সিলেট ব্যুরো: নির্বাচনের আগেই নানা নাটকীয়তা। হঠাৎ করেই গতকাল বিকালে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠের ফটকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। চেয়ার নিয়ে বসে গেলেন। সাফ জানিয়ে দিলেন; ‘মাঠ না দিলে সরবো না।’ খবর পেয়ে ওসি আলী মাহমুদ ছুটে এলেন। তার সঙ্গে মেয়রের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। ওসি’র ব্যবহারে ক্ষুব্ধ মেয়র আরিফ। নগরবাসীকে জানালেন আহ্বান। বললেন; ‘আমার সঙ্গে অবিচার করা হচ্ছে, আপনারা আসুন, দেখে যান।’ ততক্ষণে এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। নেতাকর্মীদেরও উপস্থিতি বেড়েছে। সিদ্ধান্ত জানাতে এলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি আজবাহার আলী শেখ।
রেজিস্ট্রারি মাঠের ফটক খোলার অনুমতি দিয়ে পুলিশ প্রত্যাহার করে চলে যান তিনি।
গতকাল বিকালে সিলেটে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নিয়ে এক ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। অবশেষে রেজিস্ট্রারি মাঠের অনুমতি পেলেন মেয়র আরিফ। মাঠে ঢুকে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। জানালেন- শনিবারই তিনি তার ফয়সালা জানিয়ে দেবেন। তবে শেষ মুহূর্তে অনুমতি দেয়ায় তিনি পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। ১লা মে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছিলেন ২০শে মে তিনি নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। এ কারণে মেয়র আরিফের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে নগরের মানুষ।
রেজিস্ট্রারি মাঠে নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের জনগণের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর তিনি মিডিয়ার কাছে তার সিদ্ধান্ত তুলে ধরবেন। সেই মতবিনিময় সভা ও সংবাদ সম্মেলনের জন্য রেজিস্ট্রারি মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে কয়েক দিন আগে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে পত্র পাঠান মেয়র আরিফ। গতকাল পর্যন্ত তাকে পুলিশ থেকে কোনো কিছু না বলায় তিনি রেজিস্ট্রারি মাঠে মঞ্চ নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু করেন। এর আগে রেজিস্ট্রারি মাঠে ছিল বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত সমাবেশ।
জুমার পর বিএনপি’র নেতাকর্মীরা রেজিস্ট্রারি মাঠে ঢুকতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপি’র নেতারা নগরীর কোর্ট পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশ করেন। পরে তারা কোর্ট পয়েন্ট থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত মিছিলও করেন। তবে রেজিস্ট্রারি মাঠে পুলিশের বেষ্টনী সরানো হয়নি। বিপুলসংখ্যক পুলিশ রেজিস্ট্রারি মাঠের ফটকে অবস্থান নেয়। এই অবস্থায় বিকাল ৪টার দিকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মতবিনিময়ে মঞ্চ নির্মাণের জন্য একটি ট্রাক বাঁশ ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে আসে। এ সময় পুলিশ ওই ট্রাককে রেজিস্ট্রারি মাঠে ঢুকতে বাধা দেয়। খবর পেয়ে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রেজিস্ট্রারি মাঠের প্রধান ফটকে ছুটে আসেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
প্রথমে তিনি সেখানে একাই আসেন। এ খবর পেয়ে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আসেন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মাঠের ভেতরে মালামালবাহী ওই ট্রাক ঢুকাতে চাইলে উপস্থিত পুলিশ বাধা দেয়। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী চেয়ার নিয়ে রেজিস্ট্রারি মাঠের প্রধান ফটকেই বসে যান। তিনি জানান, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত তার মালামাল ভেতরে না ঢুকতে দেয়া হবে ততক্ষণ তিনি ফটকেই অবস্থান করবেন।’ মেয়র জানান- ‘আমি নিয়মমতো চিঠি দিয়েছি। আমাকে কিছু না জানিয়ে পুলিশ মোতায়েন করে বাধা দেয়া হয়েছে।
নির্বাচিত মেয়র হিসেবে পুলিশ আমার সঙ্গে শিষ্টাচার লঙ্ঘন করছেন। তার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন মেয়র।’ ফটকে অবস্থান নেয়ার আধঘণ্টা পর সেখানে আসেন কোতোয়ালি থানার ওসি আলী মাহমুদ। এ সময় তিনি মেয়রের সঙ্গে কথা বলেন। ওসি’র কথাবার্তায় মেয়র ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে বলেন- ‘আমাকে গ্রেপ্তার করেন, আমি রাজি আছি। আমাকে মামলা ও জেলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত আছি। আমি এখনো নগরবাসীকে ডাক দেইনি।’ ওসি’র সামনেই মেয়র জানান- ‘যদি সিলেটের আপামর জনগণ, নগরবাসী যদি আপনারা আমার হয়ে থাকেন তাহলে আমার উপর কিন্তু অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে। আমি আপনাদেরকে আহ্বান করছি; যে যেখানে আছেন আপনারা চলে আসেন।’
এদিকে রেজিস্ট্রারি ফটকে মেয়রের একঘণ্টা অবস্থানের পর সেখানে যান সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ। তিনি গিয়ে গেট খোলার অনুমতি দেন। পরে পুলিশ সদস্যদের সেখান থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। পুলিশের অনুমতি পাওয়ার পর চাবি এনে রেজিস্ট্রারি মাঠের প্রধান ফটক খুলে দেয়া হলে মেয়র আরিফ দলবল নিয়ে ভেতরে ঢুকেন। পরে মালবাহী ট্রাকও মাঠের ভেতরে ঢুকানো হয়। মেয়র আরিফ সাংবাদিকদের জানান- ‘আমি এখনো মেয়র। সরকারের অংশ।
এছাড়া নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো মিটিং নয় এটি। আমার অবস্থান জানাতে নগরবাসীকে আমন্ত্রণ দিয়েছি। পুলিশ এখানে বাধা দিয়েছিল। পরে অবশ্য খুলে দিয়েছেন।’ মেয়র জানান, ‘শনিবার বিকাল ৩টায় নগরবাসীর সঙ্গে মতবিনিময়ের পর মিডিয়ার সামনে আমি আমার সিদ্ধান্ত জানাবো। এজন্য এখানে মঞ্চ নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। তার সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৈরী আচরণ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন মেয়র আরিফ।’ এদিকে; মেয়র আরিফের সিদ্ধান্ত কী হতে পারে সেটি নিয়ে জল্পনা চলছে।
বিএনপি’র সিদ্ধান্তে অটল না কী নির্বাচন করার ঘোষণা সেটি জানা যাবে আজই। তবে গতকাল সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে বিএনপি’র সমাবেশের সময় মেয়র আরিফের সামনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে বিএনপি’র সিদ্ধান্তের পর অনেকেই নিজ থেকে নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছেন। যারা সিদ্ধান্ত মানছেন তাদেরকে দল থেকে মর্যাদা দেয়া হবে। আর যারা মানছেন না তারা চিরতরে বহিষ্কার হচ্ছেন। সুতরাং দু’একদিনের মধ্যে আপনারা সিলেটেও সুখবর পাবেন। তিনি বলেন, নির্বাচন করে এই সরকারকে আর বিএনপি বৈধতা দেবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোই হচ্ছে বিএনপি’র উদ্দেশ্যে।
আরো পড়ুন : মৃত জেনেও ভোটারদের ‘ভালোবাসায়’ আছিয়া বাই নির্বাচিত