পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের ছাগল ‘বেঙ্গল গোট’ ব্রুনাইয়ের সুলতানের খুব পছন্দ। আমরা তাঁকে কিছু ছাগল উপহার দিয়েছি। এ ছাড়া সুলতানকে কাচ্চি বিরিয়ানি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে। ব্রুনাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পর রোববার বিকেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা শুধু পশ্চিমামুখী ছিলাম। এখন আমরা পূর্ব দিকের দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়াব। কারণ পূর্বের দেশগুলোতে অনেক সম্ভাবনাময় সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ-ব্রুনাই এক সঙ্গে কাজ করলে দুই পক্ষই লাভবান হবে।
ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা সেখানে নির্মাণ ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে কাজ করেন। এ নিয়ে দুই দেশ একটি সমঝোতা করেছে। এতে অধিক বাংলাদেশি সেখানে কাজ করতে যেতে পারবেন। ব্রুনাই বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য নিরাপদ স্থান। ব্রুনাই নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। সুলতান ক্ষমতায় থাকার ফলে ওই এলাকায় স্থিতিশীলতা ও শান্তি এসেছে। তিনি ওই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতীক। আমরাও শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও এ অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রতীক।
তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানের সেক্টরাল সংলাপ অংশীদার হতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। ব্রুনাই এতে সমর্থন দেবে এ নিশ্চয়তা দিয়েছেন সুলতান। সম্প্রতি মানবাধিকার পরিষদে হয়ে যাওয়া নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ চিন্তায় ছিল। ব্রুনাই বাংলাদেশকে কথা দিয়ে ছিল ভোট দেবে এবং তারা দিয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু চুক্তি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের সরাসরি বিমান চলাচল চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সংযোগ ফ্লাইটে ব্রুনাই যাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া হয়ে ব্রুনাই যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। অনেক সময় ব্রুনাইয়ে সরাসরি ফ্লাইটে যথেষ্ট যাত্রী থাকবে না। এ চুক্তির ফলে এ রুটে যাত্রীর অভাব হবে না।
আব্দুল মোমেন বলেন, বৈঠকের পর দুই দেশের নাবিকদের সনদ স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এতে করে বাংলাদেশি নাবিকদের ব্রুনাইয়ে চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ইমিগ্রেশন-সংক্রান্ত সমস্যা দূর হবে। আগামীতে আমরা সমুদ্রপথে যোগাযোগ বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করব। এ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
দুই দেশ এলএনজি ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য সরবরাহ নিয়ে সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এলএনজিসহ অন্যান্য জ্বালানি পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ব্রুনাই বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী এসব পণ্য সরবরাহ করবে। মন্ত্রী বলেন, বৈঠকে দুই দেশের তথ্যপ্রযুক্তি, মৎস্য শিল্পসহ সম্ভাব্য সব খাতসহ বাণিজ্য বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের নিয়মিত বৈঠকের ব্যাপারে একমত হয়েছেন দুই শীর্ষ নেতা।
রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সুলতানের সফর উপলক্ষে দুই দেশের পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে জানানো হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতায় কাজ করতে আগ্রহী ব্রুনাই। এ ছাড়া জাতিসংঘ, ওআইসি, কমনওয়েলথ এবং এআরএফের মতো বহুপক্ষীয় ফোরামগুলোতে অভিন্ন স্বার্থে একে অপরকে সহযোগিতা করবে দুই দেশ। আর রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানিয়ে এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে ঢাকার প্রতি ব্রুনাইয়ের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা দেন সুলতান।
গত শনিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসেন ব্রুনাইয়ের সুলতান। এদিন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। গতকাল সন্ধ্যায় সুলতানের ঢাকা ছাড়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়ে যায়। সোমবার সকালে তাঁর ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।
সফরে রোববার সরাসরি বিমান চলাচলে চুক্তি, জনশক্তি নিয়োগ, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য সরবরাহ এবং দুই দেশের নাবিকদের সনদ স্বীকৃতি নিয়ে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ। রোববার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ। শুরুতে দুই দেশের দুই শীর্ষ নেতা একান্তে বৈঠক করেন। এর পর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন তাঁরা। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ব্রুনাইয়ের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ। বৈঠকের পর দুই শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়।
দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল নিয়ে চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ও ব্রুনাইয়ের পক্ষে সই করেছেন দেশটির ফাইন্যান্স ও ইকোনমি মন্ত্রী আমিন আবদুল্লাহ। এ ছাড়া বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগ নিয়ে সমঝোতায় সই করেন বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং ব্রুনাইয়ের পক্ষে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদিন বিন হাজি আবদুল রহমান।
এলএনজি ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য সরবরাহ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং ব্রুনাইয়ের পক্ষে দেশটির ফাইন্যান্স ও ইকোনমি মন্ত্রী আমিন আবদুল্লাহ। আর নাবিকদের সনদ স্বীকৃতি নিয়ে ‘রিকগনিশন অব সার্টিফিকেট ইস্যুড আন্ডার দ্য প্রভিশনস অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন স্ট্যান্ডার্ডস অব ট্রেনিং, সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ওয়াচ কিপিং ফর সিফেয়ারারস, ১৯৭৮ অ্যাজ অ্যামেন্ডেড’ শীর্ষক সমঝোতায় বাংলাদেশের পক্ষে সই করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং ব্রুনাইয়ের ফাইন্যান্স ও ইকোনমি মন্ত্রী আমিন আবদুল্লাহ।
আরো পড়ুন : সব আমলকে ছাড়িয়ে গেছে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন