন করছে বিএনপি। কোনো মেয়াদেই লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়নি। উল্টো নানাভাবে কোণঠাসা হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মেলেনি। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক শীর্ষনেতা কারাবন্দি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ছিল দলটির ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ। ঘুরে দাঁড়ানো দূরে থাক, আন্দোলনে ব্যর্থতায় দলের অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা মনে করেছিলেন, নির্বাচনের পর হয়তো গণতন্ত্রকামী পশ্চিমা দেশগুলো সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্ত হচ্ছে উল্টো। বিদেশিরা এখন বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করার কথা বলছে। সব মিলিয়ে দিন দিন বিএনপির নেতা-কর্মীরা আরও বেশি হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে বিএনপির কয়েক শ নেতা-কর্মীকে সাজা দিয়েছেন আদালত। সাজাপ্রাপ্তের সিংহভাগ ফেরারি।
আত্মসমর্পণ করলে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে হবে। তাই এ ঝুঁকিও নিতে চাচ্ছেন না কেউ। তারা বলছেন, এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে কমপক্ষে এক বছর লাগবে। বিএনপির মূল চালিকাশক্তি বিশেষ করে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং জেলা ও মহানগরের সক্রিয় নেতারাই জেলজুলুমের শিকার। নেতা-কর্মীরা বলছেন, এ মুহূর্তে দলকে সুসংগঠিত করা জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে দলের কাউন্সিল হচ্ছে না। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, হান্নান শাহ, তরিকুল ইসলাম, সাদেক হোসেন খোকাসহ অনেক সিনিয়র নেতা ইতোমধ্যে মারা গেছেন। বার্ধক্যের কারণে অনেকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে সফল হওয়ার জন্য সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়ে দলকে চাঙা করা উচিত। দলটির সর্বশেষ জাতীয় নির্বাহী কমিটির কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। আগামী ১৯ মার্চ কাউন্সিলের আট বছর পূর্ণ হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে।
জানা যায়, মাঠপর্যায়ের নেতারা তাকিয়ে রয়েছেন কেন্দ্রের দিকে। আর কেন্দ্রের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে। পরবর্তী করণীয় নিয়ে ৭ জানুয়ারির পর কয়েক দফা স্থায়ী কমিটির সভায় সারা দেশের কর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে শিগগিরই ঢাকাসহ বিভাগীয় সমাবেশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও একই সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে বদ্ধপরিকর দলের হাইকমান্ড। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নেই।
সামগ্রিক প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘স্বীকার করছি একদলীয় সরকারকে আমরা অপসারণ করতে পারিনি। তবে জোর গলায় বলতে পারি ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনের মাধ্যমে সরকারের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেছে জনগণ। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে কারও কোনো সন্দেহ নেই। দেশের মানুষ এ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এটাই আমাদের বড় অর্জন। তারা বন্দুক, গ্রেনেড, বুলেট, টিয়ার গ্যাসের জোরে ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে অনেকে বুকের রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে আছি, থাকব। গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকারকে পরাজিত করব।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপি হতাশ নয়। সংগঠনও শক্তিশালী। বিএনপি আন্দোলন আরও জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অচিরেই আমরা সমমনা জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
আরো পড়ুন : এবার উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাল