ক্রীড়া প্রতিবেদক: গল্পের হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো সাকিব যেন ক্রিকেটের জাদুকরি বাঁশিওয়ালা। ব্যাটে রানের ঝংকার, বোলিংয়ে মায়াবী জাদু তাঁর। মুগ্ধতা ছড়ানো অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখে বিমোহিত গ্যালারির দর্শক স্লোগান তোলেন। এভাবেই বছরের পর বছর সাকিব ক্রিকেট বিনোদনে ভাসাচ্ছেন সমর্থকদের। দেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের আসনে নিজেকে আরও সুসংহত করছেন প্রতিনিয়ত রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতে। সাকিবের সঙ্গে পারফরম্যান্সের আলোয় জ্বলছেন লিটন কুমার দাস, তাসকিন আহমেদরাও। তাঁদের কৃতিত্বে স্কোরবোর্ড ফুলে-ফেঁপে ওঠে রানে, উইকেটে। ব্যক্তিগত রেকর্ডের মেলবন্ধনে ক্রিকেট রেকর্ড বইয়ের পাতায় ফোটে বাংলাদেশের জয়ের রেকর্ডের ফুল। এই প্রথম টি২০তে টানা পাঁচে পাঁচ জয় বাংলাদেশের।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ডের পাগলা ঘোড়া দুরন্ত গতিতে ছুটছে ওয়ানডে সিরিজ থেকেই। বাংলাদেশ রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতেছে প্রথম দিন থেকেই। সিলেটে প্রথম ম্যাচে ৩৩৮ রান করা ছিল রেকর্ড। পরের ম্যাচে ৩৪৯ রান করে সেটাকে ছাপিয়ে গেছে। শেষ ম্যাচে তিন পেসারের ১০ উইকেট শিকার করাও তো রেকর্ড। এ ধারা যে চট্টগ্রামে টি২০ সিরিজে বজায় থাকবে, বোঝা যাচ্ছিল তা। সে অনুমেয় ঘটনাই ঘটেছে টানা দুই ম্যাচে। বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম টি২০ ডাকওয়ার্থ/লুইসের নিয়মে ২২ রানে জিতে স্বাগতিকরা সিরিজে এগিয়ে ছিল ১-০ ব্যবধানে। গতকালও বৃষ্টির কারণে ১৭ ওভারে ছোট করে আনা ম্যাচে এসেছে ৭৭ রানের জয়। ২০২১ সালে পাপুয়া নিউগিনিকে ৮৪ রানে হারানোর রেকর্ডের ঠিক পেছনে এটি।
২০২২ সালের টি২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ডকে হারানো আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে কোনো মিল নেই এই দলটির। নির্বিষ বোলিং, ব্যাটারদের হাতে শট নেই, ফিল্ডিংয়ে টেনেটুনে পাস করা আইরিশদের দেখে মনে হচ্ছে খেলায় মন নেই। পারফরম্যান্সের নিম্নমুখিতায় মনে হতে পারে কে বা কারা হাত পা বেঁধে স্টার্লিংদের মাঠে ছেড়ে দিচ্ছে প্রবল শক্তিশালী দলের সামনে। গতকালের ম্যাচে সফরকারী দলের বোলিং-ব্যাটিং দেখে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছিল, সিরিজ বাঁচাতে নেমেছিল তারা। টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে লিটন কুমার দাস আর রনি তালুকদারের কাছে খেল বেধড়ক পিটুনি। টাইগার দুই ওপেনার ৫৬ বলে গড়ে ফেলেন ওপেনিংয়ে নিজেদের রেকর্ড জুটি। চার-ছক্কার ফোয়ারা ছুটিয়ে ১২৮ রান করে বিচ্ছিন্ন হন তাঁরা। টি২০ এর ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের আগের সেরা সৌম্য সরকার ও নাঈম শেখের ১০২ রান। মাইলফলকের ম্যাচে লিটন ছিলেন খ্যাপাটে। স্ট্রাইকরেট ২০২.৪৩। ৪১ বলে ১০টি চার ও তিন ছক্কায় ৮৩ রান তাঁর। ১৮ বলে ৫০ করাও লিটনের রেকর্ড। জুটিতে রনিও ব্যাট করেন ঝড়ের গতিতে। ২৩ বলে ৪৪ রান, ১৯১.৩০ স্ট্রাইকরেটে। সাকিব আল হাসান আর তাওহিদ হৃদয়ও দারুণ একটি জুটি উপহার দেন। অধিনায়ক সাকিব ২৪ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত। আর ১৩ বলে হৃদয়ের হৃদয় জয় করা ২৪ রানে বাংলাদেশকে পৌঁছে দেয় তিন উইকেটে ২০২ রানে।
বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম থেকেই হোঁচট খেতে থাকে আয়ারল্যান্ড। তাসকিন আহমেদ প্রথম বলে জুটি ভেঙে দুর্দান্ত শুরু দেন। সাকিব বোলিংয়ে এসেও বাজিমাত করেন প্রথম বলে। দুই ওভারে দুই উইকেট হারানো আইরিশরা আর কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। সাকিব পরের দুই ওভারে জোড়ায় জোড়ায় উইকেট নিলে দলের জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট পান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। গতকাল আন্তর্জাতিক টি২০তে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির মুকুটও দিয়েছে সাকিবকে। নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদির চেয়ে একটি উইকেট বেশি নিয়ে শীর্ষে তিনি। ১১৪ ম্যাচে সাকিবের উইকেট ১৩৫টি। সাকিবের দিনেও তিন উইকেট গেছে তাসকিনের দখলে। বাংলাদেশের বোলিং তোপের মুখে টালমাটাল আয়ারল্যান্ড ইনিংস শেষ করে ৯ উইকেটে ১২৫ রানে। যেখানে ৫০ রান কার্টিস ক্যাম্ফারের। প্রতিপক্ষ যেমনই করুক, বাংলাদেশ সিরিজ জয়ের সাফল্য দেখাল পর পর দুই সিরিজে। ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশের পর আয়ারল্যান্ডকেও সেই দৌড়ে রেখেছে।
আরো পড়ুন : বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন জেসমিনের পরিবার