আল জাজিরা :কাতারে হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার দেশটির রাজধানী দোহার উত্তর দিকের শহর লুসাইলে তাঁকে দাফন করা হয়।
এর আগে দোহার ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল আল-ওয়াহাব মসজিদে হানিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। হামাসের নিহত এই নেতার স্মরণে কাতারের পাশাপাশি শুক্রবার তুরস্ক, লেবানন, ইয়েমেন, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় শোকসভা ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দোহায় হানিয়ার জানাজায় ফিলিস্তিনের বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধি ও সদস্যরা অংশ নেন। কাতারের জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হামাসের এই নেতার জানাজায় তাঁর পরিবারের সদস্যরাও অংশ নেন। হানিয়ার জানাজা উপলক্ষে সেখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল। দোহায় হানিয়ার জানাজা অনুষ্ঠান একই সঙ্গে শোক ও গাজাবাসীর জন্য সংহতিতে পরিণত হয়েছিল।
গত মঙ্গলবার ভোররাতে ইরানের রাজধানী তেহরানে নিহত হন ইসমাইল হানিয়া। দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি তেহরান গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার তেহরানে এ অনুষ্ঠান হয়। ইসরায়েল হানিয়াকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে হামাস ও ইরান।
কিন্তু হানিয়ার হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইসরায়েল এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে গত ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর হানিয়াসহ সশস্ত্র গোষ্ঠীটির শীর্ষ নেতাদের হত্যার ঘোষণা দিয়েছিল ইসরায়েল।
মঙ্গলবার ভোররাতে হানিয়া নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ দিকের একটি শহরতলিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ শুকর। এই পরিস্থিতিতে হানিয়ার মৃত্যুতে ফুঁসছে গাজা ও লেবানন। হানিয়ার মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাতে শুক্রবার গাজায় ‘প্রচণ্ড ক্রোধের দিন’ ঘোষণা করেছিল হামাস। লেবাননের বৈরুতেও হানিয়ার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে হানিয়ার মৃত্যুতে তুরস্ক ও পাকিস্তান এক দিনের শোক ঘোষণা করেছে। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় হানিয়ার প্রতি সম্মান জানাতে তুরস্কের হাগিয়া সোফিয়া গ্র্যান্ড মসজিদে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়।
হানিয়ার প্রতি শোক জানাতে তেল-আবিবে তুরস্কের দূতাবাসে এদিন দেশটির জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছিল। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তুরস্কের উগ্র ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ইসরায়েলে তুর্কি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পতাকা সম্পূর্ণ নামিয়ে ফেলতে ও ঘরে ফিরে যেতে আহ্বান জানানো হচ্ছে।’ এ ছাড়া তুরস্কের উপরাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার তেহরানে হানিয়ার প্রথম জানাজা পড়িয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এরপর তাঁর মরদেহ দোহায় আনা হয়।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে পরিচালিত হামলায় ইসরায়েল ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন। আহত হন আরও কয়েক হাজার। আনুমানিক ২৪০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসা হয়। সেদিন থেকেই গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের বড় অংশ শিশু ও নারী। বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়েছেন প্রায় এক লাখ।
মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা চলছে। তবে তেমন একটা অগ্রগতি নেই। হানিয়া নিহত হওয়ায় শান্তি আলোচনায় বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরো পড়ুন : মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি আরও সংকটময়, হামলার প্রস্তুতি ইরানের, হুমকি দিচ্ছে ইসরায়েল