গাজায় নির্বিচারে নারী-শিশু হত্যা করছে ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ তথ্য-প্রযুক্তি নারী প্রচ্ছদ শিশু/কিশোর হ্যালোআড্ডা

সাত দিনের বোমা হামলার পর ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান নিয়ে গাজায় স্থল অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এর আগে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলের ১১ লাখ বাসিন্দাকে সরে যেতে বলা হয়। হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে থাকেন। পথে বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের ওপরও হামলা হয়েছে। চলমান বোমা বর্ষণে গাজায় গতকাল শনিবার এক দিনে আরও ৩২০ জন নিহত হয়েছেন। এতে আট দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ২১৫ জনে। তাদের মধ্যে ৭২৪ শিশু ও ৪৫৮ জন নারী রয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৮ হাজার ৭১৪। নিউইয়র্ক, লন্ডনসহ বিশ্বের প্রধান প্রধান শহরে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বিক্ষোভ হয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, কঠোর অবরোধের কারণে গাজায় ওষুধ, পানি, খাবার ও বিদ্যুৎ দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে। লোকজন ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিয়েই প্রাণ বাঁচাতে এলাকা ছাড়ছেন। পথে তাদের ওপর হামলা হচ্ছে। বিবিসি নিশ্চিত করেছে, শনিবার উত্তর গাজা ছেড়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে বিস্ফোরণে ১২ নারী ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিহত শিশুদের বয়স দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলছে, গাজায় ৭ অক্টোবর থেকে চালানো ইসরায়েলের হামলায় ৭০০-এর বেশি শিশু নিহত হয়েছে।

গাজায় স্থল অভিযানের প্রস্তুতির মধ্যে সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ টুইটে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আক্রমণের পরবর্তী ধাপ আসছে।
আমরা প্রস্তত; স্থলপথে আসছি।’ এ বক্তব্যে তিনি স্থল অভিযানের প্রস্তুতির স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন। এতে আরও বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানির শঙ্কা প্রকট হচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি গোয়েন্দারা স্বীকার করেছেন, হামাসের অবস্থানের ব্যাপারে তাদের ভুল পর্যবেক্ষণ ছিল। মিসরের গোয়েন্দারা ইসরায়েলকে বারবার সতর্কও করেছিল বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।

অব্যাহত বোমা হামলার মধ্যে গাজার রেড ক্রস কর্মীরা হাসপাতাল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে তাদের সতর্ক করে হাসপাতাল ছাড়তে বলা হয়। কিন্তু তারা সে আদেশ মানেননি। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদক অ্যামা গ্রাহাম হ্যারিসন জানান, শনিবারও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজার উত্তরাঞ্চল ছেড়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলের স্কুল, বাড়িঘর ও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র এরই মধ্যে লোকজনে পূর্ণ হয়ে গেছে। তবে হামাস অথরিটি ফর রিফিউজি অ্যাফেয়ার্স জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিরা গাজার উত্তরাঞ্চল ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে এই তথ্য ভুয়া। এ নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে। হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়া গতকাল টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ কখনও গাজা ছাড়বে না এবং তারা কোথাও যাবে না।

লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ বলছে, তারা ইসরায়েলে রকেট ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করেছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, হামাসের হামলার নেতৃত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ সেনা কমান্ডার মুরাদ আবু মুরাদ নিহত হয়েছেন। হামাসের একটি অভিযান কেন্দ্রে তাদের যুদ্ধবিমানের হামলায় মুরাদ নিহত হন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ২৮ চিকিৎসাকর্মী মারা গেছেন।

ফিলিস্তিনিদের পক্ষে শনিবার লন্ডনে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় বিক্ষোভকারীদের হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা এবং ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। বিক্ষোভ হয়েছে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভা, ইতালির তুরিন, ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি, আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনেও। নজিরবিহীন বিক্ষোভ হয়েছে নিউইয়র্ক শহরে। আলজাজিরা জানায়, স্থানীয় সময় শুক্রবার তারা ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’ লেখা পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ করেন।


এ অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা দেওয়া জন্য তাঁর দেশ ইসরায়েল, মিসর, জর্ডান ও জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করছে। সামাজিক মাধ্যম এক্সে তিনি এ তথ্য জানান। রয়টার্স জানায়, গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের আলোচনা স্থগিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এ আলোচনা চলছিল।

গত শনিবার ইসরায়েলে নজিরবিহীন এক হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ৩০০ ইসরায়েলি নিহত ও ৩ হাজার ৪০০ জন আহত হন। দেড়শজনকে ধরে নিয়ে যায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ফোনালাপ

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। এ সময় তিনি এ যুদ্ধ যাতে অন্য দেশগুলোতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন। বিবিসি জানায়, জবাবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ওয়াশিংটনের উচিত দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করা।
এদিন ব্লিংকেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সল বিন ফারহানের সঙ্গেও কথা বলেন। ফারহান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, বেসামরিক লোকজনের দুর্ভোগ কমানোকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। উত্তেজনা দ্রুত কমিয়ে আনার পথ খুঁজে বের করতে হবে।

১ হাজার ৩০০ ভবন ধ্বংস

জাতিসংঘ বলছে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় অন্তত ১ হাজার ৩০০টি ভবন ধ্বংস হয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ইউনাইটেড নেশন্স অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) জানায়, ওই ভবনগুলোতে ৫ হাজার ৫৪০ আবাসন ইউনিট ছিল, যা ধ্বংস হয়ে গেছে। হামলায় প্রায় ৩ হাজার ৭৫০টি বাড়ি ধসে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

স্থল হামলায় কি লক্ষ্য অর্জিত হবে ইসরায়েলের

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, পৃথিবী থেকে হামাসকে মুছে দেওয়া হবে। গাজা যা ছিল কখনোই আর আগের জায়গায় ফিরে যাবে না। তিনি প্রত্যেক হামাস সদস্যকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন। বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়, গাজায় স্থল অভিযানের অর্থ হলো প্রত্যেক বাড়িতে লড়াই। এতে বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকি থাকবে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধান হারজি হ্যালেভি বলেন, হামাসকে গুঁড়িয়ে দিতে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ। ইসরায়েলের আর্মি রেডিওর বিশ্লেষক আমির বার শ্যালম বলেন, তিনি মনে করেন না ইসরায়েল সব হামাস সদস্যকে শেষ করে দিতে পারবে।

আরো প ড়ুন : দুর্যোগে চিকাজানী গ্রামে কৃষকের সহায় ব্র্যাকের ‘শস্য গোলা’

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *