গাজায় যুদ্ধবিরতি আরো বাড়ল দুই দিন

আন্তর্জাতিক ক্রাইম নিউজ জনদুর্ভোগ তথ্য-প্রযুক্তি প্রচ্ছদ মুক্তমত রাজনীতি হ্যালোআড্ডা

যুদ্ধবিরতির বর্ধিত সময়ে আজ মঙ্গলবার ও আগামীকাল বুধবার গাজায় হামলা চালাবে না ইসরায়েলি বাহিনী। যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পরপরই ‘লক্ষ্য অর্জনে’ পুরো শক্তি দিয়ে হামলা চালানোর ঘোষণা নেতানিয়াহুর। রয়টার্স ও আল জাজিরা

আন্তর্জাতিক তৎপরতার মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও দুই দিন বাড়ল। সে হিসাবে আজ মঙ্গল ও আগামীকাল বুধবার উপত্যকাটিতে হামলা চালাবে না ইসরায়েলি বাহিনী। এ ছাড়া এ দুই দিনে নিজেদের মধ্যে আরও জিম্মি ও বন্দিবিনিময়ে রাজি হয়েছে দুই পক্ষ।

গত বুধবার কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় হামাস ও ইসরায়েল। পরে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া চার দিনের যুদ্ধবিরতি শেষ হয় গতকাল সোমবার। তবে এর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি গতকাল প্রথম নিশ্চিত করেন কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির বাড়তি মেয়াদে আরও ২০ জিম্মি ব্যক্তিকে মুক্তি দেবে হামাস। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আশা করি, সাময়িক এই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ সামনে আরও বাড়বে। আর এটি নির্ভর করবে হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের মুক্তির ওপর।’

যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, গাজার দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কাছে আরও ত্রাণসহায়তা পৌঁছাতে সহায়তা করবে এটি। তবে উপত্যকাটির মানুষ জরুরি পণ্যের যে ঘাটতিতে রয়েছেন, তা এ দুই দিনে মেটানো অসম্ভব।

যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে আগে থেকেই তৎপরতা চলছিল। শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, যুদ্ধবিরতি সোমবারের পরও নিয়ে যাওয়া; যাতে আরও জিম্মি মুক্তি পান ও জরুরি প্রয়োজনের মুখে থাকা মানুষের কাছে আরও ত্রাণসহায়তা পৌঁছানো যায়।’

যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছিল জার্মানি, ইরান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।

দুই দিনে ইসরায়েলের ২০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।

গাজায় প্রথম দফা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল ওই চার দিনে ৫০ ইসরায়েলি জিম্মিকে হামাসের মুক্তি। অপরদিকে ১৫০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দীকে ছাড়ার কথা ছিল ইসরায়েলের। সে অনুযায়ী রোববার পর্যন্ত প্রথম তিন দিনে ৫৮ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস, যাঁদের মধ্যে ৩৯ জন ইসরায়েলি। অন্যরা বিভিন্ন দেশের। একই সময়ে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ১১৭ ফিলিস্তিনি। এ ছাড়া গতকাল আরও ১১ ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল হামাসের। অন্যান্য দেশের জিম্মি মুক্তির সংখ্যা নির্দিষ্ট করা নেই। আর এদিনই আরও ৩৩ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল ইসরায়েলের। তবে বন্দীবিনিময়ের তালিকা নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গতকাল বিরোধ দেখা দেয়।

ইসরায়েল সরকারের এক মুখপাত্র দাবি করেন, গাজায় এখনো ১৮৪ জন জিম্মি রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ১৪ জন বিদেশি। আর ৮০ জন ইসরায়েলির দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে।

লেবাননের এলবিসি টেলিভিশনকে হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান বলেন, আরও জিম্মি মুক্তি দিতে তাঁদের অবস্থান জানার চেষ্টা করছে হামাস। সংগঠনটি আগে থেকেই বলে আসছে, সব জিম্মি তাঁদের হাতে নেই।

এদিকে শনিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পরপরই আমাদের লক্ষ্য অর্জনে পুরো শক্তি দিয়ে হামলা চালাব আমরা। লক্ষ্যগুলো হলো হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা, গাজা যাতে আগের অবস্থায় না ফেরে, আর অবশ্যই সব জিম্মিকে মুক্ত করা।’

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন বলে জানায় ইসরায়েল। ওই দিন ২৪০ জনকে জিম্মিও করা হয় বলে জানিয়েছে দেশটি। হামাসের হামলার কিছুক্ষণ পরই গাজায় নির্বিচার বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে অব্যাহত হামলায় গাজায় সাড়ে ১৪ হাজারের বেশি বাসিন্দা নিহত হন। তাঁদের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু। এ ছাড়া পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলায় গতকাল পর্যন্ত ২২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৬টি শিশু।

কম্বল ও পোশাকের খোঁজে

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার দিবাগত রাত থেকে গাজা উপত্যকার আবহাওয়ার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। ধূলিঝড়ের কারণে বায়ুমান খুবই খারাপ। কিছু অংশে হচ্ছে বৃষ্টি।

বাস্তুচ্যুত লাখো বাসিন্দা গাজার বিভিন্ন অংশে তাঁবুতে অবস্থান করছেন। অনেকে অস্থায়ী ঝুপড়িতে থাকছেন। ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে এসব ঘরের টিকে থাকার মতো অবস্থা নেই। অনেক ঝুপড়ি উড়ে যেতে দেখা গেছে।

এসব তাঁবু ও ঝুপড়িতে অনেক শিশু থাকছে। রাত নামতেই শুরু হচ্ছে তীব্র শীত। কিন্তু শরীর উষ্ণ রাখার মতো কম্বল বা তোশক নেই। দোকানপাটও বন্ধ। যদিও অনেকেরই কম্বল বা শীতের পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই। যুদ্ধবিরতির মধ্যে আসা ত্রাণসহায়তার মধ্যে শীতের পোশাক নেই।

ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে গুঁড়িয়ে যাওয়া ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপে অনেককে কম্বল ও এই ধরনের পোশাক খুঁজতে দেখা গেছে। আবার পুরোনো জামাকাপড়ের খোঁজে অনেকে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত বাসাবাড়িতে ফিরেছেন।

আরো পড়ুন : রওশন-সাদের নাম বাদেই জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেলেন কারা

Share The News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *