দেশে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে অনেকের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও কিছু বিষয় মেনে চললে অগ্নিদুর্ঘটনা এবং বিস্ফোরণের মতো ঘটনার ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব। ঈদের ছুটিতে বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় বেশ কিছু নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
এবার সতকর্তামূলক অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে ফায়ার সার্ভিসও। রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব স্টেশনের ফায়ার কর্মীদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ ঈদের ছুটি পাবেন। বাকিদের স্টেশনে রাখা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (ঢাকা) দিনমনি শর্মা বলেন, যাঁরা বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ছুটিতে যাচ্ছেন, তাঁদের বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। ঘরের বৈদ্যুতিক লাইনের প্রধান সুইচ বন্ধ করে রাখা ভালো। চুলার গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করে রাখলেও ঝুঁকি কম থাকে। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর সবার কাছে রাখা প্রয়োজন, যাতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত যোগাযোগ করা যায়।
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান (অব.) বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ বাসার যেসব বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে, সেগুলোর ওপর সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। লাইন ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলে তা বদলে ফেলতে হবে। ছুটিতে কেউ বাসায় না থাকলেও নিরাপত্তারক্ষীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া উচিত। কারণ অনেক সময় নিরাপত্তারক্ষীরা মনে করেন ফাঁকা বাড়ি, তাই তাঁদের দায়িত্ব কমে গেল। বাসা খালি থাকলে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে নিরাপত্তারক্ষীদের।
পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের প্রধান রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ছুটিতে যাওয়ার সময় রান্নাঘরের দরজার জানালা সম্ভব হলে একটু খোলা রাখা যেতে পারে। সেটা সম্ভব না হলে ছুটির পর বাসায় ফিরে গ্যাসের চুলা ও ইলেট্রনিক সরঞ্জাম চালুর আগে বন্ধ ঘরের দরজা ৩০-৪০ মিনিট খোলা রাখতে হবে। কোনো কারণে বন্ধ ঘরে গ্যাস জমে থাকলে তা বের করার ব্যবস্থা করা জরুরি। এটি না করলে আগুন লাগা ও বিস্ফোরণের ঝুঁকি থাকবে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, বাসায় রান্নার পর গ্যাসের চুলা সম্পূর্ণ নিভিয়ে ফেলতে হবে। গ্যাসের চুলার চাবি ভালোভাবে বন্ধ করা জরুরি। অগ্নিনিরাপত্তার জন্য যে কোনো ভবনে ফায়ার সরঞ্জাম, পানি বা দুই বালতি বালু রাখা প্রয়োজন। অভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ানের মাধ্যমে নিয়মিত ভবনের বৈদ্যুতির সরঞ্জাম ও ফিটিংস পরীক্ষা করাতে হবে। দাহ্য বস্তু রয়েছে– এমন স্থানে বাতির ব্যবহার পরিত্যাগ করা, বাসা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয় অগ্রাধিকার দেওয়া, অ্যালার্ম সিস্টেম থাকা উচিত। অ্যালার্ম সিস্টেম থাকলে কোনো এক জায়গায় আগুন লাগলে পুরো ভবনের বাসিন্দারাই আগুন সম্পর্কে জানতে পারে। দ্রুত তারা ভবন খালি করে নিচে নেমে আসতে পারে। এতে প্রাণহানি ব্যাপকভাবে কমানো সম্ভব। যে কোনো ভবনেই আগুন লাগলে বের হয়ে আসার জন্য একটি জরুরি বহির্গমন পথ থাকতে হবে। এটা হতে হবে এমন একটি পথ, যেখানে আগুন এবং ধোঁয়া প্রবেশ করতে পারবে না। আগুন নেভানোর জন্য একটি প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা হচ্ছে স্প্রিঙ্কলার সিস্টেম। এটি ভবনের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকে। একটি স্থানে তাপমাত্রা ৫৭ ডিগ্রির বেশি হলে এটি স্বয়ক্রিংভাবে বিস্ফোরিত হয়ে পানি ছিটিয়ে পড়তে থাকে। এতে আগুন নিভে যায়। বড় বড় বাণিজ্যিক বা কারখানা ভবনে সাধারণত এগুলো ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে আবাসিক ভবনগুলোতেও এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফায়ার এক্সটিংগুইশার কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা সবার জানা থাকা জরুরি। এটা না জানলে ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকলেও কোনো লাভ হবে না। কোনো কারণে আগুন লাগলে উদ্বিগ্ন হওয়া যাবে না। মাথা ঠান্ডা করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা দরকার। আগুন থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া যাতে কেউ নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ না করে, ভবন থেকে নামতে যাতে সিঁড়ি ব্যবহার করে। ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুখ ঢেকে নিরাপদ স্থানে সরতে হবে। এমন কিছু বিষয় জানা থাকলে ক্ষতি কম হবে।
আরো পড়ুন : ঈদ উদযাপনে সতর্ক থাকতে দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকবেন না, প্রচুর পানি পান করুন