এমপি হাবিবের ওপর ক্ষুব্ধ বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক

অর্থনীতি জনপ্রতিনিধি প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবের ওপর ক্ষুব্ধ বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। মেয়রের দাবি; এমপি হাবিবের কারণে দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডের উন্নয়ন কাজ থমকে গেছে। খুঁটি অপসারণে বিদ্যুৎ বিভাগকে শাটডাউনের (বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন) কথা বললেও এমপি হাবিবের নির্দেশের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছে না। এতে করে প্রায় ১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে হচ্ছে। সিলেট নগরের রাস্তা প্রশস্তকরণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চন্ডীপুলের দক্ষিণ সুরমা কলেজের সামনে থেকে ফরেন ডাকঘর পর্যন্ত সড়কের কাজ প্রায় এক মাস আগে শুরু হয়েছে। এই কাজের মধ্যে রয়েছে রাস্তার দু’পাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রাস্তা প্রশস্তকরণ। প্রায় ৫০ ফুট পর্যন্ত প্রশস্থ হচ্ছে এই সড়ক। সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী বিভাগ জানিয়েছে, সিলেট নগরের প্রবেশমুখ হচ্ছে এই সড়ক। অতীত থেকে ওই এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। এ কারণে বৃষ্টি হলেই এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ কারণে এবার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এই সড়কের উন্নয়ন কাজে হাত দেয়া হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সড়ক প্রশস্থকরণ করতে হলে রাস্তার উভয়পাশের খুঁটি অপসারণ করা জরুরি। এ কারণে ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নগরের উন্নয়নে সবসময় সহযোগিতা করা হচ্ছে। শাটডাউন বা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখার সময় হিসেবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শনিবারকে রাখা হয়। আগে নোটিশ ও পরে মাইকিং করে এলাকাবাসীকে জানিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। প্রায় একমাস আগে এক শনিবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশনের নিয়োজিত ঠিকাদাররা। এ সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নকরণ এলাকার এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবের অনুষ্ঠান ছিল। তার নির্দেশে সাটডাউনের পরপরই বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করে দেয়ায় রাস্তার কাজ আটকে যায়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে রাস্তায় থাকা বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। মাঝখানে এক শনিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কাজ করা সম্ভব হয়নি।

গতকাল শনিবার একইভাবে বিদ্যুতের শাটডাউন দিয়ে কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শাটডাউন দেয়ার পরপরই বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানিয়ে দেয়া হয় এমপির অনুষ্ঠান রয়েছে, বিদ্যুৎ স্বাভাবিক করতে হবে। এতে করে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা। তবে বেলা দু’টার পর বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ সিলেট-৩ এর প্রকৌশলী শ্যামল সরকার মানবজমিনকে জানিয়েছেন; এমপি নির্দেশ দিলেও আমরা বিকল্প ব্যবস্থায় এমপির অনুষ্ঠানস্থলে বিদ্যুৎ দিয়েছি। আর সিটি করপোরেশনের কাজের এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। এর আগেও একবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন- এই সড়কের কাজ করতে হলে বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে হবে। এ কারণে সাটডাউন প্রয়োজন।

সাটডাউন বিলম্বে দেয়ার কারণে দ্রুত খুঁটি অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সাটডাউনের ফাঁকে ফাঁকে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিভাগকে জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করে কাজ করা হয়। শনিবার ছাড়া সাটডাউন দেয়া যায় না। অথচ এমপির অনুষ্ঠানের কারণে সাটডাউন করা হচ্ছে না। কাজে বিলম্ব হচ্ছে। একমাস ধরে এই সড়কের কাজ ঝুলে আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে জানিয়েছেন, শিক্ষকদের নিয়ে আমার অনুষ্ঠান ছিল ময়ূরকুঞ্জ সেন্টারে। কাজ যেখানে হচ্ছে সেখান থেকে অনেক দূরে। এখানে আমার নির্দেশে বিদ্যুৎ স্বাভাবিক রাখার প্রশ্নই উঠে না। যে অভিযোগ আনা হচ্ছে সেটি সত্য নয়। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ইচ্ছে করে আমাকে দোষারোপ করছেন। তিনি বলেন, যে সড়কের কথা বলা হচ্ছে; সে সড়কে ড্রেন অনেক উঁচু করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকবে। আর কোথাও কোথাও রাস্তা সরু করে নির্মাণ করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সড়কের সংস্কার কাজ শুরুর আগে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করেন।

আরো পড়ুন : ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত প্রাণ গেছে সাড়ে ১১০০ জনের

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *