আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্য

আন্তর্জাতিক জনদুর্ভোগ প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

♦ কঠিন চ্যালেঞ্জে সামরিক শাসক ♦ বাংলাদেশ সীমান্তে বাসিন্দাদের উৎকণ্ঠা ♦ সতর্ক অবস্থানে বিজিবি

উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। আরাকান আর্মির সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ চলছে মিয়ানমার সেনাদের। কয়েকদিন ধরে গুলি ও মর্টারের শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে রাখাইন। ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে মিয়ানমার পরিস্থিতি। কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছে তিন বছর আগে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসিকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসা মিয়ানমার সামরিক সরকার। এদিকে সংঘাতের আঁচ মিয়ানমারের সীমান্ত ছাপিয়ে বাংলাদেশেও লাগছে বেশ কয়েকদিন ধরে। মর্টার শেল এসে পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও। এতে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কাও করছেন অনেকে। সীমান্তের ওপারে প্রবল গোলাবর্ষণের কারণে বান্দরবানের ঘুমধুম, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও দৌছড়ি ইউনিয়নে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও মর্টার শেল নাইক্ষ্যংছড়িতে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ও ধানি জমিতে এসে পড়েছে। ঘুমধুম সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছাড়ছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মিয়ানমার সীমান্ত থেকে প্রতিনিয়ত গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। অবিস্ফোরিত মর্টার শেলও এসে পড়েছে। সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছে। পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ানক হয়ে উঠছে। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক অভিভাবক। মিয়ানমারে রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একের পর এক গোলা এসে পড়ায় আতঙ্কে চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছেন কৃষকরা। ভাটা পড়েছে ব্যবসাবাণিজ্যেও।

ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা : আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি-সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে সশস্ত্র সংঘর্ষ গতকালও অব্যাহত ছিল। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সীমানার কাছাকাছি কয়েক দফা সামরিক হেলিকপ্টার ব্যবহার করে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীকে টহল দিতে দেখা গেছে। এদিকে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গেরিলা গ্রুপগুলোর সংঘাতকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার জন্য সীমান্তের ওপারে নাফ নদের কাছাকাছি বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা সমবেত হয়ে আছে। তবে বিজিবি বলেছে, সীমান্তে নি-িদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা আরোপ করা হয়েছে। টহল বাড়ানো হয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবির পূর্ণ সক্ষমতা রয়েছে। এদিকে গত তিন-চার দিনে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার চেষ্টাকালে মিয়ানমারের কয়েকজন উপজাতীয় নাগরিককে আটক করে সেদেশে পুশব্যাক করেছে বিজিবি। আটকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিজিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রচণ্ড গোলাগুলির মুখে সেখানে থাকা কঠিন হয়ে পড়ায় তারা বাংলাদেশে চলে আসে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় এ দেশে রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি কড়া সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন স্থানীয়দের আতঙ্কিত না হয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সীমান্তে শান্তি রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনী সজাগ রয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে বিপজ্জনক এলাকায় বসবাসকারীদের প্রয়োজনে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে।

পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন বলেছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পুলিশি (নিরাপত্তা) ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে ও জোরদার করা হয়েছে। ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় মর্টার শেলের শব্দ শোনা গেছে। এলাকার লোকজনের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আইনশৃঙ্খলা (পরিস্থিতি) স্বাভাবিক আছে। জনগণকে নিরাপদ রাখার সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের থেমে থেমে যুদ্ধ চলছিল। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে হঠাৎ করেই যুদ্ধের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে সীমান্তবর্তী প্রদেশে সামরিক সরকারের লড়াই এখন তুঙ্গে। রাখাইন অঞ্চলে আরাকান আর্মি যেভাবে শক্তি বাড়িয়ে বিভিন্ন এলাকা দখলে নিয়েছে, তাতে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। জানা গেছে, তিন বছর আগে মিয়ানমারে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসিকে হটিয়ে সামরিক সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে অস্থিরতা বিরাজ করছে দেশটিতে। জান্তাবিরোধী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ জোরালো হতে থাকে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। শক্তি বাড়িয়ে সংগঠিত হতে থাকে মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন। থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী বর্তমানে দেশটির শান ও রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। গত তিন বছরে এসব গোষ্ঠী মিয়ানমারে ৩০০টির বেশি সামরিক চৌকি এবং ২০টি শহর দখল করে নিয়েছে। সহসা এই সংঘাত শেষ হওয়ার সুস্পষ্ট নিশানা এখনো দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছেন দেশটির সামরিক শাসক।

আরো পড়ুন : জানুয়ারিতে এক দিনও নির্মল বাতাস পায়নি ঢাকাবাসী, ছিল ৪০ গুণ বিষাক্ত

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *