এ মহাজগতের নিদর্শনসমূহ আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ

ওকে নিউজ স্পেশাল তথ্য-প্রযুক্তি ধর্ম প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

মো. আমিনুল ইসলাম : এ দুনিয়া আল্লাহর সৃষ্টি। তার পাশাপাশি তিনি সৃষ্টি করেছেন নভোমন্ডল, ভূমন্ডল, জিন, ইনসানসহ আমরা যা কিছু দেখছি তার সব কিছু। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, হে নবী তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস কর আসমানসমূহ ও জমিন কে পয়দা করেছেন? সূর্য ও চন্দ্রকে কে বশীভূত করে রেখেছেন? তারা অবশ্যই বলবে একমাত্র আল্লাহতায়ালা। কিন্তু তারপরও কে এদের ঠোকর খাওয়াছে? (সুরা আনকাবুত, আয়াত ৬১)

এ মহাজগতে বিদ্যমান যা কিছু আছে সব কিছুই আল্লাহতায়ালার অস্তিত্ব প্রমাণ করে। আল্লাহ বলেন, তোমাদের কি আল্লাহতায়ালা সম্পর্কে কোনো সন্দেহ রয়েছে? যিনি আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা। (সুরা ইবরাহীম, আয়াত ১০)।

মহাজগতে প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের অস্তিত্বের সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান। আল্লাহতায়ালা মহাজগতে তাঁর অস্তিত্ব প্রমাণকারী নিদর্শনাবলির প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেন, নিঃসন্দেহে আসমানসমূহ ও জমিনের নিখুঁত সৃষ্টি এবং দিবারাত্রির আবর্তনের মাঝে জ্ঞানবান লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে বসে এবং শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও জমিনের এই সৃষ্টি নৈপুণ্য সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করে এবং বলে হে আমাদের রব সৃষ্টি জগতের কোনো কিছুই তুমি অযথা সৃষ্টি করনি, তুমি অনেক পবিত্র অতঃপর তুমি আমাদের জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে পরিত্রাণ দাও। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯০, ১৯১)।

শক্ত, কঠিন ফলের আঁটি ও শস্যদানা থেকে মাটির ভিতর থেকে নরম কোমল অঙ্কুর বেরিয়ে আসে আল্লাহর অদৃশ্য শক্তিতে। আমরা তা কজনই বা অনুধাবন করি। আল্লাহ বলেন, অবশ্যই আল্লাহতায়ালা শস্যবীজ ও আঁটিগুলো অঙ্কুরিত করেন। (সুরা আল আনয়াম, আয়াত ৯৫)।

মানুষ যদি তার চিন্তাশক্তি দিয়ে লক্ষ্য করত তাহলে বুঝতে পারত সৃষ্টজগতে সর্বত্র রয়েছে আল্লাহর অস্তিত্ব ও কুদরতের নিদর্শনাবলি। আমরা একটু চিন্তা করে দেখব না, আমাদের এই সুন্দর চেহারা, শারীরিক গঠন, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি, স্বাদ আস্বাদানকারী জিহ্বা, ঘ্রাণশক্তির জন্য নাক কে তৈরি করে দিয়েছেন? কে আমাদের চিন্তা ও কথা বলার জন্য বাকশক্তি দান করেছেন? মাতৃগর্ভে আমরা যখন ছিলাম কে আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন?

এসব প্রশ্নের একটাই উত্তর তিনি পরম দয়ালু, অসীম শক্তি ও ক্ষমতার আধার মহাপরাক্রমশালী আল্লাহতায়ালা। আল্লাহ বলেন, যারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করত তাদের জন্য পৃথিবীর মাঝে আল্লাহকে চেনা-জানার অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। তোমাদের নিজেদের দেহের মধ্যেও তো আল্লাহকে চেনার অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে, তোমরা কি দেখতে পাও না? (সুরা আয যারিয়াত, আয়াত ২০, ২১)

