সবার চোখ এখন একুশে ফেব্র“য়ারির দিকে। কী ঢাকা কী ঢাকার বাইরে। মুসলিম লীগের দুঃশাসনে পুড়ছে গোটা পূর্ববঙ্গ। সবাই ক্ষুব্ধ। ভাষার ওপর এ আক্রমণ তারা সইবে না। অন্যদিকে প্রশাসনের আন্দরমহলে একুশকে ঠেকানোর প্রস্তুতি চলছে। কারণ তারা একুশ নিয়ে ভীত ও আতঙ্কিত। একুশকে সামনে রেখে তৎকালীন পূর্ববাংলার পরিস্থিতি এমনই ছিল।
একুশের দিনলিপি গ্রন্থে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক লিখেছেন, ১৫ ফেব্র“য়ারি অনেকটা আগের মতোই। তবে এদিন বড় ঘটনা শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তর করা হয়। উদ্দেশ্য, যাতে ভাষাসংগ্রামীদের সঙ্গে শেখ সাহেবের যোগাযোগ না হয়। আগের কিস্তির দিনলিপিতে এ ঘটনার প্রাসঙ্গিক বক্তব্যের জের ধরে বলা হয়েছে, সংবাদপত্র ও ব্যক্তিবিশেষের সূত্রে ফরিদপুরের পথে নারায়ণগঞ্জে দুএকজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে শেখ সাহেবের সাক্ষাৎ ঘটেছে।
একুশে ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি পণ্ড করতে নুরুল আমীন ও তার প্রশাসনের চেষ্টা ছিল বহুমুখী।
কারণ একুশ নিয়ে তারা ভয় ও আতঙ্কে ছিল। প্রশাসনের অন্দরমহলে সে প্রস্তুতি যথেষ্ট ছিল। সরকারবিরোধী ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারকে তালাবদ্ধ করতে পেরে অনেকটা স্বস্তি নুরুল আমীন ও তার প্রশাসনে।
এ সাফল্যের ঢেউ বঙ্গোপসাগর থেকে দ্রুতই আরব সাগরের তীরে করাচি বন্দরে পৌঁছে যায়। করাচির সংবাদপত্র মহলকে তা যথারীতি স্পর্শ করে। শাসকপন্থি দৈনিক পত্রিকা ‘ডন’ তাতে মহাখুশি। কারণ ক্ষমতা ধরে রাখতে দমননীতির বিকল্প নেই। কিন্তু তারা রাজনৈতিক ইতিহাসের এ সত্য মনে রাখেনি, ‘রাজনৈতিক দমননীতি রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।’ কথাটা অবশ্য পরে কিঞ্চিৎ বুঝেছিলেন মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান।
মুসলিম লীগের সাড়ে চার বছরের দুঃশাসনে পূর্ববঙ্গ ক্ষুব্ধ, সমাজ চঞ্চল। পরিবেশ ১৯৫২তে বিশেষভাবে ছাত্রমহলে শুকনো বারুদের মতো বিস্ফোরক। দরকার একটি অগ্নিকণা। প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন ২৭ জানুয়ারি তার বক্তৃতায় সেটাও জুগিয়ে দিয়ে গেছেন ঢাকায় এসে। তাই এখন চলছে একুশের কর্মসূচি সফল করার প্রস্তুতিপর্ব। ছাত্র-যুব নেতারা তাই ব্যস্ত। ব্যস্ত কর্মীরাও। সব চোখ একুশের দিকে। ঢাকার বাইরেও সবার চোখ ঢাকার একুশে ফেব্র“য়ারির দিকে। কেমন হবে সেই সমাপনী- সে প্রশ্ন সবার মনে।
আরো পড়ুন : গোমস্তাপুরে দোষিমনিতে পুষ্টি সমৃদ্ধ নিরাপদ গ্রামের উদ্বোধন