বেশ কয়েকটি ইসরাইলি মিডিয়া দাবি করেছে যে, হিজবুল্লাহ ও হামাসের সামরিক কৌশল ও সক্ষমতাই ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইওএফ) কঠোর প্রতিরোধের সম্মুখীন করছে। যা তাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
ইসরাইলি নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্নেল কোবি মারম দেশটির চ্যানেল থারটিনকে বলেন, হিজবুল্লাহর রকেট শক্তিমত্তা এবং নেতৃত্ব ইসরাইলের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, লেবাননে স্থল অভিযানে ইসরাইলের জন্য বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে এবং আগের ভুল বিশ্লেষণের কারণে আরও বেশি বাজেট নির্ধারণের প্রয়োজন হচ্ছে।
ইসরাইলি মিডিয়াগুলো আরও জানাচ্ছে যে, লেবানন থেকে অব্যাহত গোলাবর্ষণের ফলে সীমান্তবর্তী ইসরাইলি সামরিক স্থাপনাগুলোতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সংকট
গাজা ও লেবাননে হামাস ও হিজবুল্লাহর কার্যক্রম ইসরাইলি সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভাজন গভীরতর করছে।
ইসরাইলি সংবাদ সংস্থা ওয়ালার সামরিক প্রতিবেদক আমির বোহবট সম্প্রতি ইসরাইলের উত্তর ও দক্ষিণ কমান্ডের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকে ‘অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। যা হিজবুল্লাহ ও হামাসের সঙ্গে স্থল যুদ্ধে কৌশলগত পরিবর্তনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। এই কৌশলে বিস্ফোরক ব্যবহারের মাধ্যমে ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।
ইসরাইলি সামরিক কাঠামোতে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ ফাঁক’ রয়েছে উল্লেখ করে বোহবট জানিয়েছেন, উদাহরণস্বরূপ- গাজার একটি সাম্প্রতিক ঘটনায় ২৫২তম বিভাগের অভিজ্ঞ রিজার্ভ সেনারা বিশেষ ইউনিটের পর্যাপ্ত সহায়তা না পেয়ে একটি ভবনে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এক রিজার্ভ কর্মকর্তা সে সময় মন্তব্য করেন, কিছু কাজ বাস্তবতা বিবর্জিত এবং উচ্চপদস্থ নেতারা প্রায়ই এই বিষয়টা উপেক্ষা করেন।
এদিকে ড্রোন হামলার সম্ভাব্য হুমকির মধ্যে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার ছেলে আভনের আসন্ন বিবাহ বিলম্বিত করেছেন।
এ বিষয়ে ইসরাইলি সংবাদ সংস্থা শ্রুগিম জানিয়েছে, নেতানিয়াহু বিশেষ করে লেবানন, ইরাক এবং ইয়েমেন থেকে সম্ভাব্য ড্রোন হামলা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।
হিজবুল্লাহর অটল প্রতিরোধ
ইসরাইলি মিডিয়া জানিয়েছে, তাদের বাহিনী হিজবুল্লাহর দৃঢ় প্রতিরোধে হতবাক হয়েছে। কারণ গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা সীমান্তে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছে এবং ধারাবাহিক ক্ষয়ক্ষতি ঘটাচ্ছে।
এ প্রেক্ষাপটে ইসরাইলি দখলদারিত্বের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের সংঘর্ষ বন্ধ করে চুক্তির জন্য আলোচনার দাবিও ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
ইসরাইলের সংবাদপত্র মারিভ স্বীকার করেছে যে, হিজবুল্লাহ দীর্ঘমেয়াদি চাপ মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে এবং ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে, যেমন- সাফেদ ও হাইফাতে ধারাবাহিকভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ নিয়ে গাজা ডিভিশনের সাবেক কমান্ডার মেজর জেনারেল (রিজার্ভ) গাদি শামনি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচনা করে বলেন, তিনি (নেতানিয়াহু) মূলত জনগণ ও সেনাদের থেকে বিচ্ছিন্ন।
শামনি দাবি করেন যে, এই যুদ্ধ বন্ধ এবং বন্দিদের মুক্ত করাই এখন ইসরাইলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
এদিকে হিজবুল্লাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বলেই ঘোষণা করেছে এবং ইসরাইলের দেওয়া শর্তে কোনো যুদ্ধবিরতি মানবে না বলেও জানিয়েছে।
সম্প্রতি হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমরা শক্তির অবস্থান থেকে আলোচনা করি এবং যুদ্ধক্ষেত্রই শেষ পর্যন্ত ফল নির্ধারণ করবে’।
এ বিষয়ে ইসরাইলি উত্তরাঞ্চলীয় বাহিনীর সাবেক কমান্ডার নোয়াম তিবন জানিয়েছেন, লেবাননে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলের প্রায় ৮০০ জন সৈন্য নিহত ও প্রায় ১২,০০০ জন আহত হয়েছেন এবং অনেকেই পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগছেন।
তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘আমরা একটি পুরো বিভাগের মানসম্পন্ন জনবল হারিয়েছি এবং আমাদের আরও তিনটি অতিরিক্ত বিভাগ দরকার। তা না হলে আমরা ইসরাইলকে রক্ষা করতে ব্যাপক সমস্যায় পড়ব’।
জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদন
এ বিষয়টিকে স্বীকার করে সোমবার জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে প্রতিদিনই ইসরাইলি সৈন্যদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
সাংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সেথ ফ্রান্টজম্যানের এক বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসরাইলি বাহিনী হিজবুল্লাহর কমান্ড এবং কন্ট্রোলকে দুর্বল করার জন্য আঘাত হানলেও তা সফল হয়নি এবং হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব এখনও কার্যকর।
ফ্রান্টজম্যান তার বিশ্লেষণে আরও উল্লেখ করেন, হামাস ও হিজবুল্লাহ কমান্ডারদের হত্যার পরেও, এমনকি সংগঠন দুটির নেতারা নিহত হওয়ার পরেও, তাদের লোকেরা এখনও নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। যা ইসরাইলের সামরিক অভিযানকে কৌশলগতভাবে ব্যর্থ করে তুলছে।
সূত্র: আল-মায়াদিন
আরো পড়ুন : ৩০ অক্টোবর ২০২৪, বিরামপুরের যত খবর