গুরুতর করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা পরবর্তীতে ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট এবং হৃদযন্ত্রের জটিলতার (উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হৃদকম্পন, বা পা ফুলে যাওয়া) উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ বছরের কম বয়সীদের তুলনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদযন্ত্রের জটিলতা এবং স্নায়ুবিক জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ব্লকের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘লং টার্ম সিকুয়েল অব কোভিড-১৯: অ্যা লংগিটুডিনাল ফলোআপ স্টাডি ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এই গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইসিডিডিআর,বি’ যৌথভাবে এই গবেষণা পরিচালনা করেছে।
এশিয়ার মধ্যে এটি প্রথম গবেষণা উল্লেখ গবেষণায় বলা হয়, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীরা পরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে, যাকে পোস্ট- কোভিড-১৯ সিনড্রোম (পিসিএস) বা লং কোভিড হিসেবেও অভিহিত করা হয়। ২০২০ সালের ১৫ই ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০শে অক্টোবরের মধ্যে ঢাকায় অবস্থিত কোভিড-১৯ মনোনীত দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত (আরটি-পিসিআর দ্বারা শনাক্তকৃত) ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৩৬২ জন ব্যক্তিকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের কোভিড-পরবর্তী জটিলতা নির্ণয় করার জন্য সেরে ওঠার ১ মাস, ৩ মাস এবং ৫ মাস পর ফলোআপ করা হয়। তাদের স্নায়ুবিক, হৃদযন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। এতে আরও বলা হয়, এসব রোগের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলোও নারী-পুরুষ ভেদে পৃথক; পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে কোভিড-পরবর্তী জটিলতার প্রকোপ দেড় থেকে চার (১.৫-৪) গুণ পর্যন্ত বেশি দেখা গেছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত এবং নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হয়েছিল এমন রোগীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার সম্ভাবনা হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় দুই থেকে তিন (২-৩) গুণ পর্যন্ত বেশি পাওয়া গেছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গুরুতর কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করা সত্ত্বেও রক্তে অনিয়ন্ত্রিত শর্করার (ব্লাড সুগার) সম্ভাবনা যাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়নি তাদের তুলনায় ৯ থেকে ১১ গুণ বেশি ছিল এবং তাই যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাদের বেশি ইনসুলিন প্রয়োজন হয়।
একটি শঙ্কার বিষয় হলো হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার ছিল প্রতি ১০০০ জনে ১০ জন। একইভাবে, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে কিডনিজনিত জটিলতা (হাই ক্রিয়েটিনিন এবং প্রোটিনিউরিয়া) এবং লিভার জনিত জটিলতা (বর্ধিত লিভার এনজাইম) উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। আশ্বস্ত করার মতো বিষয় হলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উভয় গ্রুপের জটিলতাগুলোর বেশির ভাগ হ্রাস পেয়েছে। তবে শ্বাসকষ্ট, দ্রুত হৃদকম্পন, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, উদ্বেগ, বিষণœতা ইত্যাদির মতো কিছু সমস্যা রোগমুক্তির ৫ মাস পরেও মৃদু কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়নি। এই ফলাফলগুলো কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের ফলোআপ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার নির্দেশ করে। উচ্চ ঝুঁকির কারণে বয়স্ক এবং হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
অনুষ্ঠানে গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলো উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউ’র ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, কার্ডিওলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ এবং আইসিডিডিআর,বি’র নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী এবং প্রধান গবেষক ডা. ফারজানা আফরোজ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ’র ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
আরো পড়ুন : ২য় বিয়ে করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আরাভের প্রথম স্ত্রী