আমরা যদি প্রাণীজগতের দিকে একটু দৃষ্টি দিই তাহলে দেখতে পাব অসংখ্য জীবজন্তু, বিচিত্র রং ও আকার-আকৃতিতে পৃথিবীর বুকে বিচরণ করছে। বিভিন্ন জাতে, রং এবং আকারে এরা ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন বন জঙ্গল ও মানুষের আশপাশে। এদের আবার অনেক হিংস্র জানোয়ার, আবার অনেক পশুপাখি আমাদের উপকারী ও খাওয়ার জন্য আল্লাহ হালাল করে দিয়েছেন।

মানুষ যদি আল্লাহকে চিনতে চায় তাহলে সৃষ্টিজগতের প্রতিটি জীবজগৎ, নভোমন্ডল ও আকাশমন্ডলের দিকে গভীরভাবে তাকালে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ অবলোকন করতে পারা সহজেই সম্ভব। আল্লাহ বলেন, তাঁর কুদরতের নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে আকাশমালা ও জমিনের সৃষ্টি, রয়েছে তোমাদের পারস্পরিক ভাষা ও বর্ণ বৈচিত্র্য। অবশ্যই জ্ঞানবান মানুষদের জন্য এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে। (সুরা আর রুম, আয়াত ২২)।

তিনিই মৃত থেকে জীবন্ত কিছুর আবির্ভাব ঘটান একইভাবে জীবন্ত কিছু থেকে মৃতকে বের করে আনেন, তিনিই সেই সত্তা যিনি এ জমিনকে তার নির্জীব অবস্থার পর পুনরায় জীবন দান করেন। (সুরা আর রুম, আয়াত ১৯)।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর পরিচয় ও নিদর্শনাবলির অনেক উদাহরণ দিয়েছেন। অন্তরে গভীর বিশ্বাস ধারণ করে আল্লাহর অস্তিত্বকে স্বীকার করতে হবে। তাঁর একক নির্দেশনার মধ্য দিয়ে যে এই পৃথিবীর সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে তা বুঝতে হবে। তিনিই আমাদের রিজিকদাতা, মহাসত্তা। আল্লাহতায়ালার একত্ববাদের নিদর্শন হলো দিন-রাত্রির আগমন ও প্রস্থান। কখনোই এই নিয়মের ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আল্লাহ বলেন, নিঃসন্দেহে আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টির মাঝে, রাত-দিনের এই আবর্তনের মাঝে সাগরে ভাসমান জাহাজসমূহে, যা মানুষের জন্য কল্যাণকর দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এতে আল্লাহর নিদর্শন মজুদ রয়েছে।

আল্লাহতায়ালা আকাশ থেকে বৃষ্টি আকারে যা কিছু নাজিল করেন সেই বৃষ্টির পানির মাঝে ভূমির নির্জীব হওয়ার পর তিনিই পানি দ্বারা তাতে নতুন জীবন দান করেন, অতঃপর এখানে তিনি সব ধরনের প্রাণীর আবির্ভাব ঘটান, অবশ্যই বাতাসের প্রবাহ সৃষ্টি করার মাঝে এবং সে মেঘমালা যাকে আসমান জমিনের মাঝে বশীভূত করে রাখা হয়েছে, তাতে সুস্থ বিবেকবান সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সুরা আল বাকারা, আয়াত ১৬৪)। সুবহানাল্লাহ।

আল্লাহ আরও বলেন, এই মৃত জমিনকে আমি পানি বর্ষণ করে জীবন দান করি এবং তা থেকে শস্যদানা বের করে আনি, অতঃপর তা থেকেই তারা নিজ নিজ খাবার খায়। আমি তাতে সৃষ্টি করি আরও নানা ধরনের খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান, প্রবাহিত করি অসংখ্য নদীনালার প্রস্রবণ। (সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৩৩-৩৪)। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে তাঁর একত্ববাদ বোঝা এবং তাঁর নিদর্শনসমূহ থেকে জ্ঞান আহরণের তৌফিক দান করুন।

আরো পড়ুন : রাশিয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদকারীদের জরিমানা বা ইউক্রেন সংঘাতের ফ্রন্টলাইনে পাঠাবে

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *