গণহত্যার দায় চাপানোর জন্যেই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে: ছাত্রলীগ সভাপতি

আইন-আদালত তথ্য-প্রযুক্তি প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি শিক্ষা হ্যালোআড্ডা

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাতে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিষয়টি জানা গেছে।

নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত আসার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, ‘এই সরকারের হাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মী এবং পুলিশের রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। নিজেদের গণহত্যার দায় আমাদের ওপরে চাপানোর জন্যেই এই সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে।’

এবার ছাত্রলীগ আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক সিদ্ধান্ত’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অবৈধ, অসাংবিধানিক, দেশবিরোধী’ উল্লেখ করে এর পদত্যাগ দাবি করেছে সংগঠনটি।

ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে তারা প্রথমেই ছাত্রলীগের ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয়দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব ও আত্মদান থেকে শুরু করে পরবর্তীতে জনগণের সকল আন্দোলনেও যুগপৎ স্রষ্টা হিসেবে ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।’

গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিজেদের ভূমিকার জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ছাত্রলীগ। আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর বর্বরোচিত হামলার অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির ভাষ্য, ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘মেটিকিউলাস প্ল্যানের’ অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে শিক্ষার্থীদের বিপরীতে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী ও রাষ্ট্রবিরোধী কুচক্রী স্বার্থান্বেষী মহল।’

অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের ‘ব্যর্থতা’ ঢাকতে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে দাবি করে বিবৃতিতে তারা লিখেছেন, ‘আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতা লুকানোর জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকার।’

প্রসঙ্গত, বুধবার জারি করা ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করিয়া বিগত ১৫ বৎসরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল এবং এই সম্পর্কিত প্রামান্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হইয়াছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হইয়াছে।

তাই সরকার ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসাবে তালিকাভুক্ত করল। ইহা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

আরো পড়ুন : ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে ‘যৌক্তিক ও সাহসী’ আখ্যা দিয়েছে ঢাবি শিবির সভাপতি

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *