বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : চারদিন পর খোঁজ মিলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খালেদ হাসানের। নিজ বাসা থেকে হঠাৎ ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়া খালেদকে নিয়ে গত কয়েকদিন ক্যাম্পাসে সব মহলের নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ সেশনের এই শিক্ষার্থী সুস্থভাবে ফিরে আসায় স্বস্তি মিলেছে। তবে তিনি এই কয়দিন কোথায় ছিলেন, কেউ তাকে অপহরণ করেছিল, নাকি অন্যকিছু হয়েছিল তা এখনো পরিষ্কার নয়। খালেদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে আপাতত কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এর দায়িত্ব পালন করা এই শিক্ষার্থীকে গুম করা হয়েছিল বলেই জানানো হয়েছে প্ল্যাটফর্মটির পক্ষ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এক বিজ্ঞপ্তিতে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। জনসংযোগ দপ্তর থেকে গতকাল পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খালেদ হাসান গত ২০শে ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। তিনি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। হলে ফিরে আসার পর রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
খালেদ হাসানকে দেখতে বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান। তিনি তার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজ নেন। তিনি খালেদ হাসানের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন, তবে তার সম্ভাব্য নিখোঁজ নিয়ে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে নানারকমের আলোচনা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সর্বাত্মক তৎপরতার পরও কীভাবে চারদিন তার ব্যাপারে ন্যূনতম কোনো তথ্য পাওয়া গেল না- তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।
শুক্রবার খালেদ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা শুরু হয়। সেদিন থেকেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের এ নিয়ে লেখালেখি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনদিনেও তার কোনো খোঁজ না মিলায় মঙ্গলবার থেকে সোচ্চার হন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারাও দ্রুত তার সন্ধানের দাবিতে সরব হন।
মঙ্গলবার খালেদ হাসান রাত সাড়ে ১১টায় শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে প্রবেশ করেন। হলের শিক্ষার্থীরা তাকে তার কক্ষে নিয়ে যান। তবে শুরু থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন এই শিক্ষার্থী। কাছের বন্ধুদেরকেও তিনি তার নিখোঁজের ব্যাপারে পরিষ্কার কিছু বলছেন না। পরে শারীরিক নাজুক অবস্থা দেখে তাকে রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন।
চারদিন কোথায় ছিলেন, কারা তাকে ‘অপহরণ’ করেছেন বা কিসের মধ্যে দিয়ে গেছেন তার ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের সঙ্গে খালেদের কথা হয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার রাতেই তিনি কথোপকথনের পাওয়া তথ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরেন। কাদের বলেন, শুক্রবার বিকালের দিকে টিএসসি থেকে রিকশায় করে দোয়েল চত্বরের দিকে যাওয়ার সময় রিকশাতেই অজ্ঞাত কারণে সে সংজ্ঞ হারায়। পরবর্তীতে যখন জ্ঞান ফিরে পায় সে নিজেকে সুনামগঞ্জের একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে মাইক্রোবাসে দেখতে পায়। এ সময় তার সঙ্গে আরও ২-৩ জন ছিল। পরবর্তীতে সে আবারো সংজ্ঞা হারায়।
দ্বিতীয়বার যখন খালেদ জ্ঞান ফিরে পায় তখন নিজেকে পঞ্চগড়ের কোনো একটা জায়গায় দেখতে পায়। তখনও মাইক্রোবাস চলমান ছিল। তৃতীয়বার মঙ্গলবার যখন তার জ্ঞান ফিরে আসে, তখন সে নিজেকে বরিশালের এক রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে। পরে তাকে কেউ একজন গাড়িতে তুলে দিলে তিনি ঢাকা পৌঁছে হলে ফিরেন। খালেদের মানসিক অবস্থা ভালো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী তার সম্ভাব্য নিখোঁজ নিয়ে মিশ্র মতামত জানিয়েছেন। অনেকে গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য তাকে পরিকল্পিতভাবে গুম করার চেষ্টা হতে পারে বলে মনে করেন। তারা পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত সত্য সবার সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি রহস্যজনক বলছেন অনেক শিক্ষার্থী। এ নিয়ে খালেদের দেয়া ব্যাখ্যাও সন্তোষজনক নয় বলে তাদের দাবি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও খালেদের নিখোঁজ ও সন্ধান লাভের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য জানানো হয়নি। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, খালেদ কিছুটা সুস্থ হলে তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এদিকে গতকাল দুপুরে মেডিকেলে তার খোঁজ নিতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, সে শঙ্কামুক্ত হলেও শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নয়। ফলে তার সঙ্গে কথা বলার বা তার বক্তব্য জানার সুযোগ হয়নি। ডাক্তাররা আমাদের জানিয়েছেন, তার কিছুটা স্মৃতি বিভ্রাটের সমস্যা দেখা দিয়েছে। খালেদের চিকিৎসার জন্য তিন সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী নির্দেশনা দেবেন।
আরো পড়ুন : বিদেশে থাকা মেধাবী শিক্ষক-গবেষকদের ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার