মান্দা নওগাঁ সংবাদদাতাঃ-নওগাঁর মান্দায় অন্ধকারেই ঘুরপাক খাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী (১২) হত্যাকান্ডের রহস্য। মরদেহ উদ্ধারের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁদের কাছ থেকেও মেলেনি তেমন কোনো তথ্য। এ অবস্থায় নৃশংস এই হত্যাকান্ডকে ঘিরে ক্রমেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে এলাকার জনমনে।
স্থানীয়রা বলছেন, শিশু ইউসুফের বাবা রেজাউল ইসলাম পেশায় রিকশাচালক। বছরের বেশির ভাগ সময় রাজধানী ঢাকায় থেকে রিকশা চালিয়ে উপার্জন করেন। পারিবারিক কোনো বিরোধও নেই। তাহলে কী এমন অপরাধ করেছিল শিশু ইউসুফ, যাতে করে তাকে নৃশংসভাবে খুন করতে হয়েছে। অনৈতিক কিছু দেখে ফেলায় শিশুটি হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে কিনা এনিয়েও প্রশ্ন উঠেছে এলাকায়।
তবে আলোচিত এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ভরট্ট কাঠেরডাঙ্গা গ্রামের বাবুল হোসেন ওরফে বাবু (৩৫) ও ওয়াহেদ হোসেন আপেল (২৫) এবং চকউলি গ্রামের নুরুল ইসলাম ওরফে ইসলাম (২২)। এদের মধ্যে বাবু ও ইসলাম এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী এবং আপেল স্থানীয় একটি ইটভাটার শ্রমিক।
আরো পড়ুন: ছাত্রদলের ক্যাডারদের হামলার শিকার ছাত্রলীগ নেত্রীর বিভিশিকাময় আজ সেই দিন
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান বলেন, এ মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেককে ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে আদালতে। সোমবার এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য্য রয়েছে। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে তাঁদের হেফাজতে নিয়ে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, যে ভুট্টাখেতে শিশুটির লাশ পাওয়া গেছে সেখানে তাকে খুন করার কোনো আলামত পায়নি পুলিশ। আশপাশ থেকেও মেলেনি কোনো আলামত। তাছাড়া এলাকায় শিয়ালের প্রচুর বিচরণ রয়েছে। ভুট্টাখেতে সারারাত লাশটি পড়ে থাকলে শিয়াল কিংবা অন্য কোন প্রাণি এর ক্ষতিসাধন করত। লাশের গায়েও এমন আলামত ছিল না। এ থেকে ধারণা শিশুটিকে কোনো বাড়িতে খুন করার পর ভোররাতে ফেলে যাওয়া হয়েছে ভুট্টাখেতে।
স্থানীয়দের দাবি, অনৈতিক কিছু দেখে ফেলায় সেটি প্রকাশ হওয়ার আশঙ্কায় শিশুটিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এ সূত্র ধরে তদন্তকাজ এগিয়ে নিতে পারলে এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন সম্ভব বলেও মনে করছেন তাঁরা। এ হত্যাকান্ডে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁরাই প্রকৃত অপরাধী কিনা এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। জনরোষ ঠেকাতে এটি পুলিশের আইওয়াশও হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় শিশু ইউসুফের মা শিরিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, গ্রামে বয়লার মুরগির মেলা চলছে। ছেলে বায়না ধরে মুরগির মাংস দিয়ে ভাত নিয়ে স্কুলে যাবে। কাছে টাকা ছিল না। দেবরের স্ত্রীর কাছ থেকে ধার নিয়ে মেলা থেকে মুরগি কিনে আনা হয়। রান্না করতে দেরি হওয়ায় স্কুলে যাওয়া হয়নি তার।
তিনি আরও বলেন, দুপুরের পর মাংসর রান্না চড়ালে ফুল তোলার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। রান্নার পর মাংস নিয়ে ছেলের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু ছেলে ফিরেছে লাশ হয়ে। স্কুলে পাঠালে হয়ত এমন দিন দেখতে হতো না তাঁকে।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। রিমান্ডে এনে তাঁদের আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২১ মার্চ বিকেল ৩টার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হয় আন্ধারিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী (১২)। সে ভরট্ট কাঠেরডাঙ্গা গ্রামের রিকশাচালক রেজাউল ইসলামের ছেলে। পরদিন ২২ মার্চ সকাল ১০টার দিকে বাড়ির পাশের বিলের একটি ভুট্টাখেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মোঃ হাবিবুর রহমান, মান্দা, নওগাঁ
আরো পড়ুন: ১৯টি শকুন অবমুক্ত করা হলো দিনাজপুরের সিংড়া জাতীয় উদ্যানে