বিশেষ প্রতিকেদক: মহান বিজয় দিবস আজ। বিজয়ের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে অর্জিত হয় বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়। ৯ মাস মরণপণ লড়াই শেষে এইদিনে আসে কাঙ্ক্ষিত বিজয়। আজ আনন্দের দিন। বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন। সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ নেয়ার দিন। বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শিকল ভেঙে স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। ২৪ বছরের নাগপাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়।
প্রভাত সূর্যের রক্তাভা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালি চোখে আনন্দ অশ্রু আর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় সামনে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বছর মহান বিজয় দিবস পালন করছে জাতি। দিবসটি উপলক্ষে দিনভর পালন করা হবে নানা কর্মসূচি। জাতীয় পর্যায়ে এদিন ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তববক অর্পণ করবেন।
এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দিনটি উপলক্ষে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচি। বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোতেও নানা আয়োজনে পালিত হবে বিজয় দিবসের কর্মসূচি।
দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী বাণী প্রদান করেছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু বিকাশ কেন্দ্রসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সকল শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহে বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৬টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ৮টায় ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল। টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচিতে প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি, ইকবাল হোসেন অপু এমপি প্রমুখ।
এদিকে ১৭ই ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য রাখবেন দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ।
এ ছাড়াও ১৮ই ডিসেম্বর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর সোহ্?রাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ধানমণ্ডি বত্রিশ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত বিজয় শোভাযাত্রা হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে বিজয় শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যথাযথ মর্যাদায় সারা দেশে মহান বিজয় দিবস উদ্যাপনের লক্ষ্যে দলের কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএনপি’র কর্মসূচি: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি’র পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৬ই ডিসেম্বর সকাল ৭টায় ঢাকা থেকে স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে যাত্রা, জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ, এরপর বেলা ১টায় বিএনপি’র নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি’র আয়োজনে বিজয় র্যালি শুরু হয়ে মগবাজার গিয়ে শেষ হবে। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল নেতাকর্মীকে এই কর্মসূচি সফল করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন : মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শিল্পী-সাহিত্যিকদের অবদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