জার্মানি-জাপানের রোমাঞ্চের ম্যাচ দেখার পর স্পেন-কোস্টারিকার ম্যাচটি ম্যাড়মেড়েই লাগার কথা দর্শকদের। একতরফা খেলা! স্পেনের সেই চিরাচরিত তিকি-তাকা। পাসের পর পাস খেলে যাওয়া। প্রতিপক্ষ কোস্টারিকা যেন স্প্যানিশ তিকি-তাকার নীরব দর্শক। কারণ গোটা ম্যাচটাই যে খেলে গেল লুইস এনরিকের দল। আর কোস্টারিকা সেটি দেখে গেল আর পেছনে পেছনে দৌড়াল। পাস খেলতে খেলতে গোল-উৎসবটাও করল ২০১০ বিশ্বকাপের শিরোপাজয়ীরা। তিকি-তাকার ফাঁকে ফোকরে সুযোগ তৈরি করে কোস্টারিকার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৭-০ গোলের দুর্দান্ত এক জয়ও তুলে নিল তারা। পুরো ম্যাচে স্পেন পাস খেলেছে ৯৯৪টি।
এই জয়ে স্পেন পেয়েছে বিশ্বকাপে নিজেদের সবচেয়ে বড় জয়টি। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ৬-১ গোলের জয়টিই আজকের আগ পর্যন্ত ছিল বিশ্বকাপে স্পেনের সবচেয়ে বড় জয়। পেদ্রি, গাভি, মার্কো আসেনসিও, দানি ওলমো, ফেরান তোরেসরা আজ কোস্টারিকাকে চেপে ধরেছিলেন গড়েছেন বড় জয়ের নতুন রেকর্ড।
ম্যাচের প্রথমার্ধের পুরোটাতেই স্পেনের দুই তরুণ তারকা গাভি-পেদ্রি ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন কোস্টারিকা দলকে। দুজনের মিলিত বয়স মাত্র ৩৭। স্পেনের নতুন দিনের দলে এ দুজন যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন অচিরেই, সেটি আগেই প্রমাণ করেছিলেন তাঁরা, আজ আল বায়ত স্টেডিয়ামে নতুন করেই সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন দুজন। সঙ্গে মার্কো আসেনসিও, ফেরান তোরেসরাও খেলেছেন চমৎকার। কোচ লুইস এনরিকে আজকের ম্যাচের পর নিজের দলকে নিয়ে আশাবাদী হতেই পারেন। এই তরুণদের সঙ্গে অভিজ্ঞ সের্হিও বুসকেটসও নেতৃত্ব দিয়েছেন ছন্দোবদ্ধ ফুটবলে।
খেলার পঞ্চম মিনিটেই স্পেন গোল করে এগিয়ে যেতে পারত। ৩৫ গজ দূর থেকে পেদ্রি বল ধরে এগিয়ে তা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন দানি ওলমোকে। কোস্টারিকার বক্সের ডান প্রান্ত থেকে ওলমো সেটি গোলে মারেন। কিন্তু সেটি প্রতিহত হয় কোস্টারিকান রক্ষণভাগের এক খেলোয়াড়ের মাথায় লেগে। নবম মিনিটে পেদ্রির চমৎকার একটি পাস থেকে আসেনসিওর শট হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্পেনের পাসিং ফুটবলের সামনে শুরু থেকেই অসহায় কোস্টারিকা ১১ মিনিট পর্যন্ত নিজেদের সীমার বাইরেই যেতে পারেনি। ২২ মিনিটে স্পেন দল পেয়ে যায় ধৈর্যের পুরস্কার। ওলমো এগিয়ে দেন স্পেনকে। এই গোলটিও ওই তিকি-তাকার ফসল। পাসের পর পাস শেষে গাভির স্কুপ পাস থেকে বল পেয়ে ওলমো পরাস্ত করেন গোলকিপার কেইলর নাভাসকে।
স্পেনের দ্বিতীয় গোলটি আসেনসিওর। জর্দি আলবার দারুণ ক্রস থেকে বুকের এক পাশ দিয়ে নেওয়া এক ভলিতে আসে গোলটি। ২৯ মিনিটে পেনাল্টি থেকে তৃতীয় গোলটি করেন ফেরান তোরেস। বক্সের মধ্যে কোস্টারিকার ডিফেন্ডার দুয়ার্তে আঘাত করে বসেন আলবার পায়ে। রেফারি পেনাল্টি দিতে দেরি করেননি। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে চতুর্থ গোলটি পেয়ে যেতে পারত স্পেন। বুসকেটসের ব্যাক হিল থেকে বল পেয়ে পেদ্রি সেই প্রচেষ্টা অল্পের জন্য বাইরে চলে যায়। ৩-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে স্পেন। এই অর্ধে স্পেনের শেষ হওয়া পাসের সংখ্যা ছিল ২৫০।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫৫ মিনিটে চতুর্থ গোল পায় স্পেন। গোল করেন ফেরান তোরেস। গাভির কাট ব্যাক থেকে বক্সের মাথায় বল পেয়ে যান তোরেস। কিন্তু তিনি বলটা পায়ে রাখতে পারেননি। আজকের ম্যাচে কোস্টারিকা যে কতটা অসহায় ছিল, সেটির প্রমাণ এই গোলটি। কোস্টারিকান রক্ষণ যেন তোরেসের পায়ে আবার বল তুলে দেওয়াকে দায়িত্বই মনে করল। খুব সহজেই গোলটা পেয়ে যান তোরেস। ৭৫ মিনিটে স্পেনকে ৫-০ গোল এগিয়ে নেন গাভি।
এই ম্যাচে মাঠে নেমে গাভি দারুণ একটা রেকর্ড করেছেন। তিনি বিশ্বকাপে স্পেনের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়। ৭৫ মিনিটের গোলটি তাঁকে এনে দেয় আরও একটি রেকর্ডের মালিকানা। এই গোলে তিনি স্পেনের জার্সিতে বিশ্বকাপে গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবেও জায়গা করে নিয়েছেন ইতিহাসে।
৯০তম মিনিটে স্পেনের দুই বদলি খেলোয়াড়ের সমন্বয়ের পায় ষষ্ঠ গোল। নিকো উইলিয়ামস কোস্টারিকার মাতারিতাকে বোকা বানিয়ে বক্সের মধ্যে যে চমৎকার ক্রসটি করেন, সেটি কেবল গোল ঠেলে দেন কার্লোস সোলের। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে স্পেন স্কোরলাইন করে ফেলে ৭-০। দর্শকেরাও উপহার পায় আরও একটি দুর্দান্ত গোল। মোরাতা কোস্টারিকার বক্সের মাথায় বল উল্টো দিকে ফিরে বলটি পেয়েছিলেন। ঘুরে, জায়গা করে নিয়ে তিনি দানি ওলমোর সঙ্গে দেয়াল পাস খেলে বোকা বানান কোস্টারিকান গোলকিপার কেইলর নাভাসকে।
স্পেনের পরের খেলা জার্মানির বিপক্ষে। জাপানের কাছে হারের পর, স্পেনের গোল-উৎসব যে তাদের অগ্নিপরীক্ষার বার্তা দিয়ে দিল, সেটি না বললেও চলছে
আরো পড়ুন : মারা গেলেন ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ সিনেমার অভিনেতা বিক্রম গোখলে