‘দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকতা না পাওয়া পর্যন্ত বিএনপিকে কাজ করতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের কথা আমরা বলছি, সেই গণতন্ত্র একটা কথার কথা নয়। এটা একটা কালচার- এটা একটা সংস্কৃতি।আপনি-আমি কিভাবে কথা বলব, আমি আমার প্রতিবেশির সঙ্গে কেমন কথা বলব, আমার রাজনীতির প্রতিপক্ষের সঙ্গে কিভাবে কথা বলব সেই বিষয়গুলো আমাদেরকে গণতন্ত্রের ভেতর দিয়ে শিখতে হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র মানে এই নয় যে, আওয়ামী লীগ করলে তাকে গলা কেটে ফেলো আর বিএনপি করলে তার মুণ্ডচ্ছেদ করো.. তাহলে সেটা কিন্তু গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্র হচ্ছে পরমত সহিষ্ণুতা। তোমার কথা বলার অধিকার আছে, আমার বিরুদ্ধেও কথা বলার অধিকার আছে… আমি সেটাকে রক্ষা করবো এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র।’
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির আয়োজনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের সামনে অনেক কাজ… অনেকে মনে করেছেন যে, হাসিনা পালিয়ে গেছে কাজ শেষ হয়ে গেছে… না। কিছুক্ষণ আগে আমাদের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলছিলেন যে, যে আমাদের এই আন্দোলন চলবে… নির্বাচন পর্যন্ত।না, না.. এই নির্বাচনের পরে আরও বহুদিন… যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা একটা গণতন্ত্র সংস্কৃতিতে পরিণত করতে পারব, কালচারে পরিণত করতে পারব…. এটা একটা ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়াবে… ওই জায়গায়তে আমাকে পৌঁছাতে হবে। তাই আমাদের কাজ অনেক বেশি আছে।’
নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন আজকে এই দিনে আমরা শপথ নেই… যারা আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমরা এই শপথ গ্রহণ করি যে, আমরা আমাদের গড়ে তুলব একটি উপযোগী রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেব, গণতন্ত্রের একজন কর্মী হিসেবে, বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে।সেই সঙ্গে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের কর্মী হিসেবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কর্মী হিসেবে আর আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সত্যিকার কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।’
এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সময়টা সবচাইতে কঠিন সময়… আপনার একটা পদক্ষেপ যদি ভুল হয় আপনি পেছনে পড়ে যাবেন, খাদে পড়ে যাবেন। যদি সঠিক পা দিতে পারেন তাহলে আপনি সামনে এগিয়ে যাবেন।আমার অনুরোধ থাকবে… এই দিবসগুলো আপনারা অবহেলা করবেন না… জানার চেষ্টা করবেন। অনেক জানেই না কী হয়েছিল… ওই দিন কি তালি মারার দিবস না তালি মারার দিবস না, ওই দিন কি মিলাদ করার দিবস না খিচুড়ি খাওয়ার দিবস….। আমাদের দেশের সবচাইতে বরণ্যে ব্যক্তিদেরকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচাইতে ভালো শিক্ষকদেরকে…. তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল…।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মজার ব্যাপার হচ্ছে তাদের তুলে নিয়ে গেছে এই যে ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদেরকে তুলে নিয়ে যেত… যেমন আমাদের গুম করে নিত ঠিক ওইভাবে তাদের (শহিদ বুদ্ধিজীবীদের) তুলে নিয়ে গেছে। বাসায় থেকে নেওয়ার সময়ে বলছিল কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন… এই কিছুক্ষণ পরে চলে আসবে তো… এভাবে নিয়ে গেছে… নেওয়ার পর আর ফিরে আসেনি… রায়ের বাজারে তাদের হাত-পা বাধা মরদেহ পাওয়া গেছে মহিলা-পুরুষ সবার। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে বুদ্ধিজীবীদের কেন প্রাণটা দিতে হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই আয়নাঘরের মতো তখনও ঘর ছিল… এই আয়নাঘরে কেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে ছেলেদের, কেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরকে… একটাই উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে ভয় পাইয়ে দেওয়া, তাদেরকে শেষ করা, তাদেরকে ধ্বংস করা। কেন? একজন ব্যক্তিকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করা… হাসিনার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে হবে সেজন্য আয়নাঘরে নিয়ে যাওয়া হতো… তাই না।’
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মামুন আহমেদ প্রমুখ।
আরো পড়ুন : বিসমিল্লাহ ইসলামের অন্যতম প্রতীক বা নিদর্শন