কালীগঞ্জে শাপলা বিক্রি করে চলছে অনেকের সংসার

ওকে নিউজ স্পেশাল জাতীয় প্রচ্ছদ লাইফ স্টাইল হ্যালোআড্ডা

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি // গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জের বিভিন্ন বেলাই বিলের শাপলা যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। বর্ষাকালে বিলের বিস্তীর্ণ ধানী এলাকা পানিতে ডুবে যায়। বিস্তীর্ণ এ ডুবো জমিতে এ সময় প্রচুর পরিমাণে লাল, সাদা ও হালকা গোলাপী রংয়ের শাপলা ফুল ফুটে। এক সময়ের মূল্যহীন এ শাপলা এখন বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হচ্ছে। তাই প্রতিদিন সকালে সূর্য ওঠার আগেই বিস্তীর্ণ বেলাই বিলে ডিঙি নৌকা নিয়ে শাপলা কুড়াতে বেরিয়ে পড়েন স্থানীয় প্রায় শতাধিক পরিবারের সদস্য। কুড়ানো শাপলার বিক্রির আয়ে চলছে তাদের জীবন ও জীবিকা, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া।

ভরা বর্ষা মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন বেলাই বিলে প্রাকৃতিকভাবেই অসংখ্য শাপলা জন্মে। এই বিলে জেলেরা মাছ শিকারের পাশাপাশি দিনের কয়েক ঘণ্টা শাপলা কুড়িয়ে আয় করছেন অতিরিক্ত টাকা। কুড়িয়ে আনা শাপলা স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করে পাইকাররা রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি সবজির বাজারগুলোয় বিক্রি করছেন। প্রতিদিন এ অঞ্চল থেকে অন্তত মাঝারি সাইজের ৭/৮টি পিকআপ ভ্যান শাপলা নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। শাপলা সবজি হিসেবে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কর্মহীন বেকার, কৃষি শ্রমিক ও জেলে শাপলা কুড়িয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বক্তারপুর, জাঙ্গালিয়া, নাগরী, তুমলিয়া ও জামালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বেলাই বিল এখন বর্ষার পানিতে টইটম্বুর। বিলের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট নৌকা, কোসা, ডিঙ্গিতে করে অসংখ্য শাপলা কুড়িয়ে আনা হচ্ছে স্থানীয় সড়কের পাশে। সেখানে পিকআপ নিয়ে অপেক্ষায় থাকা পাইকাররা দরদাম ঠিক করে শাপলার আঁটি গুনে গুনে পিকআপে তুলছেন।

বক্তারপুর এলাকার মুরাদ, নুর হোসেন, আমির হোসেন, শাজাহান, দেলোয়ার, বলাই রাম জানান, বিলে এখন পানির গভীরতা প্রায় ৬ থেকে ৮ হাত। বৃষ্টি কম হওয়ায় এ বছর বিলে শাপলার পরিমাণ তুলনামূলক ভাবে কম। পানি বৃদ্ধি পেলে শাপলার উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। আমাদের এলাকায় এসময় তেমন কাজ থাকে না। তাই প্রতিদিন ভোরে বিল থেকে শাপলা তুলে বিক্রি করছি। চার পাঁচটি শাপলা দিয়ে তৈরী এক আটি ৬ টাকা দরে আমরা পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। এতে একেক জনের প্রতিদিন প্রায় ৬শ থেকে ৮শ টাকা কামাই হচ্ছে। এ টাকায় তারা সংসারের খরচ মিটিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচও বহন করতে পারছেন। কার্তিক মাস পর্যন্ত বেলাই বিলে শাপলা কুড়াবেন তারা।

বক্তারপুর এলাকার শিক্ষক আবুল কালাম খান জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে এখন শহুরে বাজারে শাপলা সহজলভ্য ও জনপ্রিয় সবজি। সকালে নৌকা থেকে শাপলা সংগ্রহ করে পাইকাররা ঢাকার মোহাম্মদপুর, রায়েরবাজার, কারওয়ান বাজার ও মহাখালী কাঁচা বাজারসহ বিভিন্ন সবজির পাইকারি বাজারে নিয়ে বিক্রি করছেন। দামে কম ও সুস্বাদু হওয়ায় গ্রামগঞ্জে কিংবা শহরের মানুষের কাছে শাপলা সবজি হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্ষায় প্রাকৃতিক ভাবেই শাপলা ফোটে। ঠিক মতো সংগ্রহ করে বাজারজাত করতে পারলে এটিও আয়ের ভালো উৎস হতে পারে।

শাপলা একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবজি। সাধারণ শাক-সবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। শাপলাতে থাকা গ্যালিক এসিড এনজাইম ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। শাপলা ফুল ইনসুলিনের স্তর স্থিতিশীল রেখে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায় ও পিপাসা দূর করে। শাপলায় রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, যা আলুর চেয়ে সাত গুণ বেশি। শাপলা চর্ম ও রক্ত আমাশয়ের জন্য উপকারী। এটি শরীরে কোলেষ্টেরলের মাত্রা কমায়। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যেও শাপলা অত্যন্ত উপকারী। শরীরকে শীতল রাখতে শাপলার জুড়ি মেলা ভার।
মো.ইব্রাহিম খন্দকার
কালীগঞ্জ (গাজীপুর)

আরো পড়ুন : বিএনপি নেতা এ্যানিকে গ্রেপ্তার দেখালো ধানমন্ডি থানায়

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *