ঈদ যাত্রায় ট্রেনের ই-টিকিটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন টিকিট প্রত্যাশীরা

জনদুর্ভোগ তথ্য-প্রযুক্তি প্রচ্ছদ ভ্রমণ লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

স্টাফ রিপোর্টার : ঈদ যাত্রায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রির চতুর্থ দিনেও চরম ভোগান্তিতে পড়েন টিকিট প্রত্যাশীরা। সার্ভার জটিলতায় ‘রেলসেবা’ অ্যাপসে এবং ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারেননি অনেকেই। আবার প্রবেশ করতে পারলেও টিকিট বুকিং অপশনে ক্লিক করার পরে দীর্ঘক্ষণ আটকে থেকেছেন, পরের ধাপে সিলেক্ট হলেও টিকিট পারচেজ (কেনা) সম্ভব হয়নি। গতকাল বিক্রি হচ্ছিল ২০শে এপ্রিলের ট্রেনের আগাম টিকিট। ২০শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার হওয়ায় আগের দিনগুলোর চেয়ে টিকিটের চাহিদাও ছিল বেশি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন টিকিট প্রত্যাশীরা।

আহমেদ নামের সিলেটগামী এক যাত্রী বলেন, ঈদের ছুটিতে ট্রেনে করে বাড়িতে যেতে চাইছিলাম। কিন্তু সকাল থেকে একটানা ৫ ঘণ্টা চেষ্টা করেও টিকিট কাটতে পারিনি। টিকিট বুকিং অপশনে ক্লিক করার পরে দীর্ঘক্ষণ আটকে থেকেছেন, পরের ধাপে সিলেক্ট হলেও টিকিট পারচেজ (কেনা) সম্ভব হয়নি। গতকাল সকাল ৮টায় অনলাইনে টিকিট কাটা শুরুর পরপরই রেলের সার্ভারের গতি ধীর হয়ে পড়ে। টিকিট প্রত্যাশীদের অভিযোগ, সার্ভারে টিকিট দেখালেও কাটতে পারছেন না তারা।

রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতি মিনিটে প্রায় দুই লাখ মানুষ সার্ভারে ঢোকার চেষ্টা করছেন, তাই এই জটিলতা। মঙ্গলবার বিক্রি করা হবে ২১শে এপ্রিলের টিকিট।
গত শনিবারও সার্ভার জটিলতায় ‘রেলসেবা’ অ্যাপসে প্রবেশ করতে পারেননি অনেকেই। আবার প্রবেশ করতে পারলেও টিকিট বুকিং অপশনে ক্লিক করার পরে দীর্ঘক্ষণ আটকে থেকেছেন, পরের ধাপে সিলেক্ট হলেও টিকিট পারচেজ (কেনা) সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই কাক্সিক্ষত টিকিট শেষ হয়ে যায়। এরপর দিন রোববার সকালে অনলাইনে টিকিট কাটা শুরুর পরপরই সার্ভারের গতি কমে যায়। যদিও রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, রোববার এই জটিলতা অনেকটাই কেটে গেছে। এ অবস্থায় অনলাইনে রেলের শতভাগ টিকিট দেয়ার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে, ৭ই এপ্রিল ১৮ হাজার ৫০০, ৮ই এপ্রিল ২৫ হাজার ২০০ এবং ৯ই এপ্রিল ২৪ হাজার ৪৫০০ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। গতকাল ২৭ হাজারের কিছু বেশি টিকিট বিক্রি হবে। গত শুক্রবার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। রোববার অগ্রিম টিকিটের বিপরীতে ১ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ‘রেল অ্যাপস’ এ হিট করছে। আগামীকাল ২১শে এপ্রিলের টিকিট বিক্রির মাধ্যমে শেষ হবে এবারের অগ্রিম যাত্রার টিকিট বিক্রি। তাই আজ মঙ্গলবার আরও কয়েকগুণ বেশি চাপ থাকতে পারে। গতকাল ২৭ হাজার টিকিটের জন্য সকাল ৮টা থেকে এক ঘণ্টায় সার্ভারে ৫৫ লাখ ক্লিক পড়েছে। এটাকে রীতিমতো ট্রেনের টিকিট কাটার ‘ক্লিক লড়াই’ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টায় শুরু হয় টিকিট বিক্রি। উত্তরবঙ্গ, ময়মনসিংহসহ যেযব অঞ্চলের ট্রেনের চাহিদা বেশি সেসব ট্রেনের টিকিট এক মিনিটে শেষ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঠিক ৮টায় সার্ভার অন করার সঙ্গে সঙ্গে একসঙ্গে প্রায় ১১ লাখ ক্লিক পড়েছে সার্ভারে। এরমধ্যে প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যে সেটা প্রায় ১৫ লাখ হয়ে যায়। আর এক ঘণ্টার মধ্যে ক্লিক সংখ্যা ৫৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে বেশি দূরত্বের গন্তব্যের টিকিটের চাপ বেশি। রেল সংশ্লিষ্টরা জানান, অনলাইনে টিকিট ছাড়ার ১ সেকেন্ডের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার লোক প্রবেশ করেন। ১ মিনিটের মধ্যে কেবিন, এসি ও শোভন চেয়ারের ১০ থেকে ১২ হাজার টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। বাকিগুলো ধীরে ধীরে বিক্রি হয়।

কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, সার্ভার জটিলতা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার টিকিটের বিপরীতে হিট পড়ছে ১৫ লাখেরও বেশি। তিনি বলেন, সক্ষমতার চেয়ে শতগুণেরও বেশি হিট পড়ছে অনলাইনে। কারও ভাগ্যে টিকিট জুটছে, কারও নয়। তবে আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে টিকিট বিক্রি করছি।
রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি মুহূর্তে কী পরিমাণ টিকিট বিক্রি হচ্ছে, কতোটি টিকিট অবিক্রীত তা রেলকে ডকুমেন্টসহ জানাচ্ছে ‘সহজ’। সার্ভারে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লাখ হিট নেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে প্রতি সেকেন্ডে ২০ থেকে ২৫ লাখ হিট পড়ছে। ৯ই এপ্রিল ৩ মিনিটে ১ কোটি ৮৪ লাখ হিট পড়েছে। এতে সার্ভারের গতি কমছে।
আসনবিহীন‌ টিকিট বিক্রি হবে: যারা টিকিট পাচ্ছেন না তাদের জন্য আসনবিহীন টিকিট বিক্রি হবে। ঢাকা-চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস ছাড়া বাকি ৩৬টি আন্তঃনগর ট্রেনে শুধু যাত্রার দিন আসনবিহীন ২৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার।

আরো পড়ুন : সিলেটে স্বর্ণ গায়েব ঘটনায় ‘মাস্টারমাইন্ড’ কামরুল গ্রেপ্তার

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *