ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ: এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীসহ সারাদেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। প্রচণ্ড গরমে জনজীবন ওষ্ঠাগত। এর মধ্যেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এরই মধ্যে ঈদ উদযাপন করতে নাড়ির টানে বাড়ি গেছেন লাখ মানুষ। তবে এই উষ্ণ আবহাওয়ায় ঈদ উদযাপনে সতর্ক থাকতে হবে। ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়ে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবেন না। বিশেষ করে যাঁরা বয়স্ক এবং কিডনি, হার্ট, লিভার, ব্লাড প্রেশার কিংবা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁরা অযথা রোদে যাবেন না। এমন রোদে হিটস্ট্রোকসহ নানা জটিলতা বাড়তে পারে।
ঈদের জামাত শেষে দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসবেন, ছায়াযুক্ত স্থানে থাকবেন। নানা প্রয়োজনে যাঁদের বাইরে বের হতে হয়, তাঁরা প্রচুর পরিমাণে পানি খাবেন। কিছুক্ষণ পর পর একটু করে পানি খাবেন। সবচেয়ে ভালো হয় লবণ পানি খেলে। কেননা এই গরমে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে লবণও বের হয়ে যায়। আর লবণের ঘাটতি হলে শরীর দুর্বল, মাথাব্যথা, প্রেশার, প্রস্রাব কমে যায়। এগুলো কিন্তু শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ জন্য পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে বা ওরস্যালাইন খেতে পারেন। এ ছাড়া ডাব, ফলমূলের শরবত কিংবা গ্লুকোজ খেতে পারেন।
বাইরে বের হলে অন্তত ছাতা নিয়ে যাবেন। ছাতা না পেলে কাপড় দিবেন। অথবা ঘণ্টাখানেক কাজ করার পর ১০-১৫ মিনিটের জন্য বিরতি নিয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে যাবেন। এরপর আবার কাজ করবেন অর্থাৎ টানা দীর্ঘসময় রোদের মধ্যে কাজ করবেন না। রোদে একটানা কাজ করতে করতে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি উঠে গেলে তখন মাথা ঘোরা, মাথাব্যাথা, বমিসহ এক সময় যে কেউ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এটাকে বলে হিটস্ট্রোক। এটা কিন্তু সবচেয়ে বিপজ্জনক! অজ্ঞান হলে একসময় কিন্তু মৃত্যুও হতে পারে। সেজন্যই বলছি, একটানা একইভাবে রোদের মধ্যে থাকবেন না।
দেখুন, দক্ষিণ এশিয়ায় তাপমাত্রা কিন্তু ধীরে ধীরে বাড়ছে। ভারতের এক রাজ্যে দেখলাম হিটস্ট্রোকে ১১ জন মারা গেছেন। পাকিস্তানেও কোথাও কোথাও অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই আমাদের সাবধান হতে হবে।
কারও হিটস্ট্রোক হলে প্রথম কাজ হলো রোগীকে ছায়াযুক্ত স্থানে নিয়ে যাওয়া। ঠান্ডা পানি দিয়ে গা মুছে দেওয়া। এসব না পেলে ফ্যান বা পাখা দিয়ে তাঁকে বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। এসির নিচে নিতে পারলে আরও ভালো হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি খেতে পারলে তাঁকে ডাব, জুস, গ্লুকোজ কিংবা পানিজাতীয় খাবার খাওয়ানো। আর কিছু খেতে না পারলে দেরি না করে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। কেননা এমন হিটস্ট্রোকের ক্ষেত্রে অনেক সময় আইসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এই গরমের মধ্যে যাঁদের বাইরে কাজ করতে হয়, তাঁরা একটু ঢিলেঢালা পোশাক পরবেন। টাইট পোশাক এড়িয়ে চলবেন।
সবার ঈদ হোক আনন্দের, ঈদ হোক খুশির।
লেখক: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
আরো পড়ুন : প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাতে শেষ সময়ের কেনাকাটায় মার্কেট সরগরম