এডিস মশার প্রজনন দীর্ঘায়িত হবার কারণে শঙ্কা বাড়াচ্ছে 

ওকে নিউজ স্পেশাল জনদুর্ভোগ জাতীয় প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য কথা হ্যালোআড্ডা

জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত নানা কারণে দেশে সময়ে-অসময়ে বৃষ্টিপাত, অতিবৃষ্টি ও তাপমাত্রার অস্বাভাবিকতার সুযোগে এডিস মশার প্রজনন দীর্ঘায়িত হচ্ছে। মশা বংশবিস্তারে ডেঙ্গুর শঙ্কা আরও বাড়ছে। গেল বছর এই সময়ের চেয়ে এ বছর পরিস্থিতি বেশ নাজুক। এক বছরের ব্যবধানে ডেঙ্গু যেন দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে আক্রমণ শুরু করেছে। এই অতি ক্ষুদ্র প্রাণীটি অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলছে।

সর্বশেষ গত ৪ দিনের হিসাবে চোখ রাখলে দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারের বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। নিঃস্ব হয়ে পড়ছে অসংখ্য পরিবার। ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, তা আরও ভয়ংকর। এ সময়ে ২১ জনের মৃত্যুর খবর দেয় দপ্তরটি। অপরদিকে ৩ হাজার ১৫ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানানো হয়। যদিও আক্রান্তের এই অঙ্কে অনেক গরমিল আছে। কারণ, যারা বাসাবাড়িতে বা ছোটখাটো বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তাদের সেই তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই। যে কারণে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে মশার অতি প্রজনন নিয়ে আশঙ্কার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক, কীটতত্ত্ববিদ ড. জিএম সাইফুর রহমান বলেন, একটি স্ত্রী এডিস মশা প্রতি ৩ দিন অন্তর ডিম পাড়ে। এভাবে ক্ষুদ্র প্রাণীটির জীবদ্দশায় ১৫০ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। এই ডিম প্রায় এক বছর পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকে। প্রয়োজনীয় পানি পেলে যে কোনো সময় ডিম ফুটতে পারে। এখন দেশে প্রায়ই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে যত্রযত্র জমা পানিতে এডিস মশার ডিমগুলো ফোটার অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছে। প্রতিদিন জন্ম নেওয়া নতুন নতুন এডিস মশা ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত করে তুলছে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, এখন বর্ষার মৌসুম চলছে। চলতি মাসের ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ আরও ৩ দিন বৃষ্টি হবে। বৃষ্টির পর তাপমাত্রা আবার বাড়বে। এর ফাঁকে ফাঁকে বৃষ্টিও হবে। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বর্ষার মৌসুম শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কোনো কোনো বছর দেখা যায়, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ও বর্ষার মৌসুম থাকে বা বৃষ্টিপাত হয়। এই সময় গড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ থেকে ৩৩ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিদ্যামান রয়েছে।

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার বলেন, তাপমাত্রা আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে যত বৃদ্ধি পাবে এডিস মশার ডিমের কোরিয়ন স্তরের (ডিমের আবরণ) গঠন তত ত্বরান্বিত হবে। একইভাবে ডিমের ডেসিকেশন রেজিসট্যান্স বাড়িয়ে (শুষ্ককরণ প্রতিরোধ) ডিমের ভায়াবিলিটি (সজীবতা) বৃদ্ধি করে। যা ডিম ফুটে লার্ভা বের হওয়ার শতকরা হার অপটিমাম পর্যায়ে পৌঁছায় এবং লার্ভার টিকে থাকার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সবল ও সাবলীল পূর্ণাঙ্গ মশার সফল পরিস্ফুরণ ঘটায়। যা এডিস মশার ঘনত্ব অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে তোলে। মশার ঘনত্ব বাড়লে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়বে, আক্রান্তদের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়বে।

কীটতত্ত্ববিদরা আরও বলেন, মশার স্বাভাবিক বংশবিস্তার ও জীবনপ্রবাহ চালানের জন্য ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাকে একটি আইডিয়াল রেঞ্জ হিসাবে ধরা হয়। ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে থ্রেস হোল্ড লেভেল (গুণগত মানের সর্বনিু স্তর) ধরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এডিস মশার মেটাবলিক কার্যক্রম দ্রুত হতে থাকে। যার ফলে তাদের মিলিত হওয়ার ফ্রিকোয়েন্সি বেড়ে যায়। একক মশার ডিম পাড়ার ক্লাস্টারের সংখ্যাও বেড়ে যায়। ডিম ফুটে লার্ভা বের হওয়ার মাত্রা বেড়ে যায়। লার্ভা থেকে সফলভাবে পিউপাতে পরিণত হয় এবং পিউপা নিরোগ থাকে বলে সাবলীলভাবে পুনরায় এডিস মশার জš§ নিশ্চিত হয়। এতে বোঝা যাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা, বনায়ন ধ্বংস ও দ্রুত অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ ও আধুনিক জীবনযাপনের জন্য ব্যবহৃত এসি, ফ্রিজ প্রভৃতি পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে মশা বিস্তারে ভূমিকা রাখছে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে ২১ জনের মৃত্যুসহ চলতি মাসের ২০ দিনে ২৭৪ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু ৮৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৩ হাজার ১৫ জনসহ চলতি মাসে ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫৩ হাজার দুজনে দাঁড়িয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩ হাজার ১৫ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৫৭ জন। ঢাকার বাইরে ২১৫৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১০ জন এবং ঢাকার বাইরের ১১ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮১০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭৫ হাজার ৮৩৩ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন এক লাখ ৯৭৭ জন।

আরো পড়ুন : নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এক বছরে কোটিপতি বাড়ল ৪৬২ জন

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *