খুলনা ব্যুরো : খুলনার কয়রা উপজেলা আমাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম জুয়েল ও তার বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত ও মারপিটের শিকার হয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ দারুল হুদা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন, সার্ভেয়ার মো. আক্তারুজ্জামান ও অফিস সহকারী মো. রিয়াদ হোসেন। এ ঘটনায় খুলনা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন।
মারপিটের শিকার আক্তারুজ্জামান বলেন, আমাদী ইউনিয়নের সোনাখালী খালের বাৎসরিক ইজারা বন্দোবস্তের জন্য গত ৩ এপ্রিল সোমবার আমরা খালটির সীমানা নির্ধারণের জন্য যাই। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ও অবগত ছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর ইউপি সদস্য মো. মঈনুল ইসলাম লিটন তাদের সুবিধামতো খালের সীমানা নির্ধারণের জন্য চাপ দিতে থাকে। এ সময় চেয়ারম্যান জুয়েলসহ আরও ৫০/৬০ জন উপস্থিত ছিলেন। তারাও মেম্বার লিটনের চাহিদা অনুযায়ী স্থান থেকে সীমানা নির্ধারণের জন্য চাপ দিতে থাকে।
বিষয়টি নিয়ে আমরা সরকারি কাজে আমাদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি উল্লেখ করলে তারা ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান জুয়েল, মেম্বার লিটন, স্থানীয় শাহিনুর ইসলাম, আল মামুন, জাহাঙ্গীর মোড়ল, মহাসিন সানা, নাঈমুর রহমান, লুৎফর মোড়ল, নুর ইসলাম গাজী, আব্দুল্লাহ, মগবার আলী মোড়ল, আজগর, ছলেমান, রাজুসহ কয়েকজন আমার ওপর হামলা করে। এ ছাড়াও অফিস সহকারী রিয়াদকে বেধড়ক মারপিট করে এবং সরকারি কাজ বাস্তবায়নে বাধা দেয়, বলেন আক্তারুজ্জামান।
তিনি আরও বলেন, এ সময় উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ দারুল হুদা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন আমাদেরকে রক্ষা করতে আসলে দুর্বৃত্তরা তাদের ওপরও চড়াও হলে স্থানীয় কয়েকজন লোক তাদেরকে সরিয়ে নিয়ে যায়। তাদেরকে মারতে না পেরে চেয়ারম্যান ও তার বাহিনী গালিগালাজ শুরু করে। এ সময় আমার ফোন দিয়ে একজন পুরো ঘটনা ভিডিও করছিল। চেয়ারম্যানের লোকজন তারসহ অন্যদের মোবাইলও ছিনিয়ে নেয়।
অফিস সহকারী রিয়াদ হোসেন বলেন, মারপিট করার পর আমাদের অবরুদ্ধ করে তাদের পাটনিখালী পূর্ব পাড়া মৎস্যজীবী সমিতির পক্ষে প্রতিবেদন দিতে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেন। এক পর্যায়ে আমরা সেখান থেকে সরে আসি।
উপজেলা প্রকৌশলী দারুল হুদা জানিয়েছেন, খুলনা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই খালের তদন্ত করতে যাই। সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল ও তার অনুসারীরা বিভিন্ন অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। তাদের কথা না মানায় তাদের লোকজন সার্ভেয়ার ও অফিস সহকারীকে মারধর করে সেখান থেকে বের করে দিতে চেষ্টা করেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে সকলে চলে যান। বিষয়টি ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মমিনুর রহমান বলেন, ঘটনাটি জানার পর উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার, চেয়ারম্যান ও সার্ভেয়ারকে নিয়ে গত মঙ্গলবার আমার কার্যালয়ে বসেছিলাম। যে ঘটনা ঘটেছে খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে সার্ভেয়ার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম জুয়েল বলেন, সেখানে কাউকে মারপিট করা হয়নি। খালের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়। পরে সেটি মীমাংসাও হয়ে গেছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা দেওয়া হচ্ছে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ইচ্ছা করলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।
আরো পড়ুন : অষ্টমবারের মতো বাড়লো হজের নিবন্ধনের সময়