গাজা উপত্যকা এখন ঘন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। অঞ্চলটি বর্তমানে খাদ্য, জ্বালানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সব সুবিধার বাইরে। এরমধ্যেই এবার হামাসের টানেলগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল।
টানেলগুলো হামাসের সংরক্ষাণাগার ও প্রয়োজনীয় পোর্টাল হিসাবে কাজ করে। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বাঙ্কার বাস্টার নামে পরিচিত একটি শক্তিশালী ধরনের বোমা মোতায়েন করে উত্তর-পশ্চিম গাজার টানেলগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। যদিও হামলার খবর যেসব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোকে যথাযথভাবে প্রমাণ করা যায়নি।
বাঙ্কার বাস্টার কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে
লন্ডন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউজের ইসরাইলের বিশেষজ্ঞ ইয়োসি মেকেলবার্গ আল জাজিরাকে বলেছেন, বাঙ্কার বাস্টারগুলো ‘বেশ শক্তিশালী আর ভয়ংকর গোলাবারুদ’। বোমাগুলো বিস্ফোরণের আগে মাটির গভীরে প্রবেশ করতে পারে। আর এটি কঠিন লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতেও সক্ষম।
অস্ত্রটি ‘স্থল অনুপ্রবেশ যুদ্ধাস্ত্র’ নামেও পরিচিত। আর এটি মোটামুটি দুটি বিস্তৃত ভাগ রয়েছে।
প্রথম ধরনের অস্ত্রে একটি শক্তিশালী নাক থাকে। তাই নিজেই নিজের প্রভাব থেকে বেঁচে যায় এই বোমা। আর এর ওজন লক্ষ্যে গভীরে পৌঁছানোর গতি দেয়। আর এর বিলম্বিত ফিউজ এটিকে বিস্ফোরণের আগে মাটি বা কোনো কাঠামোর মধ্যে প্রবেশ করার সুবিধা দেয়।
এর দ্বিতীয় ধরনে দুটি চার্জ বা বোমা থাকে। প্রথম চার্জটি থাকে ছোট। এটি লক্ষ্যবস্তুতে একটি গর্ত করতে ব্যবহৃত হয়। যার কারণে বোমা অথবা ক্ষেপণাস্ত্র অক্ষতভাবে অতিক্রম করতে পারে। এরপর প্রধান অথবা দ্বিতীয় ধরনের চার্জটি ভেতরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটায়।
এই অস্ত্র কোথায় পেয়েছে ইসরাইল
ইরানের ভূগর্ভস্থ টানেল ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সুবিধাগুলোতে আক্রমণ ও ধ্বংস করা এখন ইসরাইলের বিমানবাহিনীর মূল লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্যে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার করছে তারা। বাঙ্কার বাস্টারগুলো সাধাণরত ইসরাইলে অথবা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করা হয়।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নতুন জিবিইউ-৭২ মডেলের অনুরোধ করেছিল ইসরাইল। এটি বাঙ্কার বাস্টারের সবচেয়ে উন্নত মডেল। আর এই অস্ত্র মাটির ৩০ মিটার (১০০ ফুট) অথবা ৬ মিটার (২০ ফুট) কংক্রিট ভেদ করতে সক্ষম। আর এ সময় এটি আশপাশের যেকোনো কিছুকে বিলুপ্ত করে ফেলতে পারে।
ইসরাইল যে কারণে এই অস্ত্র ব্যবহার করবে
হামাসের ভূগর্ভস্থ অবস্থানগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে ইসরাইল বাঙ্কার বাস্টারের ব্যবহার করবে। থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউজের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা প্রোগ্রামের একজন সহযোগী ফেলো ইয়োসি মেকেলবার্গ বলেন, ২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধে হামাসকে আক্রমণের সময় ইসরাইলের সেনারা সুড়ঙ্গে আটকে পড়ে নিহত হয়েছিল।
আর তাই ঝুঁকি এড়াতে এবার ইসরাইলের সেনাবাহিনী বাঙ্কার বাস্টার ব্যবহার করে দূর থেকে আক্রমণ চালাবে। এ ধরনের অস্ত্র উঁচু ভবন ও টাওয়ার ধ্বংস করতেও সক্ষম। কোনো ভবনের শীর্ষ থেকে শুরু করে এর ফাউন্ডেশনেও আঘাত হানতে পারে এই বোমা।
এই অস্ত্র ব্যবহারে বেসামরিক হতাহতের সম্ভাবনা
বাঙ্কার বাস্টার শহুরের কোনো জনবহুল জায়গায় ব্যবহার করলে বেসামরিক হতাহতের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, এ ধরনের অস্ত্র শুধু ‘আত্মরক্ষার চরম পরিস্থিতি’তে ব্যবহার করা যেতে পারে। অতিরিক্ত জনসংখ্যাসমৃদ্ধ অঞ্চলে এর ব্যবহার উচিত নয়। যদিও ইসরাইল এটি ব্যবহারের ক্ষতি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় বলে মনে করছেন অনেকে।
আরো পড়ুন : ইসরায়েলের হামলায় লেবাননের বাসিন্দারা আতঙ্কিত