হাতে নেই কাজ, ঘরে নেই জমানো টাকা। শুরু হয়েছে রমজান। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কয়েক দফা বাড়ার পর কুলকিনারা হারিয়ে ফেলেছে চিলমারীর প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। বেশির ভাগ মানুষের ভাগ্যে সেহ্রিতে জোটেনি ভালো খাবার। ইফতারে ছিল চাল ভাজা, গুড়, শাক আর মোটা চালের ভাত। রোজা শুরু হলেও বাজারে নেই কোলাহল। ক্রেতা কমে যাওয়ায় বিপাকে ব্যবসায়ীরাও।
কুড়িগ্রামের চিলমারী নদীভাঙন কবলিত এলাকা। এখানে ৮০ ভাগ মানুষ দিনমজুর ও কৃষির উপর নির্ভরশীল। হাতে কাজ জুটলে ঘরে খাবার জোটে। এর উপর দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন চাপে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও যেন হারিয়ে ফেলেছে তারা।
এরপর খুশির রমজান যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’- হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাখাহাতি চরের বিজলি, রহিমা, ফেরদৌস বলেন- ‘দিন আনি দিন খাই। এর উপর জিনিসের দাম খালি বাড়ে। রোজা তো শুরু হইলো, তাতে আরও বাড়ি গেইছে সইকগুলের দাম। হামরা তো কোনো কিনারা পাচ্ছি না। ভাত শাক খাইয়া রোজা থামক। আর পানি দিয়ে রোজা ভাঙ্গিমো।’ শুধু ফেরদৌস, রহিমা নন, শতশত পরিবার দ্রব্যমূল্যের চাপে পড়ে সুস্বাদু ও আধুনিক খাবারের স্বপ্ন দেখতেও ভুলে গেছে।
সরজমিন ভটরপাড়া, সাতঘরিপাড়াসহ বাঁধ এলাকা ঘুরে মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইফতারে খেজুর, ফল-ফলাদি, ছোলা, পিয়াজু, বেগুনী, নিমকি ও জিলাপির মুখরোচক খাবার পুরো রমজানে কোনোদিনই খেতে পারবেন কিনা তারা সন্দিহান।
আমানুল্লাহ ও ফাতেমা স্বামী-স্ত্রী। তারা বলেন, সেহ্রিতে আলু আর সামান্য ভাত খেয়ে রোজা রেখেছেন। রোজা অবস্থায় সকালে তিস্তার জেগে ওঠা চরে গিয়েছিলেন ছাগলের জন্য ঘাস কাটতে। বেলা ১২ টার দিকে বাড়ি ফিরছিলেন ঘাসের বস্তা নিয়ে। অশ্রুসিক্ত হয়ে ফাতেমা বলেন, ‘কি আর কমুরে বাপো, জিনিসপত্রের যে দাম। খালি বাড়বের নাগছে। ভালো খাবার তো দূরের কথা, ইফতার হামরা পানি দিয়ে সারিনিমো।’ এখই এলাকায় বাঁধের উপার বাস জেলেখা ও সুফিয়ার রোজা রেখেছেন ভাত আর ডিম ভর্তা খেয়ে আর ইফতার করবেন চাল ভাজা দিয়ে। তারা বলেন, ‘তেলের যে দাম হাফ লিটারের বদলে একন ১ ছটাক কিনি, কষ্ট হলে কি হইবে রোজা তো আর ছাড়া যাবে না।’ জহিরন সারা দিন অন্যের বাড়ির কাজকর্ম করে দিলে এক-দেড়সের চাল পায়। তা দিয়ে ভাতের যোগাড় হয়। তার কাছে রমজানে ইফতারে সুস্বাদু খাবার যেন স্বপ্নের মতো।
থানাহাট বাজারে মুরগি ব্যবসায়ী আনোয়ারুল বলেন, হু হু করে দাম বাড়ছে। রমজানকে কেন্দ্র করে আরও বেড়েছে। ৭০ ভাগ ক্রেতা কমে গেছে। তিনি বলেন, আগে যেখানে পহেলা রমজানে প্রায় ৭ মণ মুরগি ও মাংস বিক্রি করেছিলাম। এবারে পহেলা রমজানে ২ মণও বিক্রি করতে পারিনি। একই অবস্থা মাছ বাজারেও। মাছ প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৮০ টাকা।
রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকা জানান, এই ইউনিয়নের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ হতদরিদ্র। এদের দৈনন্দিন জীবন চালানোই কষ্টকর। উন্নতমানের খাবার পাবে কোথায়? অধিকাংশ মানুষ একবেলা পান্তা, একবেলা গরম ভাত খেয়ে দিনাতিপাত করে। আর ইফতারে বেশির ভাগ মানুষ চাল ভাজা বা চালের গুঁড়া আবার কেউ ইফতার করে শাক-ভাত খাবে।
আরো পড়ুন : আজকের দিনে সংঘটিত হয়েছিল ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা