খুলনায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে। ফার্মেসিগুলোতে ব্যথানাশক (অ্যান্টিবায়োটিক) ট্যাবলেট এ-ফ্লক্স ১০টি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকায়। উচ্চ রক্তচাপের বাইজোরান ট্যাবলেট ১০টি বর্তমানে ১০০ টাকার বদলে ১২০ টাকা, শ্বাসকষ্টের মোনাস (১০ মি.গ্রা.) ১০টি ১৬০ টাকার বদলে ১৭৫ টাকা ও ডায়াবেটিসের লিনাগ্লিপ-এম (২.২৫ মি.গ্রা.) ৩৬০ টাকার বদলে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মেসিগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, ব্যথানাশক, গ্যাসের নিয়মিত ওষুধগুলোর দাম ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিকে দূষছে ওষুধ কোম্পানিগুলো।
তবে দাম নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পদক্ষেপ না থাকায় ওষুধ কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমতো দাম বৃদ্ধি করছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। সরেজমিন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ফার্মেসিগুলোতে দেখা যায়, ক্রেতার কাছ থেকে প্রতিটি ওষুধের বর্ধিত মূল্য আদায় করছেন বিক্রেতারা। ফার্মেসি আবিদ মেডিকেলের বিক্রেতা মো. আবিদুজ্জামান বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে ধাপে ধাপে প্রতিটি কোম্পানি ওষুধের দাম বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে গ্যাস নিরাময়ের ক্যাপসুল ইসোপ্রেক্স (২০ মি.গ্রা.) ১০টি ৭০ টাকার বদলে ৮০ টাকায়, সারজেল ট্যাবলেট (৪০ মি.গ্রা.) ১০টি ১০০ টাকার বদলে ১১০ টাকা, রক্তচাপের ডুয়োব্লক ১০টি ১৯০ টাকার বদলে ২১০ টাকা, ইনজেকশন সেফট্রোন (১ গ্রা.) ২৫০ টাকার বদলে ২৮০ টাকা, সেফট্রোন (২ গ্রা.) ৩৫০ টাকার বদলে ৪০০ টাকা, অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল সেফ-থ্রি ৫০ টাকার বদলে ৬০ টাকা, ওমিডন ১০টি ৩০ টাকার বদলে ৩৫ টাকা, নাপা প্যারাসিটামল সিরাপ ২০ টাকার বদলে ৩৫ টাকা, মাইক্রো ওরাল জেল ৬০ টাকার বদলে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ওষুধ ক্রেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, বাড়িতে অসুস্থ বয়স্ক মা ও শিশু সন্তানের জন্য প্রতি মাসে ওষুধ কেনা বাবদ চার থেকে ৫ হাজার টাকা রাখতে হয়। মা কয়েক বছর ধরেই হৃদরোগ, রক্তচাপ ও কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। ওষুধের প্রতিনিয়ত দাম বৃদ্ধিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন খুলনা শাখার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, ওষুধ উৎপাদনগোষ্ঠীর শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ওষুধের মূল্য কমানোর উদ্যোগ কখনই নেয়নি। করোনার অজুহাতে ওষুধের যে দাম বৃদ্ধি করা হয়, তা এখনো কমানো হয়নি।
তিনি বলেন, যদি আমদানির অজুহাতে ওষুধের উৎপাদন খরচ বাড়ানো হয় সেখানে সরকার চাইলে ভর্তুকি দিতে পারে। এ ছাড়া ওষুধ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা নিয়ন্ত্রণ না করলে সাধারণ মানুষ এভাবে ভুগতে থাকবে। এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর খুলনার সহকারী পরিচালক মহেশ্বর কুমার ম ল বলেন, ওষুধে নৈরাজ্য ঠেকাতে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকি। তবে সম্প্রতি ওষুধ ও কসমেটিক আইন হয়েছে, যা এখনো তফসিলভুক্ত না হওয়ায় অভিযান পরিচালনা নিয়ে প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। আইনটি তফসিলভুক্ত হলেই জোরেসোরে অভিযান চালানো হবে।