গাজায় চলছে ইসরাইলের গ্রাউন্ড অফেন্সিভ। এতে উপত্যকাটির উত্তরাঞ্চল কার্যত ইসরাইলি সেনাদের দখলে চলে গেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে গোটা এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে দেশটি। এরইমধ্যে হামাসের কমান্ড সেন্টার থাকার অভিযোগ তুলে গাজার আল-শিফা হাসপাতালে অভিযান চালায় ইসরাইলি সেনারা। সেখান থেকেই এক ইসরাইলি জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করেছে তারা। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে জানানো হয়, ৬৫ বছর বয়সী ওই ইসরাইলির নাম ইয়েহুডিত ওয়েইস। তাকে গত ৭ই অক্টোবর অপহরণ করে নিয়ে যায় হামাস। ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আল-শিফা হাসপাতাল সংলগ্ন একটি জায়গা থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাকে যখন অপহরণ করে নেয়া হয় তখন তিনি ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তার স্বামী শমুয়েলকে বন্দুকধারীরা গুলি করে হত্যা করেছিল।
মোট ২৪০ জনকে হামাস জিম্মি করেছে বলে জানিয়েছিল ইসরাইল। ইয়েহুডিত ওয়েইস কিবুতযের একটি কিন্ডারগার্টেনে কাজ করতেন। এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, ওই নারীর মৃতদেহ যেখানে পাওয়া গেছে সেখানে কালাশনিকভ রাইফেল ও রকেট চালিত গ্রেনেড পেয়েছে তারা। আইডিএফ বলে, দুঃখজনকভাবে ইয়েহুডিত খুন হয়েছে এবং আমরা সময়মতো তার কাছে পৌঁছাতে পারিনি। ইসরাইল সেখানে তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তারা হামাসের একটি টানেলের সংযোগস্থলের সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছে।
এদিকে আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, সেখানে এখন পানি ও অক্সিজেন নেই এবং রোগীরা তৃষ্ণায় চিৎকার করছে। ইসরাইলি ট্যাংক হাসপাতালটি ঘিরে আছে আর উপরে ঘুরছে ড্রোন। হাসপাতালের ভেতরে দ্বিতীয় দিনের মতো তল্লাশি চালিয়েছে সৈন্যরা। হাসপাতালের ভেতরে আটকে পড়া একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, ইসরাইলি সৈন্যদের সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে এবং তারা সব দিক থেকে গুলি করছে।
হাসপাতালটির পরিচালক মুহাম্মদ আবু সালমিয়া জানিয়েছে আল-শিফার অবস্থা ‘ভয়াবহ’, যেখানে এখনো সাড়ে ছয়শ’ রোগী, পাঁচশ’ চিকিৎসা কর্মকর্তা এবং পাঁচ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ অবস্থান করছে। গত বুধবার থেকে সেখানে অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। গত বৃহস্পতিবার তারা সেখানে হামাসের টানেলের একটি সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়ার দাবি করে। একই সঙ্গে অস্ত্রবোঝাই একটি গাড়ি পাওয়ার কথাও জানায় তারা।
হাসপাতালটির পরিচালক জানান ইসরাইলি সেনারা হাসপাতালটির প্রধান পানির সংযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, অভিযান চলছে। কেউ এক ভবন থেকে আরেক ভবনে যেতে পারছে না। আমরা আমাদের সহকর্মীদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে পুরো মেডিকেল কমপ্লেক্সটির দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথে একটি অংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে সেনারা।
গাজার দক্ষিণে খান ইউনিস শহরে লিফলেট ফেলে লোকজনকে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় শিবিরের দিকে যাওয়ার কথা বলছে ইসরাইল। সেখানে অন্তত চারটি শহরে এ ধরনের লিফলেট ফেলা হচ্ছে। ওদিকে দিনের বেশির ভাগ সময়েই গাজায় মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা কাজ করছে না। টেলিকম কোম্পানিগুলো জানিয়েছে জ্বালানির অভাবে তারা তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছে না। এমনকি জ্বালানি তেলের সংকটের কারণে ত্রাণ কার্যক্রমেও সংকট তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে শুক্রবার থেকে মিশর সীমান্ত থেকে ত্রাণসামগ্রী আনার জন্য ট্রাক পাঠানো সম্ভব হবে না।
এদিকে ইসরাইল জানিয়েছে, তাদের নিরাপত্তা বাহিনী তিন বন্দুকধারীকে গুলি করে হত্যা করেছে। এসব বন্দুকধারীরা পশ্চিম তীর থেকে জেরুসালেমের দিকে যাওয়ার একটি চেকপয়েন্টে গুলি শুরু করেছিলো। এ ঘটনায় ইসরাইলের একজন সৈন্য নিহত হয়েছে এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছে। হামাসের সামরিক শাখা দাবি করেছে, তারাই ওই হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়া জেনিন শহরেও আবারো ইসরাইলি অভিযানের খবর পাওয়া গেছে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, সংস্থাটির একটি মেডিকেল সার্ভিসেস টিম আল-আহলি হাসপাতালের ভেতরে আটকা পড়েছে। সেখানে তাদের কর্মীরা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শুনছিলো। সামাজিক মাধ্যমে তারা লিখেছে যে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছে। আমাদের দলটি এর ৩০ মিটারের মধ্যেই অবস্থান করছিলো। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। এরপর থেকে এ ঘটনার আর কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি। ইসরাইলের দিক থেকেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য আসেনি।
ইসরাইল দাবি করেছে, গাজার দুটি ভূগর্ভস্থ এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে হামাসের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে লক্ষ্য করে অভিযান চালাচ্ছে তারা।
হামাসের কয়েকজন সিনিয়র কমান্ডার এসব জায়গায় লুকিয়ে আছে। এরমধ্যে হামাসের নর্দার্ন গাজা ব্রিগেডের প্রধান আহমেদ রান্দোর এবং হামাস রকেট ব্রিগেডের প্রধান হাইমান সিয়ানও আছে। ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি জানিয়েছেন, এর বাইরে আরও একটি ভূগর্ভস্থ এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে।
আরো পড়ুন : বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকারের পক্ষে এক প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেলেন জো বাইডেন