সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে নিজ নিজ দাবিতে অনড় থাকলেন ৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা।
শনিবার এসব বৈঠকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী এবং আমার বাংলাদেশ পার্টি, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।
এ পরিস্থিতিতে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন আদৌ সম্ভব কি না-ইইউ প্রতিনিধি দল এমন প্রশ্নও তুলেছে বলে জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি দলের নেতারা।
অন্যান্য দলের নেতারা বলেন, রাজনৈতিক সংকট সমাধানের উপায় নিয়েও তারা আলোচনা করেন। তবে দলগুলো যদি যার যার অবস্থানে অনড় থাকে, সে ক্ষেত্রে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে কি না এমন শঙ্কাও প্রকাশ করেন ইইউ প্রতিনিধিরা।
একটি দলের নেতা জানান, সভায় প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বলা হয় সিদ্ধান্ত হলে ইইউ ১৮০ পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে পাঠাবে। তবে এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। সময়মতো ভিসা দিতে হবে।
এ ছাড়া আগামী ২৩ জুলাই ইইউ’র মানবাধিকার সংক্রান্ত আরও একটি দল বাংলাদেশে আসছে সভায় জানানো হয়।
শনিবার ধারাবাহিকভাবে পাঁচটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ইইউর প্রাক-নির্বাচনি অনুসন্ধানী প্রতিনিধিদল। দুপুর ১২টায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
বনানীর হোটেল শেরাটনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এর আগে সকাল ৯টায় তারা বিএনপির সঙ্গে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন।
বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যালয়ে সকাল ১০টায় বৈঠক হয়। দলটির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের নেতৃত্বে মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ তিনজন ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।
একই জায়গায় দুপুর আড়াইটায় জামায়াতে ইসলামী এবং বিকাল ৪টায় আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সঙ্গে বৈঠক হয়। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং এবি পার্টির নেতৃত্ব দেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার ব্যাপারে তারা (ইইউ) আমাদের অঙ্গীকার চেয়েছেন। তারা বাংলাদেশের সংবিধান, সার্বভৌমত্ব, আইনি ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চান। একই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তাও চেয়েছেন। আমরাও বলেছি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সম্ভব।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন জনগণের ভোটের মাধ্যমে সম্ভব হবে কিনা তা ইইউ প্রতিনিধিদল জানতে চেয়েছে বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এর ওপর ভিত্তি করে সারা বিশ্ব আজ বাংলাদেশের দিকে নজর দিয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের (ইইউ) কনসার্ন প্রকাশ করেছে, এজন্য এসেছেন। আমাদের পক্ষ থেকে সব সময় বলে আসছি, শুধু আমরা না, বাংলাদেশের জনগণ বলছে, বিশ্ববিবেক বলছে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, সম্ভবও নয়।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ইইউ এ দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। এটা আমাদেরও চাওয়া। দেশের মানুষেরও চাওয়া। আমরা এ কথাই তাদের বলেছি। তিনি বলেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অনেক বেশি। এক্ষেত্রে তারা কি করেন তাই দেখার বিষয়।
মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান এ দেশের রাজনীতিবিদদেরই করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন আলাপ-আলোচনায় বসা। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, সফররত ইইউ প্রতিনিধিদল আগামী জাতীয় নির্বাচনে ডেলিগেট পাঠানোর বিষয়ে আমাদের মতামত জানতে চেয়েছে। আমরা উত্তরে বলেছি, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হলে পর্যবেক্ষকদের স্বাগতম, আর এ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাদের আসা সমীচীন হবে না।
তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচন কিভাবে স্বচ্ছ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুফল কেউ পাবে না বলে জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। দলটির নেতারা ইইউ প্রতিনিধিদলকে বলেন, নির্বাচনি কাঠামো পরিবর্তন না হলে জনরায় প্রতিফলিত হওয়ার মতো সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কখনোই নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ মূল্যায়ন করতে রিকার্ডো চেলারির নেতৃত্বে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্যের একটি প্রাক-তথ্যানুসন্ধানী প্রতিনিধিদল রোববার ভোরে বাংলাদেশ আসে। ২৩ জুলাই পর্যন্ত তারা ঢাকায় থাকবেন। এ সময় প্রতিনিধিদলটি সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবে।
ইতোমধ্যে সরকারের মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেছেন তারা। ইইউ প্রতিনিধিদল যে মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেবে, তার ওপর ভিত্তি করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন (ইওএম) পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে ২০১৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠায়নি।
আরো পড়ুন : অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গুমৃত্যু ছাড়াল ১০০