এবারের বিপিএলে আতঙ্কের নাম রংপুর রাইডার্স

আন্তর্জাতিক খেলাধুলা পুরুষ প্রচ্ছদ বিনোদন হ্যালোআড্ডা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: দেশি-বিদেশি মিলেই রংপুর এখন বিধ্বংসী। যতই দিন যাচ্ছে রংপুর যেন প্রতি ম্যাচেই নিজেদের আগের ম্যাচের পারফরম্যান্সকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং-তিন বিভাগেই অসাধারণ এক দল রংপুর রাইডার্স। দলে যেমন মারকাটারি ব্যাটসম্যানের অভাব নেই, তেমন স্পিন ও পেস বোলিং কম্বিনেশনও দুর্দান্ত।

ক্রিকেটে অতিপরিচিত একটি শব্দ ‘মোমেন্টাম’! সাধারণ মানের কোনো দলও যদি মোমেন্টামে থাকে তাহলে বড় বড় দলগুলোকে সহজেই হারিয়ে দেয়। আর শক্তিশালী কোনো দল যদি মোমেন্টামে থাকে তাহলে তো কথাই নেই, প্রতিপক্ষকে রীতিমতো বিধ্বস্ত করে ছাড়ে। এবারের বিপিএলে তার প্রমাণ রেখে চলেছে রংপুর রাইডার্স। সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই উড়িয়ে দিচ্ছে। দলে কে খেলছেন, কিংবা কোন ভেন্যুতে খেলা হচ্ছে-কিছুই যেন আর কোনো বড় বিষয় নয়। প্রতিপক্ষকে দুমড়েমুচড়ে দিয়ে জয় তুলে নেওয়াই উত্তরাঞ্চলের দলটির একমাত্র লক্ষ্য। বিপিএলের চলতি আসরে অন্য দলগুলোর কাছে রংপুর রাইডার্স যেমন এক আতঙ্কের নাম।

স্থানীয় ক্রিকেটাররা হচ্ছেন রংপুর রাইডার্সের প্রাণ। সাকিব আল হাসান, শেখ মেহেদী হাসান কিংবা ক্যাপ্টেন নুরুল হাসান সোহান-কেউ কারও চেয়ে কম নন। যদিও তিনজনের দায়িত্ব তিন রকম।

টপ অর্ডারে সাকিব যেন সাইক্লোনের গতিতে ব্যাটিং করছেন। বোলিং তো আরও দুর্দান্ত। চোখের সমস্যার কারণে প্রথম কয়েক ম্যাচে ব্যাট হাতে পারফর্ম করতে পারেননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। কিন্তু এখন সাকিব মানেই বিপিএলের ব্যাটিংয়ে বিধ্বংসী এক চরিত্র। শেষ ম্যাচে তো মাত্র ৩১ বলে করেছিলেন ৬৯ রান। বল হাতেই নিয়েছিলেন ২ উইকেট।

সাকিবের মতোই শেখ মেহেদীও দুর্দান্ত। স্লগে তার ব্যাটিং দারুণ কার্যকর। কিন্তু দলের প্রয়োজনে তিনি যে ওপরের দিকেও টর্নেডো গতিতে ব্যাট চালাতে পারেন তা আগের ম্যাচের বিস্ফোরক হাফ সেঞ্চুরিতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর বল হাতে মেহেদীর তুলনা হয় না। সাকিবের মতো তিনিও ১৩ উইকেট নিয়ে এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় ২ নম্বরে রয়েছেন। বিপিএলের ইমপ্যাক্ট (কার্যকরী) ক্রিকেটারের তালিকায়ও সেরা তিনে রাইডার্সের এ দুই তারকা অলরাউন্ডার।

নুরুল হাসান সোহান দল নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামনে থেকে। স্লগ ওভারে তার ব্যাটিং দেখার মতো। ভয়ংকর এক পিঞ্চহিটার! কম সময়ে দ্রুতগতিতে রান তোলায় তার জুড়ি নেই। তাই রংপুরের স্কোর লাইনটাই শেষ দিকে এসে কখনো কখনো প্রত্যাশার সীমাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

রংপুর রাইডার্সের জার্সিতেই যেন জাদু আছে। বলতে গলে প্রতিটি ম্যাচেই বিদেশি ক্রিকেটারের পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু পারফরম্যান্সে কোনো ঘাটতি নেই। টিম ম্যানেজমেন্ট যাকেই একাদশে রাখছে তিনিই বাজিমাত করে দিচ্ছেন। বিপিএলে প্রথমবারের মতো খেলতে এসে রংপুরের টিম আবহে দ্রুত আত্মস্থ করে ক্যারিশমাটিক পারফর্ম করছেন। রিজা হেনরিকস ও জিমি নিশামরা সেই ওশেনিয়া অঞ্চল থেকে এসে বাইশগজ মাতিয়ে দিচ্ছেন। প্রোটিয়া ৪৫ বছর বয়সী লেগ স্পিনার ইমরান তাহির যে ঘূর্ণি জাদু দেখিয়েছেন তার তুলনা হয় না।

দেশি-বিদেশি মিলেই রংপুর এখন বিধ্বংসী। যতই দিন যাচ্ছে রংপুর যেন প্রতি ম্যাচেই নিজেদের আগের ম্যাচের পারফরম্যান্সকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং-তিন বিভাগেই অসাধারণ এক দল রংপুর রাইডার্স। দলে যেমন মারকাটারি ব্যাটসম্যানের অভাব নেই, তেমন স্পিন ও পেস বোলিং কম্বিনেশনও দুর্দান্ত। শেষ দুই ম্যাচেই তারা ২ শতাধিক রানের স্কোর করেছে, তাও আবার শক্তিশালী দুই দলের বিরুদ্ধে (চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে ২১১, খুলনার বিরুদ্ধে ২১৯)।

রংপুরের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে দলে অলরাউন্ডারের সংখ্যা অনেক। আর টি-২০ ক্রিকেটে যে দলে অলরাউন্ডার যত বেশি তারা শক্তিমত্তায়ও এগিয়ে থাকে। উত্তরাঞ্চের দলটি প্রতি ম্যাচেই অসাধারণ পারফর্ম করে তা বুঝিয়েও দিচ্ছে।

আসরে সাত জয়ে রাইডার্স সবার আগে প্রায় নিশ্চিত করেই ফেলেছে প্লে-অফ। এখন গ্রুপ পর্বে শীর্ষ দুয়ে থাকার টার্গেট। তবে এ আসরে রংপুর এই যে মোমেন্টামে আছে, এ দাপট ধরে রাখতে পারলে ফাইনালের পথটা যেন তাদের জন্য কেবলই সময়ের অপেক্ষা!

আজকের ম্যাচে রংপুরের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। আরও একবার বাইশগজে ঝড় তোলার প্রতিক্ষায় রাইডার্স!

আরো পড়ুন : আইয়ুব খানের নাতিকে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিলেন ইমরান

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *