বগুড়া ব্যুরো: বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবককে পা ধরতে বাধ্যকারী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিনের বদলির পর বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হলেন, প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন। এ খবরে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। তারা প্রধান শিক্ষিকাকে শুধু বদলি নয়; জজকে প্রশ্রয় দেওয়ায় তাকে বরখাস্ত ও জড়িত অন্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সরকারি মাধ্যমিক শাখার মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ স্বাক্ষরিত জনস্বার্থে প্রজ্ঞাপনে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকায় সংযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ছাত্রীর অভিভাবক অপদস্থ হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি এ সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, শ্রেণিকক্ষ পরিস্কার করা নিয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ের সঙ্গে কয়েকজন সহপাঠীর বাকবিতন্ডা হয়। জজ গত ২১ মার্চ সকালে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার উপস্থিতিতে ছাত্রীর মাকে অপদস্থ করেন। তাকে পা ধরতে বাধ্য ও ছাত্রীদের থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেওয়াসহ বিভিন্ন আপত্তিকর কথা বলেন। সাবেক জজ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে বাঁচাতে গণমাধ্যমে তিন পৃষ্ঠার চিঠি পাঠান। কিন্তু সম্প্রতি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিংএ ওই ঘটনায় জজ, প্রধান শিক্ষিকা, সহকারি প্রধান শিক্ষক, সিনিয়র শিক্ষক ও পুলিশের ভূমিকা স্পষ্ট হয়। বিচারক তার লেখায় মেয়েকে নির্দোষ দাবি করলেও তার কথোপকথন ভিন্ন কথা বলে।
অডিওতে বিচারক রুবাইয়া উচ্চ কণ্ঠে শিক্ষার্থীদের শাসাতে থাকেন। অগ্নিমূর্তি ধারণকারী জজ একপর্যায়ে শিশু শিক্ষার্থীদের থাপড়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দেওয়া, জজ মানে জানিস তুই, জজ শব্দ বানান করতে পারবি তুই? বানান করে লিখে দেখা এমন অনেক আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করেন। জজ ও পুলিশ কর্মকর্তার মামলার হুমকি-ধামকিতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তারা বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ জানালে তাদের ধমক ও সন্তানদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় জজ ও পুলিশ ইন্সপেক্টর আবদুল মোন্নাফকে প্রশ্রয় দেন প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন, সহকারি প্রধান শিক্ষক আনারুল ইসলাম, সিনিয়র শিক্ষিকা মোবাশ্বেরা বেগম, সিনিয়র শিক্ষিকা মোসলেমা খাতুন ও এক আইনজীবী অভিভাবক।
এ ঘটনার প্রতিবাদে স্কুলের ছাত্রীরা ওইদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্কুলের সামনে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা অভিভাবককে পা ধরতে বাধ্যকারী জজ ও তাকে প্রশ্রয়দানকারী প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন ও অন্যদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। জেলা প্রশাসক ও স্কুলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ও জড়িতদের শাস্তির আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ঘরে ফিরে যান।
এরপর ২৩ মার্চ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাকে মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। সর্বশেষ রোববার প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনকে ওএসডি করা হয়। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাকদের মাঝে স্বস্তি দেখা দেয়। তবে তারা ওইদিনের ঘটনায় জড়িত সহকারি প্রধান শিক্ষক আনারুল ইসলাম, সিনিয়র শিক্ষিকা মোবাশ্বেরা বেগম, মোসলেমা খাতুন ও পুলিশ ইন্সপেক্টর মোন্নাফের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা আবারো মাঠে নামতে বাধ্য হবে। জজের পক্ষে শিক্ষার্থীদের মামলার হুমকি-ধামকি দেওয়ার সঙ্গে জড়িত সদর থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আবদুল মোন্নাফকে শুধু সোনাতলা থানায় ইন্সপেক্টর (তদন্ত) হিসেবে বদলি করা হয়।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হজরত আলী জানান, প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনকে ওএসডি করার কোনো চিঠি হাতে পাননি। তিনি ওএসডি হলেও কমিটির তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আর তদন্তে যার অপরাধ প্রমাণ হবে তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে রিপোর্ট দাখিল করবেন। রাবেয়া খাতুন ফোন না ধরায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরো পড়ুন : নওগাঁয় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সাংবাদিকদের সম্পৃক্তকরণ বিষয়ক সভা