নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দেশে ভোটার ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন।
পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪ জন।
নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ জন।
দেড় দশকের মধ্যে দেশে এবার সর্বোচ্চসংখ্যক ভোটার বেড়েছে। জনসংখ্যার চেয়ে ভোটার বৃদ্ধির হারও এবার অনেক বেশি। অন্যদিকে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা কম। যদিও জনশুমারি অনুযায়ী, দেশে এখন পুরুষের চেয়ে নারী বেশি। ফলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঠিকমতো ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করায় অনেক নারী ভোটার বাদ পড়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোটার দিবসে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে ইসি। তাদের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন (২ মার্চ বা গতকাল পর্যন্ত) মোট ভোটার ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪ জন, নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ জন এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের ভোটার ৮৩৭ জন। অর্থাৎ পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা ১৭ লাখ ৪০ হাজার ৮৪৫ জন কম। অথচ ২০২২ সালের আগস্টে প্রকাশিত সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮২ জন বেশি।
গতকাল সকালে ভোটার তালিকা প্রকাশ করার পর বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে জাতীয় ভোটার দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আশা করি, এটা একটা নির্ভুল ভোটার তালিকা হবে। এর ওপর নির্ভর করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে পারব।’
একই অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘ভোটার তালিকা নিয়ে এখন পর্যন্ত বিরূপ কোনো কথাবার্তা আমার কানে আসে নাই।’
তবে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জনসংখ্যার তুলনায় এবার ভোটারের হার বেশি, আবার সংখ্যায় বেশি হলেও নারী ভোটার কম হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা নানা সন্দেহের উদ্রেক করে। ভোটার তালিকা সঠিক না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
এই ভোটাররাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন। তবে নির্বাচনের তফসিল প্রকাশের আগপর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এবারের ভোটার তালিকা নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ভোটার তালিকা তৈরি হয়েছিল ২০০৭ সালে। তখন নারী ভোটার বেশি ছিল। এরপর থেকে ভোটার তালিকায় নানা অসংগতি দেখা যাচ্ছে। এর বড় কারণ ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য বাড়ি বাড়ি না যাওয়া। ভোটার তালিকা বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যখন নারী ভোটার কম নিবন্ধিত হয়। কারণ, বাড়ি বাড়ি না গেলে নারী ভোটার নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ কমে যায়।
হিজড়া ভোটারসংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন
এক বছরে হিজড়া সম্প্রদায়ের ভোটারসংখ্যা বেড়েছে। ৪৫৪ থেকে বেড়ে এবার হয়েছে ৮৩৭ জন। তবে হিজড়া সম্প্রদায়ের যে সংখ্যা ভোটার তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করেন তাদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন ‘সম্পর্কের নয়া সেতু’র সভাপতি জয়া সিকদার। তিনি বলেন, হিজড়া হিসেবে নয়, ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে ভোটার হতে চান তাঁরা। তাই অনেকে হিজড়া হিসেবে ভোটার হননি।
ভোটার বৃদ্ধিতে রেকর্ড
মৃতদের বাদ দেওয়ার পরও এবার ভোটার বেড়েছে ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩০ জন। এবার ভোটার বেড়েছে গত বছরের চেয়ে প্রায় চার গুণ। গত বছর বেড়েছিল ১৫ লাখ ৬৬ হাজার জন।
ভোটার বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, করোনার সময় অনেকে ভোটার হতে পারেননি। তাঁরা পরে ভোটার হয়েছেন। এ ছাড়া করোনা-পরবর্তী সময়ে প্রবাসীদের অনেকে দেশে এসে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
২০২২ সালের আগস্টে প্রকাশিত জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। আর ইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে যেখানে ১ দশমিক ২২ শতাংশ হারে, সেখানে ভোটার বাড়ছে ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ হারে।
যদিও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সঙ্গে ভোটারের হার সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যার চেয়ে ভোটার বৃদ্ধির হার বেড়ে গেলে তালিকায় ভুয়া ভোটার ঢুকেছে কি না, সেই প্রশ্ন, সন্দেহ তৈরি হয়।
আরো পড়ুন : ভোলাহাটে জাতীয় ভোটার দিবস পালিত