আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন পেশাজীবীর মধ্যে ১৬ জন চিকিৎসক অংশ নিচ্ছেন। এই প্রথম সর্বোচ্চসংখ্যক চিকিৎসক আইনপ্রণেতা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা বলছেন, জনপ্রতিনিধি হলে সংবিধান অনুযায়ী নিজ আসনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবাকেও তারা অগ্রাধিকার দেবেন।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বাংলাদেশের। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও স্বাস্থ্যসেবা জড়িত। দেশে স্বাস্থসেবা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ শুরু হলেও চিকিৎসা ব্যয় কমানো যায়নি। বর্তমানে কেউ অসুস্থ হলে তার পকেট ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৭০ ভাগ। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা সংসদে যাওয়ার সুযোগ পেলে চিকিৎসাসেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখার সুযোগ পাবেন।
কুমিল্লা-৭ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত যুগান্তরকে বলেন, ‘মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়েই চিকিৎসক হয়েছিলাম। অর্জিত জ্ঞান ও মেধার সর্বোচ্চ দিয়ে সেবা দিচ্ছি। মানুষ আমাকে ভালোবেসে তাদের প্রতিনিধি হিসাবে সংসদে পাঠিয়েছিল। দুই বছর তাদের প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। আসন্ন নির্বাচনে জনগণ আমাকে ফের নির্বাচিত করলে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করব।’
বগুড়া-৭ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থী ডা. মো. মোস্তফা আলম নান্নু বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ২২ বছর সরকারি চিকিৎসক হিসাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা দিয়েছি। জনগণ আমাকে নির্বাচিত করলে গরিবের ডাক্তার হিসাবে কাজ করতে চাই। মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থেকে সব ধরনের মৌলিক অধিকার পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
চট্টগ্রাম-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর বর্তমান সভাপতি ডা. জামাল উদ্দীন চৌধুরী বলেন, এসডিজি অর্জনের সঙ্গে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা জড়িত। এ লক্ষ্যে কয়েকটি জেলায় বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানে পাইলট প্রকল্প চলছে। ইতোমধ্যে ফিজিওথেরাপিস্টদের জন্য রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন পাশ হয়েছে। চিকিৎসা শিক্ষার আধুনিকায়ন ও প্রতিষ্ঠানের গুণগত স্বীকৃতি অর্জনে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। স্বাচিপের সভাপতি হিসাবে স্বাস্থ্যসেবার বিষয়গুলো ভালোভাবে জানি। আগামী নির্বাচনে জিততে পারলে ঘাটতিগুলো পূরণে প্রতিটি বিষয় ধরে ধরে কাজ করব।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ বলেন, পেশাগত চরিত্রের কারণে চিকিৎসকরা সাধারণ মানুষের খুব কাছাকাছি থাকেন। মানুষের সংকটজনক মুহূর্তে পাশে দাঁড়াতে পারেন। কাজেই এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া চিকিৎসকরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে তারা সঠিক দায়িত্ব পালন করবেন বলে মনে করি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব প্রার্থী অংশ নিয়েছেন তারা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, সাতক্ষীরা-৩ আসনের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, বগুড়া-৭ আসনে ডা. মো. মোস্তফা আলম নান্নু। যশোর-২ আসনে ডা. মো. তৌহিদুজ্জামান তুহিন, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ, টাঙ্গাইল-৩ আসনে বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল হাসান খান, মেহেরপুর-২ আসনে ডা. আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক, ঢাকা-১৯ আসনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, নরসিংদী-২ আসনে ডা. আনোয়ার আশরাফ খান দিলীপ, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, হবিগঞ্জ-১ আসনে স্থানীয় বিএমএ ও স্বাচিপ সভাপতি ডা. মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, কুমিল্লা-৭ আসনে বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, চাঁদপুর-৩ আসনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, নাটোর-৪ আসনে ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম-৩) আসনে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর বর্তমান সভাপতি ডা. জামাল উদ্দীন চৌধুরী ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনে (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া) ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান অংশ নেবেন।
আরো পড়ুন : শিক্ষক নিয়োগে ঘুস কেলেঙ্কারির টাকা আমি নেইনি, আশপাশের লোকজন নিয়েছে: প্রতিমন্ত্রী